সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে নিহত বহুল আলোচিত রায়হান আহমদ হত্যা মামলায় ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বুধবার দুপুরে আদালত পুলিশের কাছে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক আওলাদ হোসেন। অভিযুক্তরা হলেন— প্রধান অভিযুক্ত বন্দরবাজার ফাঁড়ির তৎকালীন এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া, এসআই হাসান উদ্দিন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস, হারুনুর রশিদ ও ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ গায়েবকারী কথিত সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান। এদের মধ্যে পাঁচ পুলিশ সদস্য কারাগারে থাকলেও নোমান এখনও পলাতক রয়েছেন। আসামিদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে এসআই মো. আকবর হোসেন ভূইঁয়া, কনস্টেবল হারুন অর রশিদ, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও এএসআই আশেক এলাহী। আলামত গোপনের অভিযোগে আসামি এসআই মো. হাসান উদ্দিন ও স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে পেনাল কোড ২০১ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগপত্রে। আদালত পুলিশের পরিদর্শক প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা প্রায় এক হাজার ৯০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এখন যেহেতু করোনার কারণে কোর্ট বন্ধ, ভার্চুয়াল আদালতে সীমিত কার্যক্রম চলছে। আদালত পুরোদমে চালু হলে তা আদালতের কাছে উপস্থাপন করা হবে। সিলেট পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার খালেদ-উজ-জামান জানান, দীর্ঘ ছয় মাসেরও বেশি সময় তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। আলোচিত এ মামলাটির আসামি পুলিশ হওয়ায় একটি নির্ভুল, ত্রুটিমুক্ত ও গ্রহণযোগ্য চার্জশিট তৈরি করতে কিছুটা সময় লেগেছে। তবে আসামিদের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন পিবিআইপ্রধান। একটু দেরিতে হলেও মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়ায় খুশি রায়হানের মা সালমা বেগম। তিনি বলেন, কারা রায়হানকে পিঠিয়ে, নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে তা স্পষ্ট। পুলিশ হেফাজতে এমন মৃত্যু কারও কাম্য নয়। এ ঘটনায় জড়িত সব আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। গত বছরের ১১ অক্টোবর ভোরে সিলেট নগরীর আখালিয়ার এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে এনে নির্যাতন করেন ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়াসহ পুলিশ সদস্যরা। পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যু ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের গ্রেফতারে দাবিতে চলে নানা কর্মসূচি। রায়হান হত্যার পরদিন ১২ অক্টোবর তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।