১৪ জন শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অবস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন তার উপর অর্পিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি পদ থেকে লিখিতভাবে পদত্যাগ করেছেন।

মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে রবি পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান পদ, সহকারী প্রক্টর পদ ও প্রক্টরিয়াল বোর্ডের সদস্য পদ থেকে লিখিতভাবে পদত্যাগ করেছেন।

রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল এ পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণ বা পদত্যাগ না করায় শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন অব্যহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। সেই সাথে তারা ৪ দফা থেকে সরে এসে এখন এক দফা আন্দোলনের ডাক দিয়ে আমরণ অনশনে বসেছে।

গত রোববার দুপুরে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরিচিতি বিষয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময় ছাত্রদের নিজ হাতর চুল কেটে কেটে কক্ষে ঢুকান শিক্ষক।

এ ঘটনায় ছাত্র নাজমুল হাসান তুহিনকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্তের হুমকি দেন। এতে করে নাজমুল হাসান তুহিন লজ্জায়, অপমানে শাহমখদুম ছাত্রাবাসে নিজের কক্ষে গিয়ে ঘুমের ওষুধ সেবন করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

পরে সহপাঠীরা টের পেয়ে তাঁকে অচেতন অবস্থায় প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে এনায়েতপুর খাজা ইউনুছ আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ ঘটনার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের লাঞ্ছিত পরীক্ষার্থী ও তাঁদের সহপাঠীরা প্রতিবাদে পরীক্ষা বর্জন ও বিক্ষোভ করেন বিসিক বাসস্ট্যান্ড এলাকার শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে। কিন্তু ওই শিক্ষক ও তাঁর ভাড়াটে বাহিনী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে সবাইকে পরীক্ষার হলে যেতে বাধ্য করেন।

এ ব্যাপারে লাঞ্ছিত একাধিক শিক্ষার্থী জানান, কয়েক দিন আগে ক্লাস চলাকালে ওই শিক্ষক চুল বড় রাখার বিষয়ে ছাত্রদের গালমন্দ করেন। পরীক্ষার দিন শিক্ষার্থীরা হলে ঢোকার সময় আগে থেকেই দরজার সামনে ওই শিক্ষক কাঁচি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যাঁদের চুল মুঠোর মধ্যে ধরা গেছে, তাঁদের মাথার সামনের বেশ খানিকটা চুল তিনি কাঁচি দিয়ে কেটে দেন। সবার সামনে এভাবে তাঁদের লাঞ্ছিত করার পর ওই শিক্ষক জোর করে তাঁদের পরীক্ষা দিতে বাধ্য করেন।

এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের স্থায়ী অপসারণসহ ৪ দফা দাবীতে আন্দোলন করতে থাকে। আন্দোলনের মুখে সেই শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ টি পদ থেকে লিখিত ভাবে পদত্যাগ করলেও স্থায়ী অপসারণ বা চাকরি থেকে পদত্যাগ না করা শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনে বসেছে।