বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ঈদের দিন দুপুরে সংঘর্ষে রেহাই পায়নি মাসুদ আহমেদ নামে প্রতিবন্ধী মুক্তিযোদ্ধার এক সন্তান।

হামলা চালানো হয়েছিলো ১৯৭১ সালে মহান মুুক্তিযুদ্ধে বোয়ালমারীর গোহাইলবাড়ি যুদ্ধকালীন ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় কমান্ডার ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন আহমেদের বড় সন্তান উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা জামান সিদ্দিকীকে হত্যার জন্য!

তবে ভাগ্যক্রমে হামলার অাঁস পেয়ে অন্যের ঘরে পালিয়ে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। এ হামলায় মারাত্বক আহত হয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে মোস্তফার শারিরীক প্রতিবন্ধী (পুঙ্গ) সেজো ভাই মাসুদ আহমেদ।

তার আরেক ভাই (মেজো) ঘোষপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মো. আলমগীর আহমেদও আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হামলায় নিহত চরদৈতরকাঠি গ্রামের মোসলেম শেখের ছেলে কৃষক মো. খায়রুল শেখ (৪৫) ও একই গ্রামের মৃত হাসেম মোল্যার ছেলে গোহাইলবাড়ি বাজার ব্যবসায়ি আকিদুল মোল্যা (৪৬) আলাউদ্দিন আহমেদের সম্পর্কে ভাতিজা। গত বুধবার বিকেলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমনটিই বলতেছিলেন ৯২ বয়সি বীরমুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন আহমেদ।

তিনি আরো বলেন, বজলু বেঁচে থাকতে হামলা না করলেও তার ছেলেরা লোকজন নিয়ে আমার পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য এ হামলা চালিয়েছে। নিহত দুইজনের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। বুধবার বাদ মাগরিব চরদৈতরকাঠি মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে নিহতদের লাশ খরসূতি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। থানা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ী-চরদৈতরকাঠি এলাকায় ঈদের নামাজ পড়াকে কেন্দ্র করে (মঙ্গলবার) প্রতিপক্ষের হামলায় ধারালো অস্ত্রের কোপে মারাত্বক জখম অবস্থায় আকিদুল মোল্যা (৪৫) ও খায়রুল শেখ (৪৭) নিহত হন। হামলায় আহত মাসুদ আহমেদ ও আলমগীর আহমেদ ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ও ভাড়ালিয়ারচর গ্রামের বারিক মোল্যার ছেলে রাজিবুল (২৯), সাজেদুল (২৬), আব্দুল কাদের (৪০), সোহরাবের ছেলে সোহেল (২২) ও আকবর শেখের ছেলে (৬৫) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা জামান সিদ্দিকীর লোকজন’ ও গোহাইলবাড়ি গ্রামের মরহুম বজলু খালাসির ছেলে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরিফ হোসেন, দোলোয়ারের মধ্যে দীর্ঘদিন ঝামেলা চলছিল। ঈদের নামাজ পড়তে গিয়ে দুই গ্রুপের লোকজনের মধ্যে ঝামেলা হয়। পরে দুপুরে দুই পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

পুলিশ ঘটনার এলাকা থেকে জিজ্ঞাবাদের জন্য ৫জনকে থানায় নিয়েছে। এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। গত বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ি-চরদৈতরকাঠি গ্রামের পাশাপাশি পরিবার দুটিতে চলছে শোকের মাতম। নিহত ঘোষপুর ইউনিয়ন কৃষকলীগের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল মোল্যার (৪৫) বাড়িতে কান্নার আওয়াজে ভারি হয়ে উঠেছে। নিহতের ১৫ বছর বয়সি ইয়াছিন নামে একটিমাত্র সন্তান রয়েছে।

নিহতের মা জরিনা বেগম (৭০) ছেলে হত্যার বিচার ফাঁসির দাবি করেছেন। নিহত খায়রুল মোল্যার মেয়ে রাবেয়া বেগম বাড়ির উঠানে গড়াগড়ি করে কেঁদে বলেন, ‘ঈদের দিন আমি শ্বশুর বাড়ি মধুখালি থেকে বাবার বাড়ি গোহাইলবাড়ি আসছিলাম। বাবা আমাকে এগিয়ে আনতে দুপুরে বাড়ি থেকে বের হন।

তখন গোহাইলবাড়ি গ্রামের আরিফসহ তার অনুসারীরা আমার বাবাকে ‘ঢাল, সড়কি, রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। নিহত খায়রুল মোল্যার কয়েকটি বাড়ির পরেই প্রতিপক্ষের অতর্কিত হামলায় নিহত আকিদুল শেখের (৪৬) বাড়ি। আকিদুল শেখের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তার নির্মম হত্যাকাণ্ডে পরিবার ও প্রতিবেশীরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।

গত দুই বছর আগে জন্মের সময় মা মারা যাওয়া আকিদুলের মেয়ে আছিয়ার বয়স মাত্র ২ বছর। মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত আছিয়া এখনো জানে না তার বাবাও আর এই পৃথিবীতে নেই। আকিদুল শেখের ৪ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আজিজের বয়স পনের বছর, মেজো ছেলে রিয়াজুলের বয়স চৌদ্দ বছর, সেজো ছেলে মমিনের বয়স দশ বছর এবং ছোট ছেলে মোস্তাকিনের বয়স সাত বছর। এতিম হয়ে পড়া এই পাঁচ শিশুর দায়িত্ব নিজের কাঁধে পড়ায় তাদের ভবিষ্যত এবং ভরনপোষণের কথা ভেবে নির্বিকার আকিদুলের ৭০ বছর বয়সি অসুস্থ মা।

গত বুধবার সন্ধ্যায় বোয়ালমারী থানার ওসি মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, হামলায় নিহত দুইজনের লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাবাদের জন্য এলাকা থেকে ৫জনকে আনা হয়েছে। এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহতের ঘটনাস্থল ফরিদপুর পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান (বিপিএম) ও সহকারী পুুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) সুমন কর পরিদর্শন করেছেন। থানায় এখনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি।