নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ইশানগাতী গ্রামের জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী রুমকি খানমের দুই হাত ও পা অচল তবুও দমেনি সে পড়াশোনা করে হতে চাই দেশের প্রথম শ্রেণীর একজন কর্মকর্তা।
সেই ছোটবেলায় রুমকিকে পড়াশোনা করাতে চাননি তাঁর মা-বাবা। তবে মেয়ের জোরাজুরিতেই তাঁকে গ্রামের স্কুলে ভর্তি করানো হয়। হাত-পা অচল হলেও রুমকির শ্রবণ ও প্রখর মেথায় আজ সে অনেক এগিয়ে।
এই বছর এইচএসসিতে জিপিএ-৪ দশমিক ৫৮ পেয়েছেন রুমকি।
রুমকি সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে যে তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন, সেগুলোর সব কয়টিতে এ প্লাস পেয়েছেন রুমকি।
তবে ভালো ফল করেও ভবিষ্যতের পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে রুমকি ও তার পরিবার।
উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ঈশানগাতী গ্রামের আবদুর রউফ মোল্লা ও মাতা,আবেদা সুলতানার মেয়ে, রুমকি।
লোহাগড়া উপজেলার আমাদা আদর্শ কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন রুমকি।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় তিনি তাঁর বিদ্যালয়ের ২৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে একাই জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।
এসএসসিতে জিপিএ-৩ দশমিক শূন্য ৬ এবং জেএসসিতে পেয়েছিলেন ৩ দশমিক ৭৫।
এসএসসি ও জেএসসিতে জিপিএ কম থাকায় এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া হয়নি রুমকি”র।
জন্ম থেকেই রুমকি প্রতিবন্ধী। তাঁর দুই হাত ও দুই পা বাঁকা ও শুকনো। কোনো হাতে–পায়ে শক্তি নেই। নিজে চলাফেরা করতে পারেন না। গোসল, খাওয়াসহ সব কাজেই তাঁকে অন্যের সাহায্য নিতে হয়।
ছোটবেলায় রুমকি বাম হাতে কলম ধরে বাম পায়ের সহযোগিতায় লিখতেন। তবে বড় হওয়ার পর বাম হাতে কলম ধরে ডান হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে লেখেন। তারপরও রুমকির হাতের লেখা বেশ সুন্দর। মুখে কলম ধরে ছবিও আঁকেন রুমকি।
রুমকি বলেন, ছোটবেলা থেকে তাঁর ইচ্ছা সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর প্রথম পছন্দ। পড়াশোনা শেষ করে পেশা হিসেবে সে প্রথম শ্রেণীর অফিসার হয়ে দেশের সেবা করতে চান রুমকি।
রুমকির বাবা আবদুর রউফ মোল্লা স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। মা আবেদা সুলতানা গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে রুমকি মেজো।
তার বড় ভাই রেজওয়ান ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। ছোট বোন রুবাইয়া এসএসসি পরীক্ষার্থী।
রুমকির মা আবেদা সুলতানা বলেন, রুমকির এইচএসসির ফলাফলের পর বাড়ির সবাই বেশ খুশি। রুমকি অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করে। ভ্যানে বা অন্য পরিবহনে করে নিয়ে রুমকিকে ক্লাসরুমের বেঞ্চে বসিয়ে দিতে হয়।
এভাবে প্রতিদিন ক্লাসে যাওয়া সম্ভব হয় না রুমকি”র আবার প্রাইভেট শিক্ষকের কাছেও এভাবে যাওয়া কষ্টকর।
বাড়িতে প্রাইভেট শিক্ষক আনার মতো আর্থিক সচ্ছলতা নেই। তাই রুমকি কখনো প্রাইভেটও পড়েনি।
রুমকি”র মা আবেদা সুলতানা বলেন, আমার মেয়ের খুব ইচ্ছা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। এখন উচ্চশিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
তিন ছেলেমেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার মতো আর্থিক সচ্ছলতা নেই রুমকি”বাবার আর রুমকির জন্য খরচ বেশি হবে।
রুমকি”র আবদুর রউফ মোল্লা বলছিলেন,তার শারীরিক নানা প্রতিবন্ধকতার জন্য ছোটবেলায় রুমকির পড়শোনা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাঁর ইচ্ছার কাছে আমরা হার মেনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ক্ষেত্রে আরও নানা প্রতিবন্ধকতা হবে আমাদের।
রুমকির কলেজ থেকে জানা যায়, রুমকি অত্যন্ত মেধাবী একজন ছাত্রী। তাঁর শারীরিক অক্ষমতা থাকলেও তাঁর লেখা স্পষ্ট ও সুন্দর। সহায়তা পেলে মেয়েটি ভালো লেখা পড়া করতে পারবে।
প্রতিবেশী মোঃ ইকবাল মোল্লা বলেন রুমকি প্রতিবন্ধী আমরা দেখতেছি সেই ছোটো বেলা থেকে রুমকি কে পড়া লেখা করতে, তার নাকি ইচ্ছে সে প্রথম শ্রেণীর অফিসার হবে।
১১/ মার্চ শুক্রবার সাংবাদিক মোঃ আজিজুর বিশ্বাস কে রুমকি”র পরিবার ও গ্রামে বাসী জানান রুমকি”র ইচ্ছা ও আশা।
এছাড়া ও রুমকি”র পরিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নড়াইল ২আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্তজার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।