আজ ঢাকায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরের বাস-মিনিবাস, দূরপাল্লার বাস এবং লঞ্চের ভাড়ার বর্ধিত নতুন হার নির্ধারণের কথা ঘোষণা করে বিআরটিএ ও বিআইডব্লিউটিএ।
বিআরটিএ-এর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবহন খাতের চলমান অচলাবস্থা সমাধানের লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান । নতুন ভাড়ার হার সোমবার থেকে কার্যকর হবার কথা।
এর পর ধর্মঘট আজই প্রত্যাহার করে নেবার আহ্বান জানান পরিবহন মালিক সমিতির নেতা পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ।
এর পর রোববার থেকেই বাস সার্ভিসগুলো চালু হতে শুরু করেছে।
‘পণ্য পরিবহন ধর্মঘট চলবে’
দূরপাল্লার বাস-মিনিবাসের ধর্মঘট প্রত্যাহার হলেও, পণ্য পরিবহন খাতে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাক-ট্যাংক লরি-কাভার্ড ভ্যান মালিকেরা।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান, ট্যাংক লরি ও প্রাইম মুভার মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান বিবিসিকে বলেছেন, পণ্য পরিবহন সেক্টর নিয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি, আর সেটা না হওয়া পর্যন্ত তারা ধর্মঘট চালিয়ে যাবেন।
পণ্য পরিবহনের যানবাহনের ভাড়া সরকার ঠিক করে দেয় না, যে কারণে বিআরটিএ সঙ্গে পরিবহন মালিকদের বৈঠকে তারা উপস্থিত ছিলেন না।
বাসের নতুন ভাড়ার হার
নির্ধারিত নতুন ভাড়া অনুযায়ী দূরপাল্লার বাস ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরের বাস-ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে।
অন্যদিকে মিনিবাসের ভাড়া হবে এর চাইতে ১০ পয়সা কম । মিনিবাসের নতুন নির্ধারিত ভাড়া বেড়ে প্রতি কিলোমিটার ২ টাকা ৫ পয়সা হয়েছে।
সেইসঙ্গে বাসের সর্বনিম্ন বাস ভাড়া ১০ টাকা, মিনিবাস ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে সিএনজিচালিত বাস/মিনিবাসের ক্ষেত্রে নতুন নির্ধারিত এই ভাড়া প্রযোজ্য হবে না বলে বৈঠক থেকে জানানো হয়।
এ বিষয়ে আজকের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির কথা রয়েছে। সে হিসেবে আগামীকাল থেকে সারাদেশে নতুন এই ভাড়া কার্যকর হবে।
লঞ্চের ভাড়াও বাড়লো
এদিকে লঞ্চের ভাড়াও কিলোমিটার প্রতি ৬০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। নতুন ভাড়া এখন কিলোমিটার প্রতি হয়েছে ২ টাকা ৩০ পয়সা। যেটা কিনা আগে ১ টাকা ৭০ পয়সা ছিল।
লঞ্চের সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা।
বিআইডব্লিউটিএ বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি ঘোষণা দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এখন থেকেই নৌ ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং নতুন ভাড়ায় লঞ্চ চলাচল আগের মতো স্বাভাবিক নিয়মে চলবে।
আরও পড়তে পারেন:
কেউ এর চাইতে বেশি ভাড়া নিলে, পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে বিআরটিএ ও বিআইডব্লিউটিএ এর পক্ষ থেকে জানানো হয়।
উল্লেখ্য গত বুধবার খুচরা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটার ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করে সরকার। লিটারপ্রতি দাম এক লাফে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়।
বর্ধিত দামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাসের ভাড়া পুননির্ধারণের আগেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়ায় বাস ভাড়া দ্বিগুণ করার দাবিতে ধর্মঘট শুরু করে সারা দেশের সড়ক ও নৌ পরিবহন মালিকরা।
পরে মালিক সমিতি সেই ধর্মঘটের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে।
‘যতোটুকু না হলে নয় সেটাই মেনে নিয়েছি’
পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী নতুন ভাড়া নির্ধারণের জন্য রবিবার ধর্মঘটের মধ্যেই বেলা ১১টার দিকে বৈঠক শুরু হয়। যা প্রায় ৫টা পর্যন্ত চলে।
সেখানে মি. এনায়েত উল্লাহ বলেন, “গত ৮ বছরে বাসের যন্ত্রাংশের দাম, অন্যান্য খরচ বেড়েছে। কিন্তু বাস ভাড়া বাড়েনি। যতোটুকু না হলে নয় সেটাই মেনে নিয়েছি।”
সর্বশেষ ২০১৩ সালে বাসের বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এই সময়ে জ্বালানি তেলের মূল্য ২৩% বেড়েছে, ইস্পাতের মূল্য ১৯% বেড়েছে বলে পরিবহন মালিকরা জানিয়ে আসছেন।
এর মধ্যেই ডিজেলের ভাড়া লিটার-প্রতি ১৫ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। ফলে ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করার দাবি দীর্ঘদিনের বলে পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়।
এদিকে বাংলাদেশে সিএনজি চালিত বাসের সংখ্যা ১-২% এর মতো। যার বেশিরভাগই ডিজেলে ফেরত যাচ্ছে।
এই সিএনজিচালিত বাসের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনা করা উচিত বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে লঞ্চের ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে দীর্ঘ বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ভাড়া বাড়ানোর বিস্তারিত জানানো হয়।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।