লিভার আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি। এটি শরীরকে বিষমুক্ত করা, পুষ্টি নিয়ন্ত্রণ, এনজাইম সক্রিয় করা এবং আমাদের সুস্থ্য রাখার জন্য আরও অনেক দায়িত্ব পালন করে। এছাড়াও, লিভার পিত্ত রস নিঃসরণ করে, যা হজম এবং বিপাকে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। ফলে আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য আমাদের লিভার বা যকৃতের সঠিক যত্ন নেওয়া জরুরী।

লিভার প্রতিদিন ৫০০টিরও বেশি জীবন রক্ষাকারী এবং টেকসই কর্ম সম্পাদন করে। এছাড়াও, এটি এমন একটি অঙ্গ যা নিজেকে পরিষ্কার করে। তাই আমাদের শরীরকে স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ যাতে এটি অকেজো হয়ে না পড়ে। আসুন জেনে নেওয়া যাক এমন পাঁচটি পানীয়ের কথা যেগুলো লিভারকে বিষমুক্ত করতে সহায়ক।

কফি
সারা বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়গুলির মধ্যে একটি কফি আমাদের দিনটি চনমনে ভাবে শুরু করতে সাহায্য করে এবং কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় উদ্দীপনার যোগান দেয়। এছাড়াও, বেশ কয়েকটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, সঠিক মাত্রায় কফি পান করলে লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, পরিমিত পরিমাণে কফি পান করলে লিভার রোগমুক্ত থাকে। নিয়মিত কফি পান করলে লিভারে ফ্যাটি অ্যাসিড কমে। এবং গ্লুটাথিয়ন নামের একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎপাদন বাড়িয়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা বাড়ায়।

সবুজ চা
জার্নাল অফ নিউট্রিশনাল বায়োকেমিস্ট্রিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, ব্যায়ামের পাশাপাশি গ্রিন টি লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, গ্রিন টির নির্যাস গ্রহণের পর দেহ প্রক্রিয়াজাত পুষ্টি আরও ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে।

 

হলুদ চা
হলুদ একটি সুপারফুড। হলুদে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে তা এনজাইমের উৎপাদন বাড়িয়ে লিভারকে বিষমুক্ত করতে সহায়তা করে। হলুদ শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে লিভারকে আরও শক্তিশালী করে।

আমলকি জুস
আমলা খুবই স্বাস্থ্যকর একটি ফল। এতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, ভিটামিন সি এবং বেশ কয়েকটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি। এই উপাদানগুলো লিভারকে বিষমুক্ত করতে এবং সুস্থ্য রাখতে সহায়ক। এছাড়াও, বেশ কয়েকটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, সঠিক মাত্রায় আমলকির জুস পান করলে লিভার ফাইব্রোসিস এবং এর সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলো থেকে মুক্ত থাকে। আমলকির রস হাইপারলিপিডেমিয়া (অত্যধিক চর্বি) এবং বিপাকীয় সমস্যা দূর করে। আমলকির জুস পান ছাড়াও দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় আমলকি অন্তর্ভুক্ত করুন।

বিটরুটের রস
বিটরুট খুবই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যকর একটি সবজি। এতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফোলেট, পেকটিন, বেটালাইনস এবং বিটেইন এর মতো পুষ্টি উপাদান। এছাড়াও, এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ, পটাসিয়াম, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি। এই পুষ্টি উপাদানগুলো পিত্তের প্রবাহকে আরও উন্নত করতে সাহায্য করে, যা আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত বর্জ্য দূর করতে সাহায্য করে।

আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় এই পানীয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করুন এবং একটি সুস্থ জীবন উপভোগ করুন। কিন্তু মনে রাখবেন, সংযমই হল সুস্বাস্থ্যের মূল চাবিকাঠি। আর যেকোন ধরনের লাইফস্টাইল পরিবর্তনের আগে একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

কলম কথা / বি সুলতানা