তারুণ্য ধরে রাখা এবং লাবণ্যময় সুন্দর রূপের জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্যাভ্যাস খুব জরুরি। শুধু খাদ্যাভ্যাস বদলেই অটুট স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যের অধিকারী হওয়া সম্ভব। জানালেন পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার আলো।  ‘মানুষ তাই, যা সে খায়।’ কথাটির সরল অর্থ দাঁড়ায়, মানুষ যা খায় তাই তার শরীর ও স্বাস্থ্যে ফুটে ওঠে। আমরা যেসব খাবার খাই সেসব খাবারের প্রতিচ্ছবিই প্রতিফলিত হয় আমাদের মধ্যে। খাবার মানুষের শুধু ক্ষুধা নিবারণই করে না; মানুষের শারীরিক ভালো থাকা, এমনকি তার মানসিক ভালো লাগাকে প্রভাবিত করে। সামগ্রিক সুস্বাস্থ্যের জন্য খাদ্য এককভাবে গুরুত্বপূর্ণ এক ফ্যাক্টর। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, রক্তবাহী নানা রোগ, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগের কারণ অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস।

সকালটা শুরু হোক অন্যভাবে

চলতি ট্রেন্ডে সেলিব্রিটিরা নিজেদের শারীরিক গঠন ও প্রয়োজন অনুসারে নানা রকম ডায়েট চার্ট অনুসরণ করেন। এটা তাদের ডায়েটিশিয়ানরাই ঠিক করে দেন। চাইলে আপনিও একজন পুষ্টিবিদের শরণাপন্ন হতে পারেন। ঢাকাসহ সারা দেশেই এখন পুষ্টিবিদদের পরামর্শ পাওয়া যায়। তারা আপনার চাহিদা বুঝে ডায়েট চার্ট বানিয়ে দেবেন। একেক মানুষের খাদ্যাভ্যাস একেক রকম। দিনের ভালো শুরুর জন্য সকালের খাবার গুরুত্বপূর্ণ। সারা রাত ঘুমানোর পর সকালে পাকস্থলী খালি থাকে। এ জন্য ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কিছু না কিছু খেয়ে নিন। হতে পারে কোনো ভেষজ পানি, চা কিংবা কফি। এরপর সকালে ভাত খেতে পারেন। ভাতের বদলে রুটি, খিচুড়িও বেছে নিতে পারেন। শরীরের শর্করা পূরণ হবে। আর আমিষের জন্য ডিম, ডাল, এক থেকে দুই টুকরা মাংস বা সবজি খেতে পারেন।

দুপরে কী খাবেন

আপনি যদি সকালের খাবার ৮টার মধ্যে খেয়ে নেন তাহলে দুপুরের খাবার ২টার মধ্যে সেরে ফেলুন। ভারী মিল সাধারণত প্রতি ছয় ঘণ্টা অন্তর খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। দুপুরে এক কাপ ভাত কিংবা রুটির সঙ্গে ডাল, ডিম কিংবা এক থেকে দুই টুকরা মাছ অথবা মাংস ও সবজি খান। দুপুরের খাবারে এক টেবিল চামচ ঘি রাখতে পারেন। স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বির উত্স ঘি। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করার পাশাপাশি একে মোলায়েম ও আর্দ্র রাখে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ বলে অন্য খাবার থেকে ভিটামিন ও খনিজ শোষণ করে শরীরকে রোগ প্রতিরোধে সক্ষম করে তোলে।

মধ্য সকাল ও বিকেলের নাশতা

সকাল, দুপুর ও রাত—এই তিনবেলার মধ্যে খাবার খাওয়া সীমাবদ্ধ রাখবেন না। মধ্য সকাল ও বিকেলে হালকা খাবার শরীরের জন্য উপকারী। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, প্রতি তিন ঘণ্টা পর কিছু না কিছু খেয়ে নেওয়া ভালো। কারণ খাবার খাওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যে হজম হয়ে যায়। এরপর পাকস্থলী খালি হয়ে যায় এবং গ্যাস জমতে শুরু করে। এ জন্য মধ্য সকাল ও বিকেলের নাশতা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এ সময় বিভিন্ন রকম ফল কিংবা সালাদ খেতে পারেন।

রাতের খাবার

রাত ৮টার মধ্যে ডিনার সেরে ফেলুন। এক কাপ ভাত কিংবা রুটির সঙ্গে ডাল, ডিম কিংবা এক থেকে দুই টুকরা মাছ অথবা মাংস ও সবজি খেতে পারেন। শেষে এক কাপ টক দই রাখতে পারেন। টক দইয়ে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল, আমিষ, ভিটামিন ‘বি’, ক্যালসিয়াম ও পটাশ। এতে কার্বোহাইড্রেট, চিনি ও ফ্যাট নেই। টক দইয়ে থাকা ল্যাকটিক এসিড কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। হজমে সহায়তা করে। টক দইয়ে থাকা ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করতে সাহায্য করে। টক দই রক্ত পরিশোধনেও সাহায্য করে। টক্সিন জমতে দেয় না। ফলে আমাদের ত্বক ভালো থাকে। সহজে বুড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা প্রতিরোধ করে।

সারা দিনে পানি পান

দিনে কমপকে দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করুন। পানি শরীরের জন্য খুবই দরকারি। বিশেষ করে ত্বক ভালো রাখতে। গরমের সময় মাঝে মধ্যে ডাবের পানি খাওয়া যায়। পানিতে লেবুর রস মিশিয়েও পান করতে পারেন। এ ছাড়া ঘরে তৈরি ফলের রস ও জুস শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগানোর পাশাপাশি পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করবে।

শোয়ার আগে

ঘুমের আগে প্রতিদিন এক গ্লাস গরম দুধ পান করুন। পুষ্টিকর খাদ্যতালিকায় দুধ অন্যতম। দুধ এমন একটি খাবার, যাতে সব খাদ্যগুন উপস্থিত। দুধের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ল্যাকটোজ দৈহিক গঠন ও মেধাবিকাশে সাহায্য করে। রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধ পান করলে ঘুম ভালো হয়। ভালো ঘুম আমাদের সারা দিনের ধকলে ক্ষতিগ্রস্ত কোষের পুনর্গঠনে সাহায্য করে। এতে সকালে অনেক সতেজ মনে হবে নিজেকে। নিয়মিত দুধ পান শরীরে পানির মাত্রা ঠিক রেখে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তোলে। দুধের সঙ্গে মধু, কাঁচা হলুদের রস মিশিয়ে পান করতে পারেন। ত্বকের জেল্লা ফুটে উঠবে।

সকালটা শুরু হোক অন্যভাবে

শুধু সুষম ও পুষ্টিকর খাবার নয়, সুস্থ ও সুন্দর থাকার জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা করাও জরুরি। শরীরচর্চার কারণে আমাদের পেশি সবল হয়, অতিরিক্ত চর্বি কমে। এ ছাড়া শরীরচর্চার সময় ঘামের মাধ্যমে ত্বকের বিষাক্ত টক্সিন বের হয়ে যায়। প্রতিদিন সকালে বা বিকেলে হাঁটতে কিংবা দৌড়াতে পারেন। মানসিকভাবে প্রফুল্ল থাকার চেষ্টা করুন। পারিবারিক, সামাজিক ও কর্মক্ষেত্রের নানা চাপ ও দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। নিয়মিত শরীরচর্চার ফলে মানসিক প্রশান্তি আসে।