তৈয়বুর রহমান কিশোর, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বারাংকুলা জে এস ডি মাদ্রাসায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান। ভবনের জরাজীর্ণ দশায় যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। এতে শিক্ষার্থী যেমন আছে আতঙ্কে তেমনি শিক্ষক ও অভিভাবকরাও রয়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়।

সংশ্লিষ্ট বিভাগে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ঝুঁকির মধ্যেই জরার্জীর্ণ মূল ভবনে চলছে পাঠদান কার্যক্রম।
মাদ্রাসা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আলফাডাঙ্গা উপজেলার বুড়াইচ ইউনিয়নের বারাংকুলা জেএসডি মাদ্রাসাটি ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৯৪ সালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্ট তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি একতলা ভবন নির্মাণ করেন।

তিনটি কক্ষের মধ্যে একটিতে চলে অফিসের কার্যক্রম। অপর দুইটি কক্ষে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে ছোট ছোট দুইটি টিনসেড ঘর থাকলেও পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ না থাকায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাস পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে মাদ্রাসাটিতে প্রায় তিনশো শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছেন। মাদ্রাসায় ১৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ১৯৯৪ সালে নির্মিত এ মাদ্রাসা ভবনটিতে ২০১৯ সালে ত্রুটি দেখা দেওয়ার পর ধীরে ধীরে শ্রেণি কক্ষগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন ভবনের ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ে পুরনো মরিচা ধরা রড বের হয়ে গেছে। আরসিসি পিলার, গ্রেট বিমগুলো ও বিভিন্ন কক্ষের ভেতরের দেয়ালে বিস্তৃত ফাটল দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি হলে ছাদ দিয়ে পানি পড়ার কারণে দেওয়ালগুলো শ্যাওলা ধরে স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। অনেক কক্ষের দরজা-জানালা নেই। মাদ্রাসা চত্বরে ছোট ছোট অপর দুইটি টিনসেড ঘর থাকলেও সেগুলোও বয়সের ভারে জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে সব সময় দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক জানান, আরসিসি পিলার ও গ্রেট ভিমগুলোতে বিস্তৃত ফাটল দেখা দেওয়ায় ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করছে। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেক অভিভাবক তাদের ছেলে-মেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন।

মাদ্রাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুরছালিনা খানম জানান, সামনে আমাদের পরীক্ষা। তাই মাদ্রাসা ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়ে ক্লাস করছি। আতঙ্কে থাকি কখন ভবনটি ধ্বসে মাথার ওপর পড়ে। নাঈম শেখ নামে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানান, ‘মাদ্রাসা ভবনের পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

মাদ্রাসার সুপার এমএ শাহিন মিয়া বলেন, ‘বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষর কাছে বার বার আবেদন করা হয়েছে। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিবের নিকটও লিখিত আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে রাখা সম্ভব নয়। যেকোনো সময় বড় কোনো দুঘর্টনার সম্ভবনা রয়েছে।

এ ব্যাপারে আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহিদুল হাসান জানান, ‘বিষয়টি উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় রেজুলেশন করা হয়েছে। মাদ্রাসাটিতে নতুন ভবনের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠনোর প্রক্রিয়া চলছে।