নতুন নির্বাচন গঠন প্রক্রিয়ার শুরু থেকে সবকিছু বর্জন করে আসা বিএনপিকে সার্চ কমিটির সঙ্গে আলাপ করতে এবং নাম দিতে পরামর্শ দিয়েছেন দলটির সমর্থিত বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে বি‌শিষ্টজ‌নের সঙ্গে সার্চ কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকের পর সেখান থেকে বেরিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন জাফরুল্লাহ।

তিনি বলেন, বিএনপিসহ যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচন গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছে না, সার্চ কমিটির তাদের সাথে আবারো চেষ্টা করা উচিত।

জাফরুল্লাহ বলেন, সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন তারা করতে থাকুক, কিন্তু একটি নির্বাচন তো লাগবে। নির্বাচন কমিশনের যদি ভালো লোক, সাহসী লোক না যায় তাহলে সরকার পরিবর্তন হলে লাভ হবে না। সেজন্য তাদেরকে আবারো আপনারা (সার্চ কমিটি) চেষ্টা করে দেখেন আলাপ-আলোচনা করে।

নতুন নির্বাচন গঠন প্রক্রিয়ায় বিএনপির অংশ নেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

‘বিএনপির নাম দিতে বা আলাপ করতে দোষ কোথায়? আমি মনে করি তাদের আলাপ করা উচিত।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন এবং নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সাবেক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, সুজনের বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভুঁইয়া, সাবেক সচিব শওকাত আলী, খালেদ শামস, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল ও সাবেক আইন সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালের নাম প্রস্তাব করেছেন বলেও জানান জাফরুল্লাহ।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এমন লোক যাতে নির্বাচন কমিশনার হয় সেই বিষয়ে সার্চ কমিটির কাছে দাবি রেখেছি।

অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো)’র সিনিয়র-সভাপতি ও একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক বাবু বলেন, বিভক্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ঐক্যমত্য করা মুশকিল। সমাজের একটা অংশ এবং একটি রাজনৈতিক দল যখন এই প্রক্রিয়ার বাইরে তখন আপনার বাড়তি দায়িত্ব যাতে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা তালিকা প্রকাশ করতে পারেন। কারণ যারা বর্জন করছে তারা তো বিরোধিতা করবেই। এজন্য আরো বেশি সতর্ক থাকতে বলেছি যাতে নামগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক না থাকে।

‘‘আমরা বলেছি, যাদেরকে নির্বাচন করবেন অন্তত কদিন আগে মিডিয়ায় দেয়ার জন্য। কারণ মিডিয়া যদি নামটি জানতে পারে, তাদের সম্পর্কে গণমানুষের কোনো অভিযোগ কিংবা অতীত যদি থাকে; যেটা পরে নির্বাচিত হয়ে গেলে কেলেঙ্কারির একটা কারণ হয়। সেদিকে ওনারা বিবেচনা করবেন বলে বলেছেন।”

মোজাম্মেল বাবু বলেন, এছাড়া ধর্মীয় ও জাতিগত দিক দিয়ে সংখ্যায় কম এবং নারী যারা নির্বাচনে সহিংসতার সম্মুখীন হয় বেশি সেখানে তাদের প্রতিনিধি থাকলে তারা ভোটদানে সাহস পাবে। আমরা কোনো আর্মি, পুলিশ প্রশাসন জুডিশিয়ালি এ সংক্রান্ত বিভাজনে না গিয়ে সিভিল সোসাইটি অবসরপ্রাপ্ত যে কোনো কর্মকর্তা ১০ জনের নাম গ্রহণ করতে বলেছি। গণমাধ্যম থেকেও একজন, ‍দু’জনকে নির্বাচন করতে বলেছি। কেননা গণমাধ্যম নির্বাচন ও নির্বাচন প্রক্রিয়া অত্যন্ত কাছের থেকে দেখে।

ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্ট করে কারো নাম বলিনি। এই নির্বাচন কমিশনের ওপর গুরু দায়িত্ব রয়েছে এজন্য যে, বিগত নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে নানা বিতর্ক ছিলো এবং আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন করতে হলে একই সঙ্গে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন দরকার, যেটি করার দায়িত্ব হলো এই সার্চ কমিটি।

সংখ্যালঘু, গণমাধ্যম এবং সমাজে অবহেলিত যারা অংশ আছে সিভিল সোসাইটিতে ভালো ভূমিকা রাখছে প্রস্তাবে তাদের নাম আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যাদের বিতর্ক আছে; স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্ক আছে- এমন কোনো লোক যাতে এই কমিটিতে না আসে। আমরা বলেছি, এমন ১০টি নাম আপনারা পাঠাবেন সেই নামগুলোর মধ্যে এমন নাম থাকা উচিত যারা আমাদের একটি ভালো নির্বাচন উপহার দেবেন।’

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সাবেক সভাপতি এবং দৈনিক সমকালের প্রকাশক একে আজাদ বলেন, আইনের মাধ্যমে প্রথম একটি সার্চ কমিটি হয়েছে তারা সবাই বিতর্কের ঊর্ধ্বে। আমরা চেয়েছি মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করা হবে রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তিনি এই ১০ জনের বাইরে যেতে পারবেন না। সেজন্য এমন যাদের নাম প্রস্তাব করা হবে তারা যেন যোগ্যতা সম্পন্ন, ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন হয় সেগুলো ভালো করে যাচাই-বাছাই করো উচিত।

দৈনিক যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলে, সার্চ কমিটি আমাদের কাছে আশ্বস্ত করেছেন, ১০ জন হোক অথবা যতোগুলো নাম এসেছে যেকোনো একটি গণমাধ্যমে প্রকাশ করবেন।

রোববার বিশিষ্ট আরও ২০ জনের সঙ্গে বৈঠক করবে সার্চ কমিটি।

‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন’ গত ২৭ জানুয়ারি সংসদে পাস হওয়ার পর সে আইনের আলোকে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয় ৫ ফেব্রুয়ারি।

আইন অনুযায়ী, ইসি গঠনে নামের সুপারিশ চূড়ান্তের জন্য সার্চ কমিটির জন্য সময় ১৫ দিন। সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানের জন্য যোগ্য সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের খোঁজে আইন অনুযায়ী কাজ করছে।