আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তাঁর সাময়িক বিরতির ঘোষণায়ও কিছু ‘ধোঁয়াশা’ ছিল। তামিম ইকবাল সেসব যেমন দূর করলেন না, তেমনি তাঁকে নিয়ে তির্যক বক্তব্যেও উল্টো শান্তির পতাকাই উড়িয়ে গেলেন। আগের রাতে সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে বিধ্বংসী সেঞ্চুরি করার সময় যতটা আক্রমণাত্মক ছিলেন, গতকাল দুপুরে এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় ততটাই রক্ষণাত্মক। অনেকটা খোলসে ঢুকে পড়া সেই তামিমকেই তুলে ধরেছেন মাসুদ পারভেজ

প্রশ্ন : আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে বিরতি ঘোষণার পরদিনই সেঞ্চুরি। সব পেছনে ফেলে এবং ভুলেই কি ওরকম ব্যাটিং করতে পারলেন?

তামিম ইকবাল : এটি ঠিক যে আমি অনেক রিল্যাক্সড ছিলাম। কিন্তু ঘোষণা দেওয়ার কারণেই ওরকম ইনিংস খেলতে পেরেছি, বিষয়টি তা-ও নয়। সব সময় যে মানসিকতা নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামি, সেভাবেই নেমেছিলাম।কখনো হয়, কখনো হয় না।
প্রশ্ন : এবার যে হলো, তাতে অনেক শটেই তামিমের পুরনো ছন্দটাও লক্ষণীয় ছিল। আপনি নিজে কী লক্ষ্য নিয়ে নেমেছিলেন?

তামিম : বড় টার্গেট ছিল। রানও করতে হতো দ্রুত। আমার ব্যাটে কানেক্ট হচ্ছিল ভালো। সেই সঙ্গে এই সতর্কতাও ছিল যে জোরাজুরি করে কোনো শট খেলা যাবে না।

প্রশ্ন : মাশরাফি আগের দিনই বলেছিলেন, ‘তুই একটা সেঞ্চুরি কর। ’ তামিমের এই বৈশিষ্ট্যটি তো অনেকেরই জানা যে তাঁর সেরাটা বের করে আনতে পিঠে আস্থার হাত রাখা লাগে, অনুপ্রাণিত করা লাগে। এই বিষয়টি আপনার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

তামিম : আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের জন্য তো মহাগুরুত্বপূর্ণ। কারো এই সমর্থনটা লাগে, কারো আবার লাগেই না। আমার যেমন লাগে। মানুষভেদে ব্যাপারটি ভিন্ন হয়। এমন নয় যে মাশরাফি ভাই প্রতিদিন বলবেন আর প্রতিদিনই সেঞ্চুরি করে ফেলব। তবে আমার ভালো খেলতে এ ধরনের কথাবার্তা লাগেই।

প্রশ্ন : শোনা যায় বাইরের কথাবার্তা বেশি গায়ে মাখেন আপনি।

তামিম : আমাকে নিয়ে যা যা আলোচনা হয়, তা যদি সত্যি সত্যিই গায়ে মাখতাম, তাহলে তো ক্রিকেট থেকে আরো সাত-আট বছর আগেই অবসর নিয়ে ফেলতাম। এগুলো এড়িয়ে চলারই চেষ্টা করি। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি যা, তাতে সব কিছু আপনি এড়িয়েও যেতে পারবেন না।

প্রশ্ন : আপনার স্ট্রাইক রেট নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার নামও দিয়ে ফেলা হলো ‘ডটবাবা’!

তামিম : ওই যে বললাম, সব কিছু তো এড়িয়ে যেতে পারবেন না আপনি। কিন্তু যত বেশি আপনি এড়িয়ে চলতে পারবেন, আপনার জন্য চলা সহজ হবে। কে কী নাম দিলো না দিলো, তাতে কি কিছু ঘটে যায়? শচীন টেন্ডুলকারকেও একসময় ‘এন্ডুলকার’ বলা হয়েছে। তাতে কি উনি ফুরিয়ে গিয়েছিলেন?

প্রশ্ন : অনেক সময় নিশ্চুপও থাকেন। কেন?

তামিম : দেখুন, আপনাদের প্রত্যেকটি প্রশ্নের জবাব আমার কাছে ভালো করেই আছে। তাই বলে সব প্রশ্নেরই জবাব দিতে হবে বলে মনে করি না। তা ছাড়া আমার রেকর্ড ঘাঁটলেই আপনারা অনেক প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন। তিন সংস্করণে আমি কতটা প্রভাব রাখতে পেরেছি, তা আপনারাই বের করতে পারেন। আমার নিজের কথা তো নিজের মুখে বলার দরকার নেই।

প্রশ্ন : একজন দল মালিককে আপনার মতো সিনিয়র ক্রিকেটারদের ‘মেয়াদোত্তীর্ণ’ বলতে শোনা গেছে। এই সেঞ্চুরি কি তারই জবাব?

তামিম : এক ফোঁটাও না। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কথা বলছেন জানি। আমি ওই দলে দুই বছর খেলেছি। দল মালিকের পরিবারের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবেই মিশেছি। তাঁদের প্রতি আমার ভালোবাসা ছাড়া আর কোনো কিছু নেই। আমি শুধু ভালো স্মৃতিটাই রাখতে চাই।

প্রশ্ন : আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে আপনাকে আর দরকারই হবে না বলে আশা করেছেন। আশা পূরণ হলে কি টি-টোয়েন্টি থেকে নীরবেই অবসর নিয়ে ফেলবেন

কলমকথা/রোজ