এবার সুস্বাদু ফজলি আম এবং বাগদা চিংড়ির মালিকানা পাচ্ছে বাংলাদেশ। হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে দেশের পরিচিত এই পণ্য দুটি। পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ফজলি আম ও বাগদা চিংড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি নেওয়ার সব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। সরকারের পেটেন্টস, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক বিভাগের রেজিস্টার মো. আবদুস সাত্তার জানিয়েছেন, ফজলি আম ও বাগদা চিংড়ির জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিতে গেজেট প্রকাশ করা হয়ে গেছে। আর দিন পনেরোর মধ্যে সনদ দেওয়ার কাজ শেষ হয়ে যাবে। আবদুস সাত্তার জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী স্বীকৃতির জন্য আবেদন আসার পরে এই দুটি কৃষি পণ্যের ভৌগোলিক নির্দেশক যাচাই করা হয়েছে, দুটি জার্নাল প্রকাশ করা হয়েছে। এই পণ্যের নির্দেশক নিয়ে এখনো কেউ আপত্তি করেনি।
জার্নাল প্রকাশের দুই মাসের মধ্যে এটি নিজেদের বলে কেউ আপত্তি না করলে সনদ দেওয়া হয়। পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রথম দফায় ৩টি পণ্যের ভৌগোলিক নির্দেশক স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশ। এগুলো হচ্ছে- জামদানি, ইলিশ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি আম। দ্বিতীয় ধাপে ৬টি পণ্যের ভৌগোলিক নির্দেশক স্বীকৃতি মেলে। পণ্যগুলো হলো- ঢাকাই মসলিন, রাজশাহী সিল্ক, কালিজিরা চাল, দিনাজপুরের কাটারিভোগ, বিজয়পুরের (নেত্রকোনা) সাদামাটি ও শতরঞ্জি। এর সঙ্গে ফজলি আম ও বাগদা চিংড়ি যুক্ত হলে মোট জিআই পণ্য হবে ১১টি। সূত্র জানায়, ফজলি আমের ভৌগোলিক নির্দেশক স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হয় ২০১৭ সালের ৯ মার্চ।
আবেদন করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, রাজশাহী অফিস। অন্যদিকে বাগদা চিংড়ির ভৌগোলিক নির্দেশক স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হয় ২০১৯ সালের ২১ মে। আবেদন করে মৎস্য অধিদপ্তর। আমের মৌসুমের শেষের দিকে বাজারে আসা ফজলি পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও উৎপাদন হয়। আর লবণাক্ত পানির বাগদা চিংড়ি এশিয়ার বেশ কিছু দেশে হয়। কিন্তু এই কৃষিপণ্য দুটি কেন বাংলাদেশের জিআই সনদ কেন পাবে সেটি ব্যাখ্যা করেন মো. আবদুস সাত্তার। তিনি বলেন, যে পণ্য একটি অঞ্চলের ঐতিহ্যের অংশ সেটির ক্ষেত্রে এই সনদ দেয়া হয়।
আবহাওয়া, মাটি, পানি ও ভৌগোলিক গঠনের উপরে যেকোনো কৃষিপণ্যের বৈশিষ্ট্য, ঘ্রাণ ও স্বাদ নির্ভর করে এবং নির্দিষ্ট অঞ্চলেই সেটা হবে। যেমন এশিয়ার বেশ কিছু দেশে ‘ব্ল্যাক টাইগার শ্রিম্প’ বা বাগদা চিংড়ি পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের এখানে যেটা হয় সেটার বৈশিষ্ট্য অন্য কোনোটার সঙ্গে মিলবে না। অন্য কোথাও চাষ হলেও সেটার স্বাদ ও ঘ্রাণ মিলবে না। জিআই সনদ পেলে ফজলি আম ও বাগড়া চিংড়ি উৎপাদন করার অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা পাবে। অন্য কোনো দেশ আর সেগুলোকে নিজেদের বলে দাবি করতে পারবে না।
প্রসঙ্গত, এখন পর্যন্ত মোট ৩৭টি পণ্যের জিআই স্বীকৃতি নেওয়ার জন্য আবেদন করেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে উপরোক্ত ১১টি পণ্যের স্বীকৃতি মিলেছে। বাকি ২৬টি পণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রংপুরের হাড়িভাঙা আম, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, নোয়াখালীর মহিষের দুধের দই ইত্যাদি।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, চ্যানেল টুয়েন্টিফোর
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।