দিনাজপুরের খানসামায় সূর্য উঠার সাথে সাথেই ভোরের কুয়াশামাখা শীত উপেক্ষা করে সন্ধ্যা অবধি বোরো চাষের জমি প্রস্তুত ও চারা রোপণ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। বোরো চাষের মধ্যেই আগামীর স্বপ্ন বুনছেন তারা।
শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি এলাকায় ইরি-বোরো ধানের চারা রোপনের কাজ শুরু হয়েছে পুরোদমে। কৃষকদের যেন দম ফেলার সময় নেই।নাওয়া-খাওয়া নেই তাদের ঠিকমত। কৃষকদের মধ্যে কেউ চারা রোপণ করছেন,আবার কেউ জমিতে হালচাষ করছেন। আবার কেউ কেউ বোরো চাষে জমির আইল কোদাল দিয়ে সমান করা, সেচের জন্য ড্রেন নির্মাণ, গভীর নলকূপ থেকে পানি সেচ, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে হালচাষ, মই দিয়ে চলছে মাঠ সমান করার কাজ,সার প্রয়োগ, বীজ উঠানো ও প্রস্তুতকৃত জমিতে চারা রোপণ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আমন ধানের ভালো ফলন এবং ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের বোরো আবাদে এবার আগ্রহ বেড়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, সঠিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলে চলতি মৌসুমেও ইরি-বোরোতে বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। ছাতিয়ান গড় গ্রামের কৃষক নূরনবী, শফিকুল শাহজালাল ও একরামুল বলেন, বর্তমানে বোরে ধান গারিছি। এখন হামরা খুব ব্যস্ত আছি। অনেক পরিশ্রম করতাছি।
ভেড়ভেড়ি ইউনিয়নের সহজপুর গ্রামের কৃষক সাকিব, ওসমান গনি ও হবিবর বলেন, শ্রমিকের মজুরি খরচও বেশি। কাজের লোকের অভাবে নিজেরাই ধান লাগাইতাছি। বোরো চাষে অনেক টাকা খরচ হইতাছে।
ধান লাগানোর শ্রমিক হাচিনুল,মোফাজ্জল,ছায়েদসহ আরও ককেকজন শ্রমিক বলেন,বোরো ধান লাগাইতাছি। এখন হামার অবসর নাই। কিন্ত ৫শ ৬শ টাকা কাঠা বোরো লাগানোতে হামার পোষায় না। বাজারে এখন সবকিছুর দাম বেশী।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ২৯৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ২৯৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছি। বোরো চাষাবাদের জন্য হাইব্রিড ৫৫০ হেক্টর, উফশি ২৩৯০ হেক্টর জমিতে রোপনের জন্য বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। হাইব্রিড ৩০ হেক্টর, উফশি ১৫০ হেক্টর, এ পর্যন্ত ১৮০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এখন পযন্ত অর্জিত হয়েছে ২০০ হেক্টর জমিতে। কৃষকরা যেনো সঠিকভাবে বোরো চাষ ও পরিচর্যা করতে পারে সেজন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দিচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার হাবিবা আক্তার বলেন, খানসামা সবসময় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা আশা করি এইবারও বোরোর বাম্পার ফলন হবে। তাতে চাহিদা মিটিয়ে বাহিরে রপ্তানি হবে।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আ.হ.ম. জাহেদুল ইসলাম বলেন, এবার ২৯৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব রায় বলেন, ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। কৃষকদেরকে আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি সহ সকল প্রকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূলে থাকলে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।