রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারের (সাহিত্যে) জন্য মো. আমির হামজা নামের অচেনা এক ব্যক্তিকে মনোনীত করার পর বিতর্কের মুখে সেটি আবার বাতিল করেছে সরকার। আমির হামজাকে বাদ দিয়ে শুক্রবার সংশোধী প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তালিকা প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এবার আমির হামজার কর্ম নিয়ে যারা ভুল তথ্য দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার।

শনিবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

মন্ত্রী বলেন, এ ঘটনায় যারা ভুল তথ্য দিল- তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে জড়িতদের শোকজ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বলা হয়েছে। এ ছাড়া তাকে কেন পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হলো- সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইতে কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

গত ১৫ মার্চ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় ১০ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে চলতি বছরে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। তাতে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয় প্রয়াত আমির হামজাকে। অচেনা এই ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননায় ভূষিত করায় অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিতর্কের পর আমির হামজার লেখা ‘বাঘের থাবা’, ‘পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি’ ও ‘একুশের পাঁচালি’ নামে তিনটি বইয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে।

মরণোত্তর পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক আমির হামজার বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বরিশাট গ্রামে। ওই গ্রামসহ সারাজেলার মানুষের কাছে তিনি পালাগানের শিল্পী কিংবা কবি হিসেবে পরিচিত। তবে বরিশাট গ্রামে ১৯৭৮ সালে শাহাদত ফকির নামে একজন কৃষক এবং শিল্পী নামে আড়াই বছরের একটি শিশু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সর্বশেষ ২০০৭ সালেও স্থানীয় একটি গ্রাম্য মারামারির ঘটনায় তিনি আসামি ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় তারা দুই ভাইসহ মোট ৬ জনের কারাদণ্ড হয়। আট বছর জেল খাটার পর ৯১ সালের দিকে বিএনপি সরকার গঠন করলে মাগুরার মন্ত্রী মজিদুল হকের সহায়তায় বেরিয়ে আসেন তারা। ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ সাধারণ ক্ষমা পান এই আমির হামজাও।

আমির হামজার ছেলে আসাদুজ্জামান সরকারি কর্মকর্তা। খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন তিনি। এ বিষয়ে আসাদুজ্জামানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি যুগান্তরকে বলেছেন, তার বাবা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন ঘটনাটি সত্য।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০২০ সালেও সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সেটি বাতিল করেছিল সরকার। ওই বছর অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা এসএম রইজ উদ্দিন আহম্মদকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল। সে সময় এ ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।