যানজট নিরসনে দায়িত্ব কেউ নিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।
তিনি বলেন, আমাদের সরকারি সংস্থাগুলো যদি রাস্তায় গাড়ি রাখে, আপনারা পার্কিংয়ের কথা বলছেন? কাকে পার্কিংয়ে বাধা দেবেন তাহলে? সরকারের দায়িত্বটা কে নেবে এটা আমি বুঝতে পারলাম না।
সোমবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানী সেগুনবাগিচা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘অসহনীয় যানজট: সমাধান কী’ ডুরা সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি।
নিরাপদ সড়ক চাই এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আমি চিন্তা করছিলাম এখানে এসে আমি গাড়িটা রাখবো কোথায়। আপনাদের এখানে কি পার্কিংয়ের সুবিধা আছে।
ইলিয়াস কাঞ্চন দাবি করে বলেন, মন্ত্রী সাহেব যে গাড়ি রেখে এসেছেন, তিনি কি পার্কিংয়ে রেখে এসেছেন? মন্ত্রী সাহেব তো রাস্তার ওপর গাড়ি রেখে এখানে চলে এসেছেন।
তিনি বলেন, মন্ত্রীর বক্তব্য আমি শুনছিলাম। তিনি বলছিলেন, করতে হবে? কিন্তু কে করবে? আমাদেরও দায়িত্ব আমরা পালন করছি না। আমরা শুধু বলে যাচ্ছি করতে হবে। কিন্তু আমরা কেউ দায়িত্ব নিচ্ছি না।
ইলিয়াস কাঞ্চন আরও বলেন, এই যে আপনারা বললেন সকলে মিলে করতে হবে, এখন একটা জিনিস আমরা করতে পারি। সেটি হলো আপনারা পুলিশ দিয়ে রাস্তার উল্টাপাশে দিয়ে চলে যেতে পারেন। আমরা এটা বন্ধ করে দিব, নিজেদের গাড়ি নিয়ে রাস্তার মধ্যে ২-৩ দিন বসে থাকবো । উনারা যখন যেতে পারবে না তখন সমাধান হবে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আপনারা শুধু বলেন-১৩বছর ধরে আছেন। ১৩ বছর ধরে তো আমরা শুধু ধুলাবালি, এয়ারপোর্ট রোডের ওপর পাঁচ বছর ধরে একটা পিলার ফেলে রেখে দিয়েছেন। কেন পিলার ফেলে রেখেছেন এতদিন ধরে। কাজটি তো প্রপারলি করতে হবে।
তিনি বলেন, একটা দেশের উদাহরণ দিতে পারবেন। যে একটা প্রকল্প পাঁচ বছরের শেষ করবেন। কিন্তু কন্টাকটার শেষ করবে না, ইঞ্জিনিয়ার শেষ করবে না, কিন্তু তাকে উল্টা আবার টাকা দেবেন। এমন পৃথিবীর কোথায় আছে? শুধু লন্ডনের উদাহরণ দিলে হবে না। লন্ডনের তো রাস্তার ওপরে এভাবে গাড়ি রেখে দেয় না।
তিনি আরও বলেন, মেয়র সাহেবের যে বাস রেশনালাইজেশন, সেটা কি হয়েছে? তাহলে কেমনে হবে এই যানজটের সমাধান।
তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের উদাহরণ দিয়ে বলেন, নারায়ণগঞ্জের পুলিশ কমিশনার বলেছেন। এবং সেখানে যানজট নিরসন করেছেন তিনি। চেষ্টা থাকতে হবে। সেখানে তারা ফুটপাত থেকে দোকানপাট উঠিয়েছেন।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, এখনো আমাদের যে রাস্তা, গাড়ি ও মানুষ আছে, সেটা সুচারুরূপে ব্যবস্থাপনা করা গেলে আমরা স্বস্তির সঙ্গে চলাচল করতে পারব।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ফুটপাতের উপর যে গাড়ি পার্কিং করে রাখে। এটা এটাতো সাংবাদিকদের মাধ্যমে আজকে সবার কাছে বার্তা পৌঁছে গেল। আমি আমার অবস্থান থেকে বলতে চাই অবশ্যই সবাইকে তাদের স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমরা যানজট নিরসন নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু এটার জন্য সময় লাগবে।
ঢাকার দুই মেয়র যে যানজট নিরসনে দায়িত্ব নেওয়ার ইচ্ছা জ্ঞাপন করেছেন সে বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমি মেয়রদেরকে ধন্যবাদ জানাই। তারা সমস্যার সমাধান করতে চান বলেই এমন আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। আমাদের ভেবে দেখতে হবে তাদের সেই সক্ষমতা কতটুকু আছে। সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বের বাইরে এই দায়িত্ব তারা কতটুকু পালন করতে পারবে সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে। যদি তাদের সক্ষম হতে থাকে অবশ্যই আমরা বিষয়টি কে সাধুবাদ জানাবো।
দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, প্রশ্নটা গ্রহণযোগ্য না। একটা দেশকে ঠিক করতে হলে এসব প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে হবে। সবাই মিলে কাজ করতে হবে। আমার দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার কোন বিষয় না।
তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নিতে ভালোবাসি। যেটা আমার নেওয়া উচিত। যে দায়িত্ব আমার নয় সেটা আমি নিতে গেলে আশানুরূপ কিছু ঘটবে না।
মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুল হক। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ শফিক।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, রাজউকের ডিটেল এরিয়া প্ল্যান প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ আসাদুর রহমান মোল্লা, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি আবুল কালাম।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।