রাজধানীতে গত দশ দিন ধরে ক্রমশ ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তীব্র গরমের পাশাপাশি অনিরাপদ পানি পানের কারণে হঠাৎ রোগী বেড়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। এই পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে রাজধানী মহাখালির আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) কলেরা হাসপাতাল।
হাসপাতালে রোগীদের সংকুলান না হওয়াতে হাসপাতালের বাইরে তাবু টানিয়ে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার (২৫ মার্চ) বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৬৭০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গেছে। ১৬ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত ১০ দিনে ভর্তি হয়েছে ১১ হাজার ১২৬ জন। প্রতিদিন গড়ে এক হাজার ১১৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন এই হাসপাতালে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন ২২ মার্চ। এদিনে ভর্তি রোগীর সংখ্যা এক হাজার ২৭২ জন।
আইসিডিডিআর,বি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজধানীর কয়েকটি এলাকা থেকেই ঘুরেফিরে বেশি ডায়রিয়া রোগী আসছে। এর মধ্যে সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শনিরআখড়া, মিরপুর, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, উত্তরখান, উত্তরা ও কামরাঙ্গীরচর এলাকার থেকে আসা রোগীর সংখ্যাই বেশি। এসব রোগীদের অধিকাংশই কলেরা আক্রান্ত।
আইসিডিডিআর,বি হাসপাতাল শাখার প্রধান ডা. বাহারুল আলম জানান, আগের বছরগুলোতে গরমের মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী ভর্তি হতো তাদের হাসপাতালে। কিন্তু এবারের গরমে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। ১৬ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ৯ দিনের মধ্যে নতুন ভর্তি হওয়া ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা কোন দিনও এক হাজারের নিচে নামেনি বলেও জানান এই চিকিৎসক।
ডা. আলম আরো জানান, অন্য বছরগুলোতে সাধারণত শিশু রোগীরা ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এবার হয়েছে উল্টো। ১৮ বছরের বেশি বয়সী রোগীরাই হাসপাতালে বেশি ভর্তি হচ্ছেন। শিশুরাও ভর্তি হচ্ছে, তবে বয়স্কদের তুলনায় কম।
ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে তীব্র পানিশূন্যতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চৈত্রের অসহ্য গরমে অস্বাস্থ্যকর খাবার ও অনিরাপদ পানীয় পান করায় ডায়রিয়ার তীব্রতা বেড়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
অপরদিকে, আইসিডিডিআর,বি’র পাশাপাশি আগারগাঁওস্থ ঢাকা শিশু হাসপাতালেও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে শতাধিক ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, গরমের কারণে দ্রুত খাবার পচে যায়। বয়স্করা কাজের প্রয়োজনে বাইরে বেশি বের হন এবং তারা এসব খাবার গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে গরমের কারণে অনিরাপদ পানিও পান করেন।
এ কারণে বয়স্করা বেশি ডায়রিয়ার আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে অনেক দিন পর স্কুল-কলেজ খুলেছে। শিশুরাও ঘরের বাইরে বের হচ্ছে। তারাও বাইরের খাবার খাচ্ছে। এতে পেটের অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে।
তাই ডায়রিয়া থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে এই চিকিৎসক ছোট বড় সবাইকে বাইরের খাবার না খেয়ে ঘরে তৈরি খাবার খেতে অনুরোধ জানান। বাইরের কোন পানি পান না করে বাসা থেকে ফুটানো পানি নিয়ে সে পানি পান করার পরামর্শ দেন।
এছাড়াও ফুটপাত বা খোলা জায়গা থেকে পেঁপে, আনারস, তরমুজ বা শরবত না খেতে বলছেন। এতে ডায়রিয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে বলে জানান ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।