পার্বত্য চট্টগ্রামের নানিয়ারচর উপজেলায় চেঙ্গী নদীতে নির্মিত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দীর্ঘতম সেতু। ৫০০ মিটার দীর্ঘ এই সেতু যেনো পার্বত্য চট্টগ্রামের আর একটি পদ্মা সেতু।

বুধবার (১২ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর এই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলও শুরু হয়েছে। সেতুর মাধ্যমে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার নানিয়ারচর, লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলার যোগাযোগ, ব্যবসা বাণিজ্য এবং পর্যটনের নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।

জানা যায়, ২০১৫ সালে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চেঙ্গী নদীতে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ঘোষণা বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৭ সালে। সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণে কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮ সালে। মাত্র তিন বছর সময়েই সেতুটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন এবং উদ্বোধন হয়েছে।

সেতুটি সফলভাবে নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের ২০ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন (ইসিবি)। এর দৈর্ঘ্য ৫০০ মিটার। এপ্রোচ সড়কসহ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২২৭ কোটি টাকা।

নানিয়ারচরের স্বপ্নের এই সেতুর নির্মাণকারী ২০ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন (ইসিবি)র প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর মো. মিজানুর রহমান ফকির জানান, এই সেতুটি পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতু। এই সেতুর মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে রাঙামাটি জেলা সদরের সঙ্গে নানিয়ারচর, লংগদু, বাঘাইছড়ি উপজেলার সহজ সংযোগ স্থাপন। সেতুটির কারণে এই অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্য, পর্যটন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন স্বপ্ন দুয়ার খুলে গেলো।

নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা বলেন, এই সেতুটি এক সময় আমাদের স্বপ্ন ছিলো। সেতুটির কারণে তিন উপজেলার নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। একটি সেতুর অভাবে মূল জেলা সদরের সাথে বিচ্ছিন্ন ছিলো লংগদু ও বাঘাইছড়ি। এখন নানিয়ারচর, লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলার পারস্পরিক সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। সরাসরি উপকৃত হয়েছে প্রায় ১০ লাখের বেশি মানুষ।

লংগদু উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা কৃষি খামারি জয়সেন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, পাহাড়ে কলা, আনারস, কাঁঠালসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন হয়। কিন্তু নানিয়ারচর চেঙ্গী নদীতে সেতু না থাকায় নৌপথে অনেক কষ্ট সাধ্য করে আমাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে হতো। এখন সেতু নির্মিত হওয়ায় আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি। আমরা সহজ যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং উৎপাদিত সামগ্রী বাজারজাত করতে পারবো।

সেতুটি দেখতে আসা নানিয়ারচরের কলেজ শিক্ষার্থী শুভদীপ চাকমা বলেন, আমাদের প্রতিদিন নদী পারাপার হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বাজার করতে যেতে হতো। কখনো খেয়াঘাটে নৌকা থাকতো কখনো থাকতো না। রাত হলে থাকতো না কোন পারাপারের ব্যবস্থা। আমাদের বছরের পর বছর যে দুর্ভোগ পোহাতে হতো আজ সেই দুর্ভোগ থেকে আমরা মুক্তি পেলাম।