মামুনুর রশীদ মামুন, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় দুধকুমর নদের প্রচন্ড ভাঙনে দিশেহারা দুধকুমর পাড়ের বাসিন্দারা। উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে দেখা গেছে এই ভাঙন। স্রোতের তোড়ে ভেঙে গেছে নদীরক্ষা বাধ। আর এতে বিপাকে পড়েন বাধের পাশে সরকারি (খাস) জমিতে আশ্রয় নেয়া ভুমিহীন মানুষেরা। সরজমিনে উপস্থিত হয়ে দেখা যায় বাড়ি ভেঙে নিয়ে সরিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান।

নদী চলে এসেছে বাড়ির আঙ্গিনায়। আবেগঘন কন্ঠে তিনি বললেন, ওয়াপদা ভাঙি নদী পার হয়া আইসছে। আর এডি থাকার বুদ্ধি থাকিল না। বাধের উপর মুদি দোকান করতেন বয়োবৃদ্ধ আব্দুল জলিল মিয়া। তিনি জানান, তিনদিনে তিনবার দোকান তুলি সরাইলং। দোকান যেডে থুই নদী ওডিয়ে আইসে। কথা হয় ভাঙনের শিকার জিল্লুর রহমান মিয়ার সাথে।

তিনি বলেন, তিন চারদিনে ১৫ টা বাড়ি ভাঙা হয়েছে। এভাবে ভাঙন চলতে থাকতে কমপক্ষে হলেও ৫০ টি বাড়ি ভাঙা পড়বে। আবু তালেব মিয়া বলেন, সরকারি জাগাত বাড়ি করি আইছলোং। এলা সরকার একটা উপায় করি না দিলে আমার আর কোনো বুদ্ধি নাই। ঘরবাড়ি ধরি কোটে যামো। বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করতেন রশো বেওয়া।

থাকতেন বাধের ধারে ঝুপড়ি করে। সেখানে অভিশাপ হয়ে এসেছে দুধকুমরের ভাঙন। তার কন্ঠে অসহায়ত্বের সুর, দশ বাড়ি বেড়ে খাছি। বাড়িত বেটাছোয়ার (তার স্বামী) অসুখ। বাড়ি ভাঙি গেল। বাড়ি বেড়া (ভিক্ষা করা) বন্ধ হয়া গেইল।

এলা আমার কি হইবে?

থাকমো কোটে, খামো কি?

স্থানীয় যুবক শাহাবুর মিয়া জানালেন, নদী শান্তই ছিল বন্যার পরে। কয়দিন আগে ভারত থেকে পানি ছাড়লে নদীর পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পায়। এই পানি নেমে যাওয়ার পরেই মারাত্মক ভাঙন শুরু হয়েছে। তবে ভাঙনরোধে ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলে নদীর পাড়ে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু এ নিয়েও অসন্তোষ আছে স্থানীয়দের।

শেখ সাবু নামের একজন বলেন, সারাদিন বালুর ব্যাগ ফেলায়। সারা রাইতে ভাসি যায়। সকালে দেখি একটাও নাই। তা লাভ কোনখান হইল। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায় তীর রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এই সমস্যার সমাধান হবে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,

দুধকুমর নদী বাস্তবায়ন ও উন্নয়ন নামে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দের একটি প্রকল্পের কাজ ডিসেম্বর নাগাদ শুরু হবে। বর্তমানে ঠিকাদার নিয়োগের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটির বাস্তবায়ন হলে পাড় ভাঙা সমস্যার সমাধান সম্ভব। এ অবস্থায় নিজেদের বাস্তুসংস্থান ও নদী ভাঙনের স্থায়ী সমাধানে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভাঙনের শিকার ভুমিহীন পরিবার গুলো।