যৌতুকের দাবিতে শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে স্ত্রী লিপি আক্তারকে মারপিট করার সময় আটকাতে গেলে শাশুড়ি এসমা বেগমকে মেরে মাথা ফাটিয়েছেন পাষণ্ড জামাই খাদেমুল ইসলাম (৩৫)।
এ সময় প্রতিবেশিরা ছুটে গিয়ে লিপি আক্তার ও তার মা এসমা বেগমকে উদ্ধার করে। এরপর আহত অবস্থায় এসমা বেগমকে জেলা সদরের জেনারেল হাসপাতালে এনে ভর্তি করেছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (৫ মে) বিকেলে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের চর সিতাইঝার গ্রামের ভাটলারপাড় স্লুইচ গেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার দিনগত মধ্যরাতে আহত এসমা বেগমের পুত্র নাজমুল হক বাদি হয়ে খাদেমুল ইসলামকে আসামি করে যৌতুকের দাবিতে মারপিট করার অভিযোগ এনে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
মামলা দায়েরের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে শুক্রবার (৬ মে) ভোররাতে খাদেমুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। এরপর দুপুরের দিকে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খান মো. শাহরিয়ার।
জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এসমা বেগম জানান, দুই বছর আগে চর সিতাইঝার গ্রামের অধিবাসী মৃত খবির উদ্দিনের পুত্র খাদেমুল ইসলামের সঙ্গে তার কন্যা লিপি আক্তারের বিয়ে হয়। তাদের একটি এক বছর বয়সী পুত্র সন্তান রয়েছে।
তিনি আরও জানান, বিয়ের পর খাদেমুলকে যৌতুক হিসেবে দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়। এর এক বছর পর খাদেমুল আরও এক লাখ টাকা ও একটি মোটরসাইকেল দাবি করে স্ত্রী লিপি আক্তারসহ তাদের চাপ দিতে থাকে। তার এ দাবি পূরণে অস্বীকৃতি জানালে লিপির ওপর শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
এ অবস্থায় স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে চলতি বছরের গত ২৯ মার্চ লিপি আক্তার তার বাবার বাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু তাতেও রেহাই পায়নি লিপি আক্তার।
বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে খাদেমুল শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে আবারও লিপি আক্তারকে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে। এরই এক পর্যায়ে কাঠের লাঠি দিয়ে লিপিকে পেটাতে থাকে খাদেমুল। এ সময় শাশুড়ি এসমা বেগম তার কন্যা লিপিকে পেটানোর হাত থেকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে খাদেমুল। এতে এসমা বেগমের মাথা ফেটে যায়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মায়ের পাশে থাকা লিপি আক্তার বলেন, ছোট একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। তারপরও যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করে আসছে তার স্বামী খাদেমুল। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পিতার বাড়িতে এসেও রেহাই পাননি। এমনকি মেরে তার মায়ের মাথা ফাটিয়েছে। এ জন্য স্বামী খাদেমুলের বিচার চান তিনি।
এ বিষয়ে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খান মো. শাহরিয়ার জানান, এসমা বেগমের পুত্র বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (গ) এবং পেনাল কোডের ৩২৫ ও ৩০৭ ধারায় রেকর্ড করা হয়েছে (মামলা নং-৫, তাং-৬ মে, ২০২২)। এছাড়া আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।