‘আমি এক মুজিব পাগল, আমার বুকে কান্নার রোল, বছর ঘুরে আগস্ট এলেই খুঁজি, আমার বঙ্গবন্ধু ফিরে এলো বুঝি’। ‘এই হৃৎস্পন্দনে মুজিব মুজিব, ভাবনা মননে মুজিব, ধ্যান জাগরণে মুজিবের নাম বিশ্ব জগতজোড়া’ অথবা ‘বাঙালি যে চোখ দিয়ে যা কিছু দেখে থাকে এই বিশ্বের, সে চোখ তো কারো নয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের’ ‘কফিনটা নিয়ে চলে হায়েনা সীমার, মেঘেরা দিচ্ছে গার্ড অব অনার, বাতাসেরা বাজাচ্ছে বিউগল —
মুজিব মরে না, মুজিব মৃত্যুহীন প্রাণ’। ‘মুজিব থেকে সজীব, মধ্যে শেখ হাসিনা’— এমন বহু গানের রচয়িতা রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলাধীন পাঁচুরিয়ার ব্রাহ্মণদিয়া নামক এক নিভৃত পল্লীতে জন্মগ্রহণকারী গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী জয়নুল আবেদীন। তিনি এমন গান রচনা করে চলেছেন এবং নিজের টাকা ব্যয়ে গানগুলো বিভিন্ন শিল্পীর কণ্ঠে, নিজের কণ্ঠে গেয়ে অ্যালবাম তৈরি করছেন।
১৯৮১ সালে রাজবাড়ী সরকারি কলেজে বি এ ক্লাসের ছাত্র থাকাকালীন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে ছাত্র সংসদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। তখন তাঁর রচিত এসব গান তিনি স্থানীয় জনসভায় গাইতেন। অর্থাভাবে এবং আর্থিক কোনো পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এসব গান তিনি প্রকাশ করতে পারেননি। এমনিতে তখন বঙ্গবন্ধু প্রায় নিষিদ্ধ ছিলেন।
তাই তিনি গানে গানে বঙ্গবন্ধুর কথা বলতেন। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর রাজবাীর নেতা প্রয়াত আ. ওয়াজেদ চৌধুরী তাকে খুব স্নেহ করতেন। ১৯৮২ সালে তার হাতের চিঠি নিয়ে ৩২ নম্বরে জননেত্রীর সাথে দেখা করলে নেত্রী তাকে একটা চাকরির আশ্বাস দেন। সে চাকরি তিনি না করে রাজনীতি আর গান নিয়েই পড়ে থাকেন।
১৯৭০ সালের নির্বাচনী জনসভা করতে বঙ্গবন্ধু রাজবাড়ীতে এলে জয়নুল নামের এই ছোট্ট দুরন্ত বালকটি মঞ্চের সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে থেকে মাথায় বঙ্গবন্ধুর হাতের ছোঁয়া পান। সেই থেকেই তার বঙ্গবন্ধু প্রেম। আজোও তা অম্লান। ১৯৯৬ এর জনতার মঞ্চেও তিনি গান করেন। kalerkanthoজয়নুল আবেদীন রাজবাড়ী জেলার এক গানপাগল মানুষ। গানের প্রতি তার প্রবল ভালোবাসা ছোটবেলা থেকেই। অজ পাড়াগাঁয়ে তাঁর জন্ম।
গাঁয়ের বন বাদাড়, বিল-ঝিল, মেঠোপথ আর ফসলের মাঠে অবাধ বল্গাহীন ঘুরে বেড়ানো, আর গান গাওয়া তার প্রধান কাজ ছিল। একসময় গ্রাম থেকে প্রায় প্রতিদিনই ৮ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে শহরে গিয়ে গান শিখতেন তিনি। বন্ধু তপন দে, জামাল হাবীব, ওস্তাদ নজরুল ইসলাম কুটি এবং চৌধুরী হাসমত আলী তাঁর সংগীত গুরু।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত গীতিকার ও কণ্ঠশিল্পী তিনি এবং একজন সুরকারও। জয়নুল আবেদীন দীর্ঘ ৪ দশক ধরে গানের প্রেমে মগ্ন। সেই ছোট্টটি থেকে তিনি অসম্ভব রকমের বঙ্গবন্ধু ভক্ত। ১৯৭১ এ তাঁর বয়স প্রায় ১২/১৩ বছর। বাড়ির পাশের জঙ্গলের গলিপথে গোলাম মোস্তফা এবং ইছাক সরকারের কাছে গ্রামের অন্য ছেলেদের সাথে বাঁশের লাঠির সাহায্যে ট্রেনিং নিতেন।
একসময় সেই ওস্তাদরা তাঁকে ফেলে রেখেই (বয়স কম থাকায়) যুদ্ধে চলে যান। প্রথম জীবনে অর্থাভাবে না পারলেও শেষ জীবনে এসে চাকরি থেকে স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে নিজের গ্র্যাচুইটির প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যয় করে ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নিজের কথা ও সুরে প্রথমেই ১০টি গানের একটি মিউজিক ভিডিও অ্যালবাম তৈরি করেন। তাঁর অনুপ্রেরণা ছিল দেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী শাহীন সামাদ।
এই অ্যালবামে শাহীন সামাদ তিনটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু প্রেম ব্যতীত তার চাওয়া-পাওয়ার আর কিছুই নেই। তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক গান লিখেছেন এবং লিখে চলেছেন এখনো। সম্প্রতি তাঁর কথা ও সুরে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত চপল স্যানালের কণ্ঠে ‘রক্ত কফিন’ এবং ফেসবুকের মাধ্যমে তার আবিষ্কৃত ময়মনসিংহ জেলার অসাধারণ কণ্ঠের অধিকারী ১০
বছর বয়সী বিস্ময় বালক ঈশান দে এর কণ্ঠে ‘হৃৎস্পন্দনে মুজিব’ নামে অসাধারণ কথা ও সুরে নির্মিত আরো দুটি মিউজিক ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। ‘মুজিব পাগল’ শিরোনামে তার কথায় এবং প্রখ্যাত সুরকার গোলাম সরোয়ারের সুরে আরো একটি চমৎকার অ্যালবামের কাজ চলছে। তাঁর প্রবল ইচ্ছে, তার বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা সম্পর্কিত এই গানের অ্যালবাম মাননীয় প্রধাণমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছাক এবং এর একটি
গানও তিনি যদি শোনেন তাহলেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এই গান সৃষ্টির সার্থকতা বলে মনে করেন তিনি। রাজবাড়ী জেলার সঙ্গীতাঙ্গনের এক উজ্জ্বল মানুষ তিনি। ছোট্টটি থেকেই তিনি এক মুজিব পাগল মানুষ। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তার রচিত চমৎকার কথামালার গান তিনি তৈরি করেই চলেছেন। এত টাকা পয়সা ব্যয়ে এই গান তৈরি অনেকে পাগলামী বললেও, তিনি বঙ্গবন্ধুর নামে কিছু করে যেতে পারলেন, এটাই তার মহাতৃপ্তি।
তাঁর লেখা বেশ কিছু গান প্রখ্যাত সুরকার গোলাম সরোয়ার, রাজন সাহা, শাহীন সরদার এবং নিজে সুর করেছেন। তার রচিত গান কণ্ঠশিল্পী তিমির নন্দী, শাহীন সামাদ, মনির খান ও আসমা দেবযানীসহ শাহীনুর রহমান, চপল স্যান্যাল, ঈশান দে এবং অনেক স্বনামধন্য কণ্ঠশিল্পী টিভি মিডিয়াসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিবেশন করেছেন। তিনি লোকগান, আধুনিক গান,
দেশাত্মবোধক, হামদ-না’তে রাসুল, গজলসহ নানাবিধ গান তিনি লিখেছেন এবং লিখে চলেছেন। বিটিভি ছাড়াও, মাছরাঙা, গাজী টিভি, এনটিভিসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার ও সংগীত পরিবেশন করেছেন তিনি। অজ পাড়াগাঁয়ের দরিদ্র পরিবারের এই মানুষটির বিগত চার দশকজুড়ে সংগীত নিয়ে, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুকেন্দ্রিক গান তৈরিতে আত্মনিয়োজিত থেকেই তৃপ্ত।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।