মেহেদী হাসান, খুলনা প্রতিনিধিঃ- নিষিদ্ধ ব্লাক রাইস। কথাটা শুনলে যে কেউ  প্রথমেই ধারণা করবেন নিষিদ্ধ এটি উৎপাদন করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আসলে তা নয়। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে নিষিদ্ধ ব্লাক রাইস (কালোর রঙ্গের ধান) আবাদ শুরু হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। অধিক পুষ্টি সম্পন্ন ও বাজার দর ভালো হওয়ায় এ ধানের আবাদ করেন কৃষক ইমরান। একসময়ের চীনের রাজা-বাদশাদের খাবার ছিল ব্ল্যাক রাইস। যা প্রজাদের জন্য চাষ করা বা খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। এ কারণে একে নিষিদ্ধ চাল বলা হয় ।
কৃষি বিভাগ এই ধানের বিষয়ে ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাথে যোগাযোগ করে আগামীতে আরো সম্প্রসারণ করা কথা জানান।
সবুজের মাঝে কালো রঙের  ধানের আবাদ শুরু করেন খুলনার ডুমুরিয়া সদর উপজেলার গোলনা গ্রামের খান সিরাজুল ইসলামের ছেলে খান  ইমরান হোসেন।
পরীক্ষামূলকভাবে  ৩৩ শতাংশ জমিতে এই ধানের আবাদ শুরু করেন। চীনের ব্লাক রাইচ ধানের বীজ হলেও নতুন নতুন কৃষকরা নতুন জাতের এই ধানের  বিজ  নিয়ে আবাদ করতে পারবেন। অন্য আতব জাতের ধান বিঘা প্রতি ১৫/২০ মণ হলেও এই ধান প্রতি বিঘায় ১০ থেকে ১২ মণ অধিক পুষ্টি সম্পূর্ণ লম্বা জাতের ধান উৎপাদন হবে। এই ধানের ফলনও ভালো হয়েছে।  আতব চালের চাহিদা পূরণ আর কম খরচে বেশি দামের আশায় কালো রঙের ধানের আবাদ করেন তিনি। এ ধানের বীজ আগামীতে দিতেও পারবেন তিনি।
নতুন জাতের ধান উৎপাদনকারী কৃষক ইমরান জানান, এ ধানটি লাগানোর পিছনে কারণে আছে। সেটি হচ্ছে অন্যান্যে ধানের বৈচিত্র্য আছে কিন্তু আতব ধানের চালে বৈচিত্র্য কম থাকায় এই কালো রঙের সুগন্ধি জাতের ধান চাষ শুরু করি। নতুন জাতের কালো রঙের  জাতের ধানের বীজ নেয়ার কথা বলে রেখেছেন অন্য কৃষকরা।
তিনি আরো জানান, ধান চাষে কম মুনাফায় কৃষি বিভাগ ও ব্যাংকগুলো ঋণ দেন তাহলে আরো বেশি করে ধান চাষে এগিয়ে আসবে কৃষকরা। আর ঋণ না পাওয়ায় অনেকেই কৃষি কাজ থেকে বিমুখ হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সার-কীটনাশক পানি কম লাগায় এবং পোকা-মাকড় কম লাগায় আগামী বছর এ জাতের ধান লাগানোর আগ্রহ দেখান অনেক কৃষক।
স্থানীয় কৃষক আজিজুল ও হারুন খান জানান, আমাদের জমির পাশে কৃষক ইমরান নতুন জাতের কালো রঙের ধান আবাদ করেছে সে ধানের নাম নাকি কালো রাইচ নিষিদ্ধ চাল। তবে ধানের গায়ের রং কালো, লম্বা ও বড় আকারের ধান। এ ধানের ভালো ফলনও হবে। তাই আমরা আগামীতে এই ধানের আবাদ করবো। আর কম খরচে বেশি লাভও হবে।
এদিকে খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হাফিজুর রহমান জানান, ইমরান নিজ উদ্যোগে ও ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ মোছাদ্দেক হোসেনের এই নতুন জাতের কালো রঙের ধান আবাদ করেছে। ওই কৃষক নিজেই সে ধানের নাম কালো রাইচ নিষিদ্ধ চাল।এই ধানের বিষয়ে ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তারা যদি এ ধান জেলার জন্য উপযোগী ও ভালো মনে করে তাহলে আগামীতে আরো সম্প্রসারণ করার কথা জানান এই কর্মকর্তা। আগামীতে এ ধানের বীজ অন্য কৃষকের মাঝে সম্প্রসারণ করা হবে।এ জেলায় প্রতি বছর কোনো না কোনো নতুন জাতের ধানের বীজ উৎপাদন হয়ে থাকে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন বলেন এবছরই ডুমুরিয়া উপজেলায় ৪ কেজি বীজ এনে ২ জন কৃষককে দিয়ে এধান লাগান হয়েছে।  এটি অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ ধান এবং ধানের অবস্থা এখন পর্যন্ত ভালো।  অনেকে এটির প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছে।  আগামীতে এটি সম্প্রসারণে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করা হবে।
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া ব্ল্যাক রাইস যদি আবার গ্রাহকের  দারগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া যায়, তাহলে একদিকে যেমন দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে। অন্যদিকে নানা জটিল রোগ থেকে মুক্তি পাবে সাধারণমানুষ।