শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগের দাবিতে টানা চার দিনের অনশনে বিবশ শরীর। অনশনে অংশ নেওয়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা একে একে অসুস্থ হতে থাকলে দ্রুত তাঁদের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অনেকের উঠে বসার শক্তি নেই। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে না পারায় কাউকে কাউকে দেওয়া হচ্ছে অক্সিজেন সাপোর্ট।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছেন তাঁরা। এ পরিস্থিতির মধ্যেও তাঁদের এক কথা—‘মৃত্যু মেনে নেব, তবু এই ভিসিকে মানব না। ’
গতকাল শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার স্টাফ সিক কেবিনের সামনে গিয়ে দেখা গেল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে করিডরে পায়চারী করছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। কয়েকজন কেবিনগুলোর সামনের দরজায়। অপরিচিত কেউ কেবিনের দিকে যেতে চাইলে গতি রোধ করছেন। ওখানেই তিনটি কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আমরণ অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়া ১০ জন শিক্ষার্থী। ২ নম্বর কেবিনে চারজন, ৩ নম্বর কেবিনে একজন, ৫ নম্বর কেবিনে পাঁচজন।
শিক্ষার্থীদের পরিচয় দিয়ে ২ নম্বর কেবিনে গিয়ে দেখা গেল, চারজন অনশনকারী শিক্ষার্থী সেখানে। কেবিনের উত্তর-পূর্ব কোনের বেডে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছেন শিক্ষার্থী ফয়জুর রহমান। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সহপাঠীরা জানালেন, ফয়জুরের ফুসফুসে পানি জমেছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, ফলে তাঁকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হচ্ছে।
টানা তিন দিনের অনশনে দুর্বল ফয়জুর কথা বলতে পারছিলেন না। ফিসফিস করে তিনি বললেন, ‘৭৩ ঘণ্টা হয়ে গেছে ভিসি পদত্যাগ করেননি। যতক্ষণ না পদত্যাগ করছেন, ততক্ষণ অনশনে থাকব। এই ভিসিকে ছাড় দেব না। ’
একই কেবিনে ফয়জুরের পাশের বেডে শুয়ে আছেন আরেক শিক্ষার্থী। নাম বলতে রাজি হলেন না। বললেন, ‘৭৩ ঘণ্টা পার হয়েছে। এক দিনে একটি প্রাণ, অন্যদিকে ২৪ প্রাণ। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রাণ আছে, এই ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাব। তাঁকে আর দেখতে চাই না। তাঁকে চলে যেতে হবে। এটাই আমাদের একমাত্র দাবি। ’
৩ নম্বর কেবিনে ভর্তি রয়েছেন ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী এস এম আহসান উল্লাহ রুবেল। একদিকে শরীর দুর্বল, অন্যদিকে তীব্র পেট ব্যথা। তবে অনশন তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতে পারেনি। জানালেন, গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যাওয়ায় সহযোদ্ধারা তাঁকে শুক্রবার হাসপাতালে নিয়ে আসেন। অনশনের বিষয়ে পরিবারকে জানিয়েছেন কি না প্রশ্ন করলে রুবেল বলেন, ‘অনশনে যাওয়ার আগে বাবার সঙ্গে কথা বলে তাঁর সম্মতি নিয়েছি। তিনি বলেছেন, যদি সত্যি মনে করো ভিসি অন্যায় করেছেন, তাহলে তুমি যেতে পারো। ’
অনশনে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের শয্যাপাশে সার্বক্ষণিক দেখভালে আছেন তাঁদের সহপাঠীরা। কিছু চাইলে তাঁরা দ্রুত ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন।
এমন একজন শিক্ষার্থী ইসমাইল হক বললেন, ‘আন্দোলনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি যে যার মতো করে হাসপাতালেও ছুটে আসছে। আমরা দেশবাসীকে বলতে চাই, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই, ভিসির বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ তা এক দিনের নয়। এটা চার বছরের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ। আমাদের ক্যাম্পাসে সিনিয়র-জুনিয়রদের যে মেলবন্ধন ছিল, সেটা নষ্ট করেছেন এই ভিসি। শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও তাই করেছেন। সর্বশেষ ক্যাম্পাসে পুলিশ দিয়ে হামলা চালিয়ে সেই ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছেন। তাঁকে আমরা আর এক মুহূর্তও ক্যাম্পাসে চাই না। ’
ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক জাহিদ আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে না খাওয়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর সমস্যা হচ্ছে। যাদের আগে শারীরিক সমস্যা ছিল, এখন তাদের বেশি সমস্যা হচ্ছে। একজনের হার্টে সমস্যা থাকায় তার একটু জটিলতা দেখা দিয়েছিল। তবে এখন সবার অবস্থা স্থিতিশীল। আমরা তাদের পর্যবেক্ষণে রেখেছি। প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। ’
এ পর্যন্ত আমরণ অনশনে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬ জন শিক্ষার্থী। ওসমানী হাসপাতালে ১০ জন, দুজন জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং মাউন্ট অ্যাডোরা হাসপাতালে। বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে আবারও ক্যাম্পাসে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।
তাঁরা আরো জানান, যে ভিসি পুলিশ ডেকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করাতে পারেন, তাঁর পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তারা সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকার করতে প্রস্তুত।
তথ্যসূত্র: কালের কন্ঠ
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।