ভ্রমণ পিপাসুদের অনেকেরই প্রথম পছন্দ সমুদ্র উপকূলে বেড়াতে যাওয়া। সাগরের সৈকত আর পাহাড়ের চূড়া-এই দুটোর মধ্যে বেছে নিতে বললে অনেক ভ্রমণকারীই দোটানায় পড়বেন। বাংলাদেশে দুটোই আছে এবং নেহায়েত কম নয় সংখ্যার দিক দিয়ে।

সাগরের সৈকত বলতে বহুকাল ধরেই কক্সবাজার ছিল একমাত্র গন্তব্য। সাম্প্রতিক কালে এসেছে কুয়াকাটা। বিগত দুই দশক ধরে কুয়াকাটা সৈকত, সমুদ্রস্নান নিয়ে কক্সবাজারের পাশে একটা ছোট্ট অপশন হিসেবে হাজির হয়েছে। বিশেষ করে বরিশাল, খুলনা বা বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের জন্য কুয়াকাটাও একটা বিকল্প হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। এই অঞ্চলের ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য কক্সবাজার অনেক দূরের পথ, তাই বিবেচনায় অনেকে কুয়াকাটাকেই বেছে নেন।

বর্তমানে দেশের মানুষ যে হারে ভ্রমণমুখী হচ্ছেন, বিশেষ করে তরুণ সমাজ যেভাবে ছুটি পেলেই দল বেঁধে বেরিয়ে পড়েন ভ্রমণে, তাতে অচিরেই দেশে পর্যটন স্পটের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে।

বরিশাল বিভাগ ও বৃহত্তর নোয়াখালীর দক্ষিণে মেঘনার অববাহিকায় এবং পায়রা, বিশখালী, আগুনমুখা ইত্যাদি নদীর মোহনায় আগে থেকেই ছিল অনেক দ্বীপ, গত ৫০ বছরে জেগেছে আরও অসংখ্য চর। এই চরগুলোতে তৈরি হয়েছে অপরূপ বালুকাবেলা বা সি বিচ, যা পর্যটকদের কাছে প্রিয় হোয়াইট স্যান্ডি বিচ। সমুদ্রের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে এই সব বিচে। দ্বীপগুলোকে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট করে তুলেছে এই দৃশ্যগুলো। একইসঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে এবং বন বিভাগের প্রচেষ্টায় প্রত্যেকটি চরেই গড়ে উঠেছে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বা উপকূলীয় শ্বাসমূলের বন।

একদিকে সমুদ্র সৈকত, অপরদিকে শ্বাস-মূলের বন, আবার সেই বনে হরিণ, বানরসহ নানা বন্যপ্রানী, ক্রমশ পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই চরগুলোর মধ্যে কমপক্ষে ৪-৫টার রয়েছে জনপ্রিয় পর্যটন স্পট হিসেবে বিবেচিত হওয়ার সব বৈশিষ্ট। প্রথমটা নিঝুম দ্বীপ, যা নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার অন্তর্গত, দ্বিতীয়টা চর কুকরি-মুকরি, যা ভোলা জেলার দক্ষিণে চর ফ্যাশন উপজেলার অন্তর্গত আর তৃতীয়টা মনপুরা, যা ভোলা জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। ৪র্থটা মৌডুবি, কুয়াকাটার পুর্ব দিকে, ৩য় সামুদ্রিক বন্দর পায়রা বন্দরের অপর পাশে রাঙ্গাবালী উপজেলায় অবস্থিত।

এই ৪টি স্পটেই রয়েছে সমুদ্রের বালুকাবেলা, পাশেই রয়েছে বন-জঙ্গল আর ৪ জায়গাতেই লঞ্চে করে ঢাকা থেকে যাওয়ার ব্যবস্থা। সরকারের উচিৎ এসব উদীয়মান পর্যটন স্পটগুলো অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠার আগেই কিছু জরুরি কাজ করা।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড পারে স্পটগুলো নষ্ট হওয়ার আগেই সি বিচ সংলগ্ন কিছু জমি (২০-৫০ একর) অধিগ্রহণ বা ডিপিএম’র মাধ্যমে নিয়ে নেওয়া। তারপর জায়গাটা সাজিয়ে রাস্তা ঘাট, যাতায়াত, বিদ্যুৎ, পানি, নিরাপত্তা ইত্যাদি দিয়ে ট্যুরিস্ট জোন হিসেবে গড়ে তোলা। ১০ কাঠা থেকে ২০ কাঠার কিছু প্লট সুবিন্যস্ত করে তরুণ, মেধাবী ও ক্ষেত্র বিশেষে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মাঝে অত্যন্ত স্বল্পমুল্যে বা মাসিক ভাড়ার ভিত্তিতে বিতরণ করা। বাদবাকী কাজ তরুণ উদ্যোক্তারাই করবেন। বিসিককে সঙ্গে নেওয়া যায় ছোট ছোট এসব স্পট ডেভেলপমেন্টের কাজে। অবাক হচ্ছেন? এরা কিন্তু ছোট ছোট শিল্প এলাকা তৈরিতে ওস্তাদ, সেই প্রাচীন কাল থেকেই। আর সশস্ত্র বাহিনীও আছে। টার্ন কি বেসিসে দায়িত্ব দিলে সুন্দরভাবে করে দিতে পারবে তারাও। সমুদ্র সৈকত ছাড়া এ দেশের বনে-পাহাড়েও অসংখ্য এলাকা এখন পর্যটন স্পট হিশেবে জনপ্রিয়, যেখানে পরিকল্পিতভাবে ছোট ছোট এমন ট্যুরিস্ট অঞ্চল গড়ে তোলা যায়।

শর্ত একটাই, অত্যন্ত স্বল্প খরচে বাজেট ট্যুরিজমের সেবা দিতে হবে এখানে। দেশের ৯৫ শতাংশ জনসাধারণকে কম খরচে রুম ভাড়া, কম খরচে খাওয়া, ঘুরে বেড়ানো, কম খরচে আসা-যাওয়া এসব সুবিধা দিতে হবে। পর্যটন মানেই গলা কাটা নয়, সেই কালচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে এখানে।

 

মোট কথা পর্যটন খাতের দিকে বিশেষ নজর দিন। হাতে-কলমে কাজে নামান সংশ্লিষ্ট সবাইকে। পর্যটন অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পর্যটন সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিমালা করুন, একটা রোড ম্যাপ করুন।

থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম কিংবা মালয়েশিয়ার লোক আমাদের চেয়ে স্মার্ট নয় কিন্তু তাদের স্মার্ট সিস্টেমের কারণে আজ সেখানে কতশত ওয়ার্ল্ড ক্লাস পর্যটন স্পট। আর আমরা? কেবল নষ্টই করে যাচ্ছি। তাই সরকারের কাছে আবেদন, শিল্পাঞ্চল ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো এবার দেশে ট্যুরিস্ট অঞ্চল গঠন করুন এবং আমাদের অর্থনৈতিক চাকাকে আরও গতিশীল করুন।

 

কলমকথা/ সাথী