গত মার্চ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ১৯ জন নিহত হয়েছে। এ মাসে সারা দেশে ৪৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৫৮৯ জন নিহত এবং ৬৪৭ জন আহত হন। নিহতের মধ্যে ৬১ জন নারী ও ৯৬ শিশু। অথচ ফেব্রুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে নিহত হার ছিল ১৬ দশমিক ৭৫। এই হিসাবে ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চ মাসে প্রাণহানি বৃদ্ধির হার তিন শতাংশের বেশি। এছাড়া ওই মাসে ৫টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত হয়েছেন। ১১টি রেল দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত এবং ৮ জন আহত হয়েছেন। গতকাল রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে বলে সংগঠনটি জানিয়েছে। দুর্ঘটনা রোধে ১০টি সুপারিশ করা হয়। প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, মূলত সড়ক পরিবহণ খাতের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে । মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ চালকদের বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো, অপ্রাপ্তবয়স্ক ও যুবকদের বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানোর কারণেও দুর্ঘটনা বাড়ছে। এছাড়া পথচারী নিহতের ঘটনাও ব্যাপক বেড়েছে। পথচারীরা যেমন সড়কে নিয়ম মেনে চলে না, তেমনি যানবাহনগুলোও বেপরোয়া গতিতে চলে। দুর্ঘটনা বাড়লেও তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান নয় বলেও দাবি করেছে সংগঠনটি। তারা বলেছে, ‘সড়ক পরিবহণ আইন-২০১৮’ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।

এ অবস্থায় উন্নয়নে টেকসই সড়ক পরিবহণ কৌশল প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা। মার্চ মাসে দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরে এতে বলা হয়, ১৭৬টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২২১ জন, যা মোট নিহতের ৩৭.৫২ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৮.৪২ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১৬২ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২৭.৫০ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭৩ জন, অর্থাৎ ১২.৩৯ শতাংশ। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১১৭টি দুর্ঘটনায় ১৪১ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে সিলেট বিভাগে। এ বিভাগে ২৬টি দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত।

একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি ৩৩টি দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত হয়েছেন। সংগঠনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণে। ওই মাসে ১৬৮টি যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারায়, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এছাড়া ৭১টি (১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ ও ১৫৯টি (৩৪ দশমিক ৭১ শথাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বাকি দুর্ঘটনা অন্যান্য কারণে হয়েছে। দুর্ঘটনা রোধে ১০টি সুপারিশ করা হয়। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-সড়ক পরিবহণ আইন বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, পরিবহণ মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করা ও এগুলোর জন্য আলাদা রাস্তা (সার্ভিস লেন) তৈরি করতে হবে।