দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশন কতটা আইন ও বিধি প্রয়োগ করতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন দেশের কয়েকজন বিশিষ্টজন। তারা বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই অভিজ্ঞতা হয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করছে আগামী সংসদ নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য হবে।
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে কয়েকজন বক্তা এসব কথা বলেন।
সংলাপে বক্তারা সিইসি ও কমিশনারদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, কমিশনারদের এখন পাওয়ার বা হারানোর কিছু নেই। সেটি বিবেচনায় রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
বিশিষ্টজনদের এসব বক্তব্যের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আপনারা ঠিকই বলেছেন- আমাদের হারানোর আর কিছুই নেই। যেই বয়স হয়েছে তাতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আর নেই। আমাদের পাওয়ারও কিছু নেই। আপনাদের পরামর্শ বিবেচনায় নিয়ে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এখন ইতিবাচক কিছু করতে পারি, সবার অংশগ্রহণের নির্বাচনটা অবাধ ও সুষ্ঠু করা যায় তাহলে সেটাই আমাদের সফলতা হতে পারে। শতভাগ সফলতা হয়ত হবে না; কেউ কেউ বলেছেন ৫০-৬০ শতাংশও যদি গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে সেটাও বড় সফলতা।
সংলাপে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, এই কমিশন ওই কমিশন কোনো ফ্যাক্টর না। সবই নির্বাচন কমিশন। আমাদের ব্যর্থতা কোথায় ছিল সেটা দেখতে হবে, যাতে সেই ব্যর্থতা সামনে না আসে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবীব খান বলেন, ‘আমাদের মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তি নেই। আমরা সবাই মিলে সহযোগিতা করলে নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারব।’
নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘আমার চাওয়ার, পাওয়ার ও হারানোর কিছু নেই। সততার দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে চাই।’
দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে নির্বাচন ভবনে আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এ সংলাপ চলে। এতে সভাপতিত্ব করেন সিইসি নিজেই। সংলাপে দেশের ১৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক অংশ নেন। যদিও ৩৭ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এতে তিনজন নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান দেশের বাইরে থাকায় তিনি অংশ নেননি।
এর আগে গত ১৩ মার্চ শিক্ষাবিদদের সঙ্গে সংলাপে বসেছিল ইসি। ওই সংলাপে ৩০ জনকে আমন্ত্রণ জানালেও ১৩ জন অংশ নেন।
আজকের সংলাপে যে বিশিষ্ট নাগরিকরা অংশ নিয়েছেন, তারা হলেন- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সেন্টার ফর আরবার স্টাডিজের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ইনডিজিনাস পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, নিজেরা করির সমন্বয়ক খুশী কবির, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান, লিডারশিপ স্টাডিজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সিনহা এমএ সাঈদ, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ, সাবেক সচিব আব্দুল লতিফ মন্ডল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গভর্নেন্স অ্যান্ড রাইট সেন্টারের প্রেসিডেন্ট জহুরুল আলম, ঢাবির অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান ও অধ্যাপক এসএম শামীম রেজা।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।