দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার পাকেরহাটে ইনফিনিটি ক্লিনিক ও কনসালন্টেশন সেন্টারে সঠিক চিকিৎসার অভাবে ও কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

এবং রোগীর মৃত্যুর জন্য ঐ ক্লিনিকেই দায়ী করছে রোগীর পরিবার ও তার স্বজনরা। তাদের অভিযোগ ক্লিনিকে রোগীর সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসক না থাকায় সঠিক চিকিৎসাসেবা দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি ক্লিনিকে জ্বীনের দোষ থাকায় এধরনের ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে প্রসূতির পরিবারের সাথে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ মিমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ফলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

জানা যায়, গত ১৫ জানুয়ারী উপজেলার গোয়ালডিহি গ্রামের ভাদুশাহ্ পাড়ার নুরজামাল ইসলাম লালুর স্ত্রী রফিকা আক্তার (২০) এর প্রসব বেদনা শুরু হলে গোয়ালডিহি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নিয়ে যায়। পরে ঐ কেন্দ্রের কর্মরত তাহেরী আক্তার প্রসূতির সমস্যা গুরুতর বলে ইনফিনিটি ক্লিনিকে ভর্তির পরামর্শ দেন ও ভর্তি করান। ক্লিনিকে ভর্তির পর কর্মরত নার্সরা বিকেল থেকে চিকিৎসা দেওয়ার পরে রাতে চিকিৎসকের দেখা মেলে। মধ্যরাতে ডাঃ জেড রহমান সুমন নিজেই সার্জন ও এনেস্থিসিয়া হিসেবে ও তার ড্রাইভার রাজকুমারকে সহকারী হিসেবে নিয়ে প্রসূতির সিজার করে চলে যান। এরপর প্রসূতির বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ও রক্তক্ষরণ শুরু হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে প্রসূতিকে নার্সরা ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা প্রদান করেন।

এরপরও প্রসূতির অবস্থা সংকটাপন্ন হলে রাত ৪টার দিকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে ছাড়পত্র ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজ না দিয়েই মাইক্রো যোগে দিনাজপুর এম.আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ জানুয়ারী সদ্য প্রসবকারী ছেলে সন্তানকে রেখে প্রসূতির মৃত্যু হয়। ঐ ক্লিনিকে এর আগে ভুল চিকিৎসার ফলে কয়েকজনের মৃত্যু ও ভোগান্তির কথা জানান ভুক্তভোগী পরিবার।

প্রসূতির স্বামী নুরজামান ইসলাম লালু বলেন, তাঁর স্ত্রীর সিজারের পূর্বে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ কোন সমস্যার কথা না বললেও সিজারের পর রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে বিভিন্ন অজুহাতের কথা বলে দিনাজপুরে পাঠান। প্রসূতির স্বামী বলেন,ক্লিনিকে সঠিক চিকিৎসা হয় নি বলে হাসপাতালে জানতে পারি।

ঐ প্রসূতিকে অপারেশনকারী সার্জন ডাঃ জেড রহমান সুমন ও তার সহকারীর মুঠোফোন ও ক্ষুদে বার্তায় একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি। তবে এ বিষয়ে ক্লিনিক পরিচালক ইমতিয়াজ হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ঘটনাটি তেমন গুরুতর নয়৷ প্রসূতির আগে থেকেই নানা শারীরিক সমস্যা ছিল। তবে জ্বীনের দোষ থাকায় প্রায়ই ক্লিনিকে এমন ঘটনা ঘটে বলে তার দাবি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, এধরনের মৃত্যু কাম্য নয়। পাকেরহাট ইনফিনিটি ক্লিনিকসহ অনিবন্ধিত সকল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ইতিমধ্যে অবহিত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন চিকিৎসা বিজ্ঞানে জ্বীন-ভূত সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও কুসংস্কার।