‘প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী উন্নত দেশগুলোকে এ খাতে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি বিনিময়ে তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতেই হবে। ঘানার নেতৃত্বে, সিভিএফ-এর ট্রেডমার্ক নৈতিক শক্তি এবং যৌক্তিক দাবি উপস্থাপনের মাধ্যমে অমীমাংসিত দাবি আদায়ে তাদের ওপর জোর অব্যাহত রাখতে হবে।’
চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেও বিশ্বকে জলবায়ু সমস্যা থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে দেয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আর তাই প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী উন্নত দেশগুলোকে এ খাতে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি বিনিময়ে তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি আদায়ে সিভিএফকে আরও ভূমিকা রাখতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে থাকা ৫৫টি দেশের সংগঠন ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম। ২০২০ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সংগঠনটির নেতৃত্ব পায় বাংলাদেশ। এবার জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত আফ্রিকার দেশ ঘানার হাতে যাচ্ছে সিভিএফ-এর নেতৃত্ব।
ঢাকায় বুধবার সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আডোর হাতে দায়িত্ব তুলে দেন সিভিএফ-এর বিদায়ী প্রেসিডেন্ট শেখ হাসিনা।
দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সিভিএফ-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দেড়শ কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের জরুরি অবস্থার মুখে পড়েছে। চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও, আমরা বিশ্বকে জলবায়ু সংকট থেকে মনোযোগ সরিয়ে দিতে পারি না।
‘প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী উন্নত দেশগুলোকে এ খাতে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি বিনিময়ে তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতেই হবে। ঘানার নেতৃত্বে, সিভিএফ-এর ট্রেডমার্ক নৈতিক শক্তি এবং যৌক্তিক দাবি উপস্থাপনের মাধ্যমে অমীমাংসিত দাবি আদায়ে তাদের ওপর জোর অব্যাহত রাখতে হবে।’
২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো সিভিএফ-এর দায়িত্ব গ্রহণ করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বস্তির কথা হলো, এই সমেয় আমাদের বেশিরভাগ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে আমরা সফল হয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আনন্দের সঙ্গে ঘানার হাতে সিভিএফ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব অর্পণ করছে। এ আয়োজনে উপস্থিত থাকায় আমি দেশটির প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আডোকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
জলবায়ুসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আলোচনায় সিভিএফ এখন গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির জন্য সম্মিলিত কণ্ঠস্বর হিসেবে গড়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি। সিভিএফ সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি তার প্রমাণ।
‘শুরু থেকে কপ২৬-এর সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের মনোযোগ ছিল। মহামারির মধ্যেও আমরা জলবায়ু সংকটের দিকে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা তাদের এনডিসি (কার্বন নিঃসরণ বিষয়ক জাতীয় নির্ধারিত অবদান) জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। প্রায় ৭০টি দেশ আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে।’
সিভিএফ-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপে সহায়তা দিতে সিভিএফ-ভি২০ জয়েন্ট মাল্টি-ডোনার তহবিলও তৈরি করা হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ এতে প্রাথমিক বরাদ্দ দিয়েছে। ২০২১ সালে আমরা ক্লাইমেট ভালনারেবলস ফাইন্যান্স সামিট করেছি। এটি পরবর্তী পাঁচ বছরে শত বিলিয়ন ডলার জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ পেতে সহায়তা করবে। গ্লাসগোতে তা আমরা উপলব্ধি করেছি।’ ঢাকা-গ্লাসগো ঘোষণাকে সিভিএফ-এর মূল দাবি এবং প্রতিশ্রুতির সারসংক্ষেপ বলেও উল্লেখ করেন ফোরামের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট।
তিনি বলেন, ‘আমরা (কার্বন) উচ্চ-নিঃসরণকারী দেশগুলোর তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি বজায় রাখা এবং প্রতি বছর জলবায়ু খাতে উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়াতে আমাদের দাবির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছি। আমরা জলবায়ুর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে অভিযোজন খাতে অর্থায়ন বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক সংলাপের জন্য প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবাধিকার ইস্যুতে যারা উচ্চকিত, তাদের কাছে আমাদের উচ্চাশা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুতি এবং অভিবাসন ইস্যুতে আমাদের পারস্পরিক সমর্থন অক্ষুণ্ণ থাকবে। জলবায়ু ইস্যুতে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সিভিএফ-ভি২০ সংসদীয় গ্রুপ।’
সিভিএফ-এর পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু চ্যালেঞ্জকে স্থিতিস্থাপকতা এবং সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়াটা হবে আমাদের প্রেসিডেন্সির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক, এটা আমি বিশ্বাস করি। বাংলাদেশে আমরা মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা তৈরি করছি। আমরা বিশ্বাস করি, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা অন্য দেশগুলোও এটি থেকে তাদের নিজস্ব প্রেক্ষাপটে পরিকল্পনা গ্রহণের একটা ভিত্তি পাবে।’
তিনি বলেন, ‘ট্রোইকার সদস্য হিসেবে ঘানাকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেবে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের সাবেক ও প্রয়াত মহাসচিব কফি আনানের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগের কথা আমি স্মরণ করছি। আমি নিশ্চিত যে, সিভিএফ-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ঘানার এই সম্পর্ক দেখে তিনি খুশি হতেন।’
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।