ঠাকুরগাঁওয়ের ৫ উপজেলায় তান্ডব চালিয়েছে কালবৈশাখী ঝড়৷ এতে লন্ডভন্ড হয়েছে সদর, রাণীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর,পীরগন্জ উপজেলার শতাধিক গ্রাম৷ এ ঝড়ো বৃষ্টিতে আম, ধান, ভুট্রার সহ ফসলের ক্ষতিও হয়েছে ব্যাপক৷ কোথাও কোথাও ঘর-বাড়ির ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি ঝড়ো হাওয়ায় উড়ে গেছে অনেক স্থাপনা। তবে বৃষ্টির পানির চেয়ে ঝড়ো হাওয়া ছিল খুব বেশী৷ তখন থেকে সারারাত বিদ্যুৎ বিছিন্ন ছিল৷
শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) রাত সাড়ে দশটার দিকে হালকা বৃষ্টি হওয়ার পর থেমে যায়। পরে রাত সাড়ে বারোটার দিকে কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বিভিন্ন গ্রাম৷ বৃষ্টির পরিমাণ কম হলেও ঘূর্ণিঝড় বাতাসের বেগ বেশি ছিল। কোথাও কোথাও ভারী বজ্রপাতও হয়েছে। অনেক মানুষের থাকার একমাত্র স্থাপনার সবকিছু বাতাসে উড়ে গেছে৷ ঝড়ে ভেঙে পড়েছে কাঁচা পাকা ঘর। উড়ে গেছে ঘরের চালা। উপড়ে পড়েছে হাজার হাজার গাছ। ভেঙে পড়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। আর ঝড়ে ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে, গাছের ডাল পড়ে, প্রাচীরের ইট পড়ে বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক সাধারণ মানুষ।
দুই শতাধিক গবাদি পশু আহতের পাশাপাশি বেশ কিছু দিকবিদিক ছোটাছুটিতে হারিয়ে গেছে। ধান ও ভুট্টা কলার উঠতি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে৷
রাণীশংকৈল উপজেলার রাতোর গ্রামের আব্দুল গফুর বলেন,কালবৈশাখী ঝড়ে আমরা চারপাশে ক্ষতিগ্রস্ত হলাম৷ ঘরের টিনের চালাগুলো উড়ে চলে গেছে৷ যেটুকু আবাদ করেছিলাম সে স্বপ্ন বিনষ্ট হয়ে গেল৷ এখন কিভাবে এ ধাক্কা কেটে উঠব বুঝে উঠতে পারছিনা৷
একই উপজেলা ফরিঙ্গাদিঘী গ্রামের আয়েশা খাতুন বলেন,মোর আপন কেউ নাই৷ মাইনসের বাড়িত কাজ কইরা দিন আনু আর দিন খাও৷ এই ঝড়ত মোর সব শেষ হইয়া গেল৷ যে বাতাস মেঘ চিলকন (বিদ্যুৎ চমকানো) মনে হইল বাচিমনি। এলা কিভাবে মুই থাকিম৷ আর কুন্ঠে মুই থাকিম৷
সদর উপজেলার হাজিপাড়ার হারুন রশীদ বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে গ্রামের মানুষের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি এবারে আমরাও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমাদের অনেকগুলো প্রাচীর ভেঙে পরে গেছে৷ অনেক ঘরের উপরে গাছ পরে গেছে৷ কয়েক মিনিটের অপ্রত্যাশিত ঝড়ে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের মিজানুর রহমান বলেন, এমন ক্ষয়ক্ষতি হওয়া কালবৈশাখী ঝড় খুব কম দেখেছি৷ এর আগে একটা এলাকা বা কয়েকটা এলাকাকে কেন্দ্র করে হত৷ এবারে পুরো জেলাজুরে মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সমাজকর্মী আশরাফুল ইসলাম বলেন, রাতে কালবৈশাখী ঝড়ে গ্রামের মানুষের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ অনেকের একমাত্র থাকার ঘর বিধস্ত হয়ে গেছে৷ পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে গেছে।সরকারি সহায়তা ও সমাজের বিত্তবানদের দ্রুত সময়ের মধ্যে সেসকল মানুষের পাশে দাড়ানো উচিত৷
জেলা ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার মকবুল হোসেন বলেন, আমরা ঘুরে ঘুরে পরিস্থিতি দেখার চেষ্টা করছি। প্রবল বেগে ঝড় বয়ে যাওয়ায় অনেক জায়গায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। শহরে চারটি স্থানে বড় গাছ উপড়ে পড়েছে। বহু গাছ ভেঙে পড়েছে। এগুলো সরানো হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি-সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক আবু হোসেন বলেন, ঝড়ের কারণে আম-লিচু বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। কৃষির সব মৌসুমী ফসলের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ বিকেলে জানা যাবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।