বসন্তের পড়ন্তকালে বাংলার চৈত্র মাসের কুড়ি দিন অতিবাহিত হয়েছে। চৈত্রের এই সময়ে মানুষ মাঠে কাজ করতে গিয়ে প্রচণ্ড গরমে হাঁপিয়ে উঠে। ক্ষণিকের জন্য ছায়া বা শীতল হাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করে। অফিস-আদালত, বাসা–বাড়িতে গরমে শীতল হওয়ার একমাত্র ভরসা বৈদ্যুতিক পাখা। কিন্তু চৈত্রে এই ক্ষণে গত পাঁচ দিন থেকে রংপুর অঞ্চলে হঠাৎ করে বদলে গেছে আবহাওয়া। এ অঞ্চলে বইতে শুরু করেছে হিমেল হাওয়া। চলমান আবহাওয়ায় অনেকটা যেন চৈত্র মাসে পৌষের আমেজ! তীব্র দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হওয়ার এই সময়ে রংপুরে ব্যতিক্রমী আবহাওয়া বিরাজ করছে। গত পাঁচ দিন ধরে দিনের বেলা মাঝেমধ্যে সূর্য উঁকি দিলেও অধিকাংশ সময় আকাশ থাকছে মেঘাচ্ছন্ন আর রাতে বৃষ্টি।

এসব কারণে হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেছে গরম। শীত শীত অনুভূতির কারণে অফিস-বাসা–বাড়ির বৈদ্যুতিক পাখাগুলো ঘুরছে না। সাথে বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে অনেকের শরীরে উঠছে তুলে রাখা মোটা কাপড়ও। রংপুর আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, লঘুচাপের প্রভাবে সৃষ্ট আবহাওয়ার এমন অবস্থা আরও তিন দিন থাকতে পারে। রোববার (৩ এপ্রিল) সকালে রংপুর আবহাওয়া অফিসের পাওয়া তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ২১ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বোচ্চ ২৮ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গত তিন দিনের চেয়ে পর্যায়ক্রমে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস করে কম। আর গত একদিনে রংপুরে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৭ মিলিমিটার। আর একই সময়ে বিভাগের কুড়িগ্রাম রাজারহাটে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮৬ মিলিমিটার। এদিন দুপুর পর্যন্ত রংপুরের আকাশে সূর্যের দেখা মেলেনি। তবে দুপুর গড়িয়ে সূর্যের দেখা মিললেও ছিল না তাতে কোনো প্রখরতা।

আর গত চার দিনেও দিনের বেলা মাঝেমধ্যে সূর্য উঁকি মারলেও অধিকাংশ সময় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকছে। এতে অনেককে গায়ে হালকা মোটা কাপড় পরে চলাফেরা করতে দেখা গেছে। আর রাতে বৃষ্টিপাত হওয়ায় অনেকে খাওয়া-নাওয়া ছেড়ে বোরো ধান রোপণের জন্য তড়িঘড়ি করে জমি প্রস্তুত করছে। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার সৈয়দপুর এলাকার খন্দকার আলাউল বাবু বলেন, হঠাৎ করে কয়েকদিন ধরে আবহাওয়া স্যাঁতসেঁতে বিরাজ করছে। দিনের বেলা ফ্যান ছাড়া ঘরে থাকা মুশকিল। কিন্তু এখন ফ্যানের পরিবর্তে হালকা মোটা কাপড় পরিধান করা লাগছে। মোটরসাইকেল ড্রাইভ করলে শির শির বাতাস শরীরের ভেতরে ঢুকে। আর রাতে কাঁথা বা কম্বল জড়িয়ে শুতে হয়। রমজানের শুরুতে হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনে অনেকের ঠাণ্ডা কাশি রোগও দেখা দিচ্ছে। একই এলাকার হরিচন্দ্র গোপাল বলেন, তিন-চার দিন থেকে প্রতি মধ্য রাতে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে উড়তি ফসলেরও ক্ষতি হচ্ছে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের ঠাণ্ডা কাশি দেখা দিচ্ছে।

গ্রামগঞ্জের হাট বাজারে রাত ৮টা বাজলেই মনে হচ্ছে জনশূন্য। এদিকে রংপুর মেডিক‌্যাল কলেজের শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এসএম নুরুন্নবী জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শিশু ওয়ার্ডে জ্বর সর্দি ও ডায়রিয়া জনিত রোগে রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান জানান, উত্তর থেকে আসা হিমালয়ের ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনেরও প্রভাব। এ আবহাওয়া আগামী আরো তিন দিন পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকবে। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলের অনেক জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।