দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বছরে তিন সেমিস্টারের পরিবর্তে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হচ্ছে। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ইতোমধ্যে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান বাড়ানো ও শিক্ষার্থীরা যেন আরো ভালোভাবে হাতেকলমে শিখতে পারেন সেজন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে ইউজিসি জানিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে জাবি শিক্ষার্থীকে মারধর, প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

গতকাল মঙ্গলবার (১৭ মে) ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ওমর ফারুখ বলেন, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হবে। এতে শিক্ষার মান বাড়বে। শিক্ষার্থীরা প্রায়োগিক দিকগুলোতে দক্ষতা অর্জন করবে।

তিনি আরো বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে মাত্র একবার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সারা বছর ধরে শিক্ষার্থীকে ভালোভাবে বিষয়গুলো আত্মস্থ রপ্ত করার সময় দেওয়া হয়। উন্নত দেশগুলোতে বছরে ‘স্প্রিং’ ও ‘ফল’ এ দুটি সেমিস্টার। আর আমাদের দেশে বছরে তিনটি- স্প্রিং, ফল ও উইন্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। প্রতি চার মাসে একটি সেমিস্টার। একটি সেমিস্টারের পাঠ ভালোভাবে রপ্ত করার আগেই আরেকটি চলে আসে। এভাবে চাকরি বাজারে শিক্ষার্থীরা গিয়ে দক্ষতায় পিছিয়ে পড়ে। আবার প্রতি সেমিস্টারে শিক্ষার্থীকে নতুন করে ভর্তি হতে বিপুল অঙ্কের টাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিশোধ করতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন যে যার মতো করে পড়াতে না পারে এবং একটা স্ট্যান্ডার্ড গাইড লাইন অনুসরণ করে শিক্ষাদান কর্মসূচি পরিচালনা করে সেজন্য ইউজিসি এখন থেকে কঠোর অবস্থানে যাবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, মূলত বাণিজ্যিক কারণেই প্রাইম সেমিস্টার পদ্ধতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ দেশে চালু করেছে। কেবল বাজার ও বাণিজ্যমুখী বিষয়গুলোকেই অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশেষ করে যে বিষয়গুলো চাকরির বাজারে গুরুত্বপূর্ণ বা চাহিদাসম্পন্ন, সেগুলোই পড়ানো হয়। বাংলা, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, অর্থনীতি এমনকি পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিতের মতো বিষয়ও অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুরুত্বহীন। এসব কারণেও সেমিস্টার কমাতে চায় ইউজিসি। কারণ বাণিজ্যনির্ভর বিষয়গুলোর পাঠে কোনো ‘নৈতিক’ ও ‘আদর্শিক’ বিষয় থাকে না।

এ বিষয়ে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমি বরাবরই সেমিস্টার পদ্ধতির বিপক্ষে। আগের ইয়ার সিস্টেমই ভালো ছিল।

একজন শিক্ষার্থী চার বা ছয় মাসে মাত্র দুটি কোর্স পড়বে। স্বাভাবিক কারণে তারা প্রচুর অবসর সময় পাবে। এতে কেউ কেউ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকসহ নানা অপতৎপরতায় জড়াবে- এটাই স্বাভাবিক। তাই পুরো পদ্ধতিরই খোলনলচে পাল্টে ফেলা জরুরি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউজিসি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে তিন সেমিস্টার পদ্ধতির লাগাম টানার উদ্যোগ নিয়েও অনেকটা ব্যর্থ হয়েছে।

কমিশন দুই সেমিস্টার পদ্ধতির নির্দেশনা দিয়ে এর আগে কয়েক দফা সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল। তবে এবার কমিশন এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আর নতুন যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে, সেগুলোতে শুরু থেকেই দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালুর নির্দেশ দিয়েছে।

ইউজিসি একই সঙ্গে পূর্ণকালীন প্রোগ্রামে নূন্যতম চারটি কোর্স-সংবলিত বছরে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালুর কথা বললেও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চারটি কোর্স পড়ানোর জন্য ইউজিসির প্রস্তাবটি ভুল। ছয় মাসে একটি সেমিস্টার হলে প্রতি সেমিস্টারে কমপক্ষে ছয়টি কোর্স পড়াতে হবে। নইলে তো চার বছরে অনার্স শেষ হবে না। পাঁচ বছর লেগে যাবে।