ইন্দোনেশিয়া ঘোষণা করেছে, তাদের নতুন রাজধানীর নাম হবে ‘নুসান্তরা’। জাভানিজ ভাষার শব্দটির অর্থ ‘দ্বীপপুঞ্জ’। জাভা ইন্দোনেশিয়ার প্রধান দ্বীপ।
পার্লামেন্ট জাকার্তা থেকে রাজধানী স্থানান্তরের বিল অনুমোদন করার পরিপ্রেক্ষিতে এ ঘোষণাটি এলো। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় জাকার্তা দ্রুত ডুবে যাচ্ছে।
১৩০০ কিলোমিটার (৮০০ মাইল) দূরে বোর্নিও দ্বীপে একটি নতুন রাজধানী গড়ে তোলার জন্য ২০১৯ সালে প্রথম প্রস্তাব করা হয়েছিল।
তবে সমালোচকরা বলেছেন, নতুন নামটি বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এ ছাড়া নতুন জায়গায় রাজধানী স্থানান্তরের পদক্ষেপটিও পরিবেশগত বিষয়গুলোকে বিবেচনায় রেখে নেওয়া হয়নি।
অতিরিক্ত মাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে জাকার্তার ভূমি উদ্বেগজনক হারে দেবে যাচ্ছে। এক কোটির বেশি মানুষের আবাসস্থল এই নগরটি জনাকীর্ণ ও দূষিত হয়ে পড়েছে। শহরটি গড়ে উঠেছে বিশাল জাভা দ্বীপের জলা এলাকায়।
জাকার্তা শহর বায়ুদূষণ এবং যানজটের জন্য কুখ্যাত। সরকারের মন্ত্রীদের সময়মতো সভা-সমাবেশে পৌঁছতে পুলিশের কনভয় নিয়ে যেতে হয়।
নতুন রাজধানী গড়ে তোলা হচ্ছে বোর্নিও দ্বীপে অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ার প্রদেশ পূর্ব কালিমান্তানে। সরকার আশা করছে, এটি জাকার্তার ওপর থেকে চাপ কিছুটা কমাতে পারবে।
ঘন জঙ্গল এবং ‘বনমানুষ’ জাতীয় বিপন্ন বন্য প্রাণী ওরাংওটাংয়ের জন্য সুপরিচিত খনিজসমৃদ্ধ পূর্ব কালিমান্তানে মাত্র ৩৭ লাখ লোক বাস করে।
মঙ্গলবার পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী সুহারসো মনোয়ারফা বলেন, ‘নতুন রাজধানীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এটি জাতির পরিচয়ের প্রতীক, পাশাপাশি এটি অর্থনৈতিক কার্যক্রমের এক নতুন কেন্দ্র।’
কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, নতুন শহর নির্মাণের ফলে পাম অয়েল চাষের সম্প্রসারণ হবে এবং বৈচিত্র্যময় বন্য প্রাণী এবং সবুজ রেইনফরেস্ট সমৃদ্ধ অঞ্চলের বন ধ্বংস হবে।
বোর্নিওর আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্বকারী গোষ্ঠীগুলো এরই মধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এই পদক্ষেপের ফলে তাদের পরিবেশ এবং সংস্কৃতি বিপন্ন হতে পারে।
নতুন শহরের নাম ঘোষণাও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
কেউ কেউ বলেছেন, নতুন নামটি বিভ্রান্তিকর হতে পারে। কারণ, নুসান্তারা একটি পুরনো জাভা শব্দ, যা ইন্দোনেশিয়াযর সমস্ত দ্বীপপুঞ্জকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছিলেন যে রাজধানীর নতুন নামটি রাষ্ট্রপতি দ্বারা বেছে নেওয়া হয়েছিল; কারণ এটি ইন্দোনেশিয়ার ভূগোলকে প্রতিফলিত করে এবং আন্তর্জাতিকভাবে আইকনিক ছিল।
রাজধানী স্থানান্তরের জন্য আনুমানিক ৩২.৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে। এটি হবে ইন্দোনেশীয় সরকারের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর একটি।
ইন্দোনেশিয়া রাজধানী পরিবর্তন করা প্রথম দেশ নয়। এর আগে ব্রাজিল, পাকিস্তান, মিয়ানমার, নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ নতুন, পরিকল্পিত শহরে রাজধানী সরিয়ে নিয়েছে৷
সূত্র : বিবিসি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।