ঘৃণা, সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর অভিযোগের ভিত্তিতে ফেসবুকের নিষিদ্ধ করা সংগঠন ও ব্যক্তির একটি তালিকা প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দি ইন্টারসেপ্ট। গোপন এই তালিকার নাম বিপজ্জনক ব্যক্তি ও সংগঠন (ডেঞ্জারাস ইন্ডিভিজ্যুয়াল অ্যান্ড অর্গানাইজেশন—ডিআইও)। পাঁচটি শ্রেণিতে করা এই বিশাল তালিকায় রয়েছে চার হাজারের বেশি ব্যক্তি, সংগঠন ও গোষ্ঠীর নাম।
বাংলাদেশ-সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সংগঠন ও একজন ব্যক্তির নাম রয়েছে এতে। ফেসবুকের তালিকার পাঁচটি শ্রেণি হচ্ছে ঘৃণা, সশস্ত্র সামাজিক আন্দোলন, সহিংস অরাষ্ট্রীয় সংগঠন, অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদ। এ তালিকায় বিভিন্ন ধর্ম ও মতাদর্শের উগ্রপন্থী হিসেবে পরিচিত সংগঠনের পাশাপাশি রয়েছে রাজনীতিক, আন্দোলনকর্মী, লেখক, বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ও বিদ্বেষমূলক সংগীতদলের সদস্যসহ অনেক ব্যক্তি। বিশ্বের সব প্রধান উগ্রপন্থী সংগঠনসহ বহুসংখ্যক সংগঠনের নাম রয়েছে তালিকায়।
এর মধ্যে রয়েছে আল-কায়েদার সেন্ট্রাল কমান্ড এবং এর আঞ্চলিক শাখাগুলো, ইসলামিক স্টেট, আল শাবাব, বোকো হারাম, আল নুসরা ফ্রন্টসহ অনেক সংগঠন। লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মুহাম্মদসহ ভারত ও পাকিস্তান তথা দক্ষিণ এশিয়া কেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠনের নামও রয়েছে। আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের শিখ ও বৌদ্ধ ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠনের নাম।
পাশ্চাত্যের শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী সংগঠনের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কু ক্লাক্স ক্লান (কেকেকে) এবং যুক্তরাজ্যের ইংলিশ ডিফেন্স লীগ ছাড়াও ইউরোপ-আমেরিকার বহু সংগঠন ও বাহিনীর নাম। তালিকার সন্ত্রাস শ্রেণিতে রয়েছে আল মুরসালাত মিডিয়া। বলা হয়েছে, এটি বাংলাদেশ ও ভারত অঞ্চলে সক্রিয় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আছে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ ও জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের নাম।
বলা হয়েছে, প্রথম সংগঠনটি আল-কায়েদার কেন্দ্রীয় কমান্ডের সঙ্গে যুক্ত। তালিকায় আরো রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানভিত্তিক জেমাহ ইসলামিয়া ও আল-কায়েদা কেন্দ্রীয় কমান্ডের সঙ্গে যুক্ত সাহাম আল হিন্দ মিডিয়ার নাম। এটি আল-কায়েদার মিডিয়া উইং বলে তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকায় ব্যক্তি হিসেবে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের জনৈক তরিকুল ইসলামেরও নাম রয়েছে।
আছে আনসার আল ইসলামের সঙ্গে যুক্ত বলে কথিত আব্দুল রউফ আবু জাহিদ মোহাম্মদ হামজা এবং হরকাতুল মুজাহিদীনের ফজলুর রহমান খলিলের নাম। দি ইন্টারসেপ্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালিকার একটি বড় অংশ মার্কিন সরকারবিরোধী ডানপন্থী মিলিশিয়া, যাদের প্রায় সবাই শ্বেতাঙ্গ। প্রতিবেশী দেশ ভারত, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কার কয়েকটি ধর্মীয় ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের নামও এ তালিকায় স্থান পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুকের এই তালিকা প্রকাশের জন্য দাবি জানিয়ে এলেও কম্পানিটি বলে আসছিল, এতে করে তাদের কর্মীরা ঝুঁকিতে পড়বেন।
তবে কম্পানিটির নিজেদেরই ওভারসাইট বোর্ড জনস্বার্থে তালিকাটি প্রকাশের সুপারিশ করেছিল। ব্রেনান সেন্টার ফর জাস্টিসের স্বাধীনতা ও জাতীয় নিরাপত্তা কর্মসূচির সহপরিচালক ফাইজা প্যাটেল বলেন, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কঠিন এক অবস্থায় ফেলেছে। তারা বলছে যে বিপজ্জনক সংগঠন ও ব্যক্তি সম্পর্কে পোস্ট করা যাবে না, কিন্তু কোন সংগঠন বা ব্যক্তিকে ফেসবুক বিপজ্জনক মনে করে, তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে না। ফেসবুকের বিপজ্জনক ব্যক্তি ও সংগঠন নীতি অনুসারে মাধ্যমটির কোনো ব্যবহারকারী এসব ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর পক্ষে কিংবা সমর্থন অথবা প্রশংসা করে কিছু লিখতে পারবে না।
ফেসবুকের সন্ত্রাস দমন ও বিপজ্জনক সংগঠন বিষয়ক নীতিবিষয়ক পরিচালক ব্রায়ান ফিশম্যান টুইটে বলেন, ‘কম্পানি এই তালিকা গোপন রাখে, কারণ এটি একটি বৈরিতাপূর্ণ ক্ষেত্র। আমরা সন্ত্রাসী, বিদ্বেষী গোষ্ঠী ও অপরাধী সংগঠনকে এ প্ল্যাটফর্মে চাই না।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেসবুকের কালো তালিকার ৫৩.৭ শতাংশ নাম সন্ত্রাসবাদ,
২৩.৩ শতাংশ সশস্ত্র সামাজিক আন্দোলন, ১৭ শতাংশ বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়ানো, ৪.৯ শতাংশ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এবং ১ শতাংশ সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ফেসবুকে অপপ্রচার ও বিভিন্ন ধরনের সাইবার ক্রাইম নিয়ে আমরা কাজ করি।
আমাদের মনিটরিং সেল ও ভেরিফিকেশন সেল আছে। মনিটরিং সেল সাইবার অপরাধগুলো দেখে। ভেরিফিকেশন সেল থেকে গুজব বা কোনো তথ্য যাচাই করা হয়। তথ্য প্রয়োজন হলে বিটিআরসির মাধ্যমে আমরা ফেসবুকের সহায়তা চাই। ফেসবুক যদি সন্দেহজনক কোনো আইডি বা পেজ শনাক্ত করে তা বন্ধ করে দেয়, সেটি তাদের বিষয়।’
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।