রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের নতুন হিসাব খুলতে এখন আর কাউন্টারে গিয়ে ফরম পূরণ করতে হয় না। তথ্য দেওয়া কিংবা যাচাই, সব কিছুই হচ্ছে পাঁচ মিনিটে, মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে।

সোনালী ই-সেবার মাধ্যমে ঘরে বসেই অ্যাকাউন্ট খোলা যাচ্ছে।
করোনা ভাইরাস থেকে গ্রাহকদের সুরক্ষা দিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান। পুরো প্রক্রিয়াটি হচ্ছে ই-কেওয়াইসির মাধ্যমে।

ই-কেওয়াইসি (ইলেকট্রনিক নো ইওর কাস্টমার) প্রযুক্তির মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠান নতুন গ্রাহকের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই করা হয় মুহূর্তেই জাতীয় পরিচয়পত্রের সংযোগ ব্যবহার করে। এই সেবা ব্যাংকের খরচ ও গ্রাহকপ্রতি সময়, দুটিই কমিয়ে দিয়েছে।

নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে সোনালী ব্যাংকের নির্বাহী প্রধান বলেন, আমার অ্যাকাউন্ট খুলতে পাঁচ মিনিট লেগেছে, এক্সপার্ট হলে দুই মিনিটেও সম্ভব। অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য গ্রাহকদের সশরীরে ব্যাংকের কোনো শাখায় যাওয়ার দরকার নেই।

দেশের সব ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ই-কেওয়াইসি চালুর জন্য সার্কুলার জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

একটি আদর্শ ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২০ সালের মার্চ মাসে সোনালী ই-সেবা অ্যাপ চালু করা হয়। এই অ্যাপ চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৯৯ হাজার ৩৩টি হিসাব খোলা হয়েছে।

গত বছরের মার্চে চালু হওয়া সোনালী ই-ওয়ালেটের মোট হিসাবসংখ্যা ছাড়িয়েছে এক লাখ ৩৭ হাজার ৮১টি। সোনালী ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে গড়ে প্রতিদিন ছয় হাজার লেনদেন হচ্ছে।

সোনালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী আতাউর রহমান বলেন, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্স কিভাবে মেইনটেইন করতে হয়, কিভাবে মেইনটেইন করা যায়, করোনাকালে আমরা সেটা শিখলাম। সোনালী ব্যাংকে (অবকাঠামো অনুযায়ী গ্রাহকসংখ্যার বিচারে) সেটা কোনোভাবেই সম্ভব না। কারণ লাখ লাখ মানুষ যায়, ছোট ব্রাঞ্চ, কারো ইলেকট্রিক বিল দিতে হয়, কারো বয়স্ক ভাতা নিতে হয়। বয়স্করা একজনও আসেন না।

নিজস্ব সক্ষমতায় ই-সেবার উন্নয়ন হয়েছে বলে জানান সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান। তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব কর্মীরা দিন-রাত কাজ করে তৈরি এটা করেছেন।

সোনালী ব্যাংকে ইলেকট্রনিক কেওয়াইসি সেবা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক ড. শাহ মোহাম্মদ আহসান হাবীব বলেন, বিশ্বের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানই ই-কেওয়াইসিতে জোর দিচ্ছে। সোনালী ব্যাংকে এই সেবার অন্তর্ভুক্তি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রতি মানুষের ধারণা পাল্টাতে সাহায্য করবে।

তিনি বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গ্রাহকসংখ্যার বিচারে এগিয়ে আছে সোনালী ব্যাংক। এতসংখ্যক গ্রাহকের তথ্য ব্যবস্থাপনায় ই-কেওয়াসির বিকল্প নেই। তবে তথ্য ব্যবস্থাপনায় কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন ধরে রাখতে হবে।

ই-কেওয়াইসির আওতায় সোনালী ই-সেবা ব্যবহার করে সোনালী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। গ্রাহকের ছবি ও ব্যক্তিগত তথ্য অটোমেটিক পদ্ধতিতে যাচাই-বাছাই করার জন্য সোনালী ব্যাংক তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সফটওয়্যার ‘পরিচয়’ ব্যবহার করছে।

‘পরিচয়’ সফটওয়্যার গ্রাহকের যে কোনো তথ্য (কেওয়াইসি) নিমেষেই বাংলাদেশ জাতীয় ডিজিটাল আর্কিটেকচারের (বিএনডিএ) সঙ্গে অটোমেটিক মিলিয়ে নিতে পারে।

সোনালী ব্যাংকের গ্রাহকরা নিজের ছবি এবং ব্যক্তিগত তথ্যের বিবরণী অ্যাপে দিলেই আইসিটি বিভাগের ‘পরিচয়’ প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র সার্ভার থেকে সেগুলো যাচাই করে নেওয়া হয়। একই সঙ্গে অন্যান্য তথ্য (কেওয়াইসি) বাংলাদেশ জাতীয় ডিজিটাল আর্কিটেকচারের সঙ্গেও মিলিয়ে নেওয়া যাবে।