গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয়বারের মতো অংশগ্রহণ করবেন কিনা এমন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দ।
২০২০-২০২১ সেশনের শিক্ষার্থীদের আর্থিক সুবিধা, যাতায়াত সুবিধা, থাকা-খাওয়ার সুবিধাসহ সার্বিক ভোগান্তি হ্রাসের কথা ভেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অংশগ্রহণ করেছিল। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বার বার মেধাতালিকা ও গণসাক্ষাতকার আহ্বান করেও আসন পূরণ না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহলে চলছিল সমালোচনা।
এরই প্রেক্ষিতে আজ শুক্রবার ( ১৮ মার্চ) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছের উপাচার্যদের এক সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সকাল থেকে এ সভা শুরু হয়ে শেষ হয় দুপুর আড়াইটার পর। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা স্বশরীরে সভায় উপস্থিত থাকলেও কয়েকজন ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। সভায় সভাপতিত্ব করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক।
সভায় উপস্থিত থাকা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি জানিয়েছেন, গুচ্ছের গতবারের সংকটগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গুচ্ছ থাকবে নাকি আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, সংকট সমাধান কীভাবে করা যায় এসব বিষয় নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। ভিসিদ্বয় আরও জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকীরা গুচ্ছে থাকতে চেয়েছেন। অন্তত আরও একবার তারা গুচ্ছভুক্ত হয়ে পরীক্ষা আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সময় চেয়েছেন।
এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক গুচ্ছের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারা বলছেন, গুচ্ছ কমিটি ভর্তি পরীক্ষায় অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ধরে রাখার জন্য নিজস্ব ভর্তি ব্যবস্থাপনায় ফিরতে চাই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান বলেন,ভোগান্তি কমানোর জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে গুচ্ছ পদ্ধতি চালু হলেও সেই ভোগান্তি কিছুটা রয়েই গেছে। সমন্বয়হীনতার কারণেই এই ভোগান্তি মনে হচ্ছে। ভর্তির ক্ষেত্রে সমন্বয় থাকলে ভালো হতো। গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় ঢাকার বাহিরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রত্যাশা মাফিক শিক্ষার্থী পেলে ও আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তা পায় নি। এসব বিষয় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সমালোচনা ও মানের প্রশ্ন তুলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, কোভিড পরিস্থিতির কারনে গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কোভিড পরিস্থিতিতে নিয়মিত ভর্তি কার্যক্রম চালু রাখায় অনেক শিক্ষার্থী সে সেব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যায়। তাই সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কিছুটা অসুবিধার মুখোমুখি হচ্ছে। তবে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণের না করে নিজস্ব ভর্তি ব্যবস্থাপনায় ফিরলে ভাল হবে বলে মনে করি।
এসব বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা গুচ্ছে থাকার পক্ষে মত দিয়েছেন। গতবারের ভুল-ত্রুটি শুধরে নিয়ে এগুতে চান তারা। তবে আমরা গুচ্ছে থাকা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেই নি। আমরা বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও শিক্ষক সমিতির সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবো।
গুচ্ছ ভুক্ত ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় , শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর , পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় (নেত্রকোনা) ,বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় , যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।