আফগানিস্তানের বেশিরভাগ এলাকা তালেবান দখলে নিলেও পঞ্জশির তাদের দখলে যায়নি। পঞ্জশিরে প্রবেশ করতে গিয়ে গত কয়েক দিনে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে তালিবানকে। তালেবান এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, ওই এলাকা দখলে নেওয়ার জন্য তারা সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে। পঞ্জশির দখল করতে এরই মধ্যে রওনা হয়েছে তালেবান। যুক্তরাষ্ট্র সেনা সরিয়ে নেওয়া শুরুর পর হুট করেই আফগানিস্তানে একের পর এক প্রদেশ এক প্রকার বিনা যুদ্ধেই দখলে নিয়েছে তালেবান। কিন্তু পঞ্জশির সেভাবে দখলে নিতে পারেনি তালেবান।
১৫ আগস্টের পরও তালেবানের দখলের বাইরে ছিল এই এলাকার বেশ কয়েকটি প্রদেশ। প্রয়াত তালেবানবিরোধী কিংবদন্তি তাজিক নেতা আহমদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমদ মাসুদের নেতৃত্বে তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াই হচ্ছে সেখানে। তিনি আফগানিস্তানে তালেবানবিরোধী রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার ব্যাপারে সশস্ত্র বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আহমদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমদ মাসুদ জানিয়েছেন, শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত তার বিদ্রোহী সেনারা লড়াই করবে। মুজাহিদদের নিয়ে আমি আমার বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চাই। মুজাহিদরা আবারও তালেবানদের মোকাবেলা করতে প্রস্তুত। সাবেক আফগান কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে নিই ইয়র্ক টাইমস বলেছে, পাঞ্জশির উপত্যকায় তালেবানবিরোধী ২০০০ থেকে ২৫০০ যোদ্ধা আছে এবং তাদের হাতে সাধারণ হালকা রাইফেল রয়েছে। কাবুল থেকে পালিয়ে যাওয়া আফগান ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ রয়েছেন মাসুদের সঙ্গে। আফগান বাহিনীর একটা অংশও যোগ দিয়েছে তাদের সঙ্গে। এই বাহিনীর সামনে পড়ে গত কয়েক দিনে বেশ কয়েক বার পিছু হটেছে তালেবান। সেই পঞ্জশির দখলে এবার সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাতে চাইছে তারা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি তালেবান পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ চালায়, মাসুদের যোদ্ধাদের সংগ্রাম করতে হবে। যদিও তালেবান সেখানে বাধার মুখে না পড়ে ক্ষমতার দখর নিতে পারবে না। যেমনটি দেশের অন্যান্য অংশে ঘটেছে; যদি তালেবান পুরোপুরি আক্রমণ চালায়, সেখানে জড়ো হওয়া তালেবান বিরোধীদেরও বেশ শক্তি ক্ষয় করতে হবে।
এখন পর্যন্ত তালেবান পঞ্জশিরে প্রবেশ করেনি, সে কারণে এখন পর্যন্ত যে প্রতিরোধ হয়েছে তা মৌখিকভাবে। একজন স্বাধীন গবেষক আবদুল সাঈদ এএফপিকে বলেছেন, তালেবান চারদিক থেকে পঞ্জশিরকে ঘিরে রেখেছে এবং আমি মনে করি না যে, মাসুদের ছেলে কয়েক মাসের বেশি প্রতিরোধ করতে পারবে। এই মুহুর্তে, তার কোনো শক্তিশালী সমর্থন নেই। তাছাড়া আহমদ শাহ মাসুদের যে সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব বা গ্রহণযোগ্যতা ছিল, আমরুল্লাহ সালেহ বা মাসুদের ছেলের তা নেই। তালেবানরা যে পরিমাণ ভারি অস্ত্র হাতে পেয়েছে, সে তুলনায় অনেক হালকা মানের অস্ত্র রয়েছে মাসুদের যোদ্ধাদের কাছে। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সময় থেকেই পঞ্জশির প্রতিরোধের ভূমি হিসেবে থেকে গেছে। পঞ্জশিরের বাঘ আহমদ শাহ মাসুদের এলাকা হিসেবেই এটি পরিচিত। পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ার কারণে ভৌগলিকভাবেও তারা এখান থেকে সুবিধা পায়। তবে আফগানিস্তান বিশেষজ্ঞ দোরানসরো মনে করছেন, আহমেদ সালেহ এবং আহমেদ মাসুদের মধ্যে পার্থক্য আছে। মাসুদ বহু বছর কাটিয়েছেন ব্রিটেন এবং ইরানে। বাবার তুলনায় তার রাজনৈতিক প্রভাব অনেক কম। এখন দেখার বিষয়, পঞ্জশিরে তালেবান পূর্ণ শক্তি দিয়ে হামলা চালালে কী ঘটে। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, নিউজ ১৮, আল আরাবিয়্যাহ।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।