নিউজ ডেস্ক:-
ঠাকুরগাঁও-রুহিয়া মহাসড়কের কাঁঠাল গাছের পাতা ও ডাল কর্তনের প্রতিবাদ করায় নেপাল চন্দ্র সাহা (৬৫) ও তার কলেজপড়ুয়া দুই মেয়েকে মারধর-শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে শান্ত রায় ও তার ছেলে নিপুর রায়ের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় রুহিয়া থানা ও ঢোলারহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও বিচার না পেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
গত বৃহস্পতিবার (০৫ জানুয়ারি) ইউনিয়নের আরাজি দক্ষিণ বঠিনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত শান্ত রায় একই এলাকার বাসিন্দা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শান্ত রায় (৪৫) ও তার ছেলে নিপুণ রায় (২২) রুহিয়া মহাসড়কের কাঁঠাল গাছের পাতা ও ডাল কর্তন করেন। গাছগুলো নেপাল চন্দ্র সাহা’র বাড়ির পাশে হওয়ায় তার ছোট মেয়ে তাদের বাঁধা দেয়। এ সময় শান্ত ও নিপুণ প্রিতি ও তার বোন রিংকি সাহাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। বাবা নেপাল সাহা গালিগালাজের কারণ জানতে চাইলে শান্ত লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারপিট করতে থাকে তাকে। মারধরের এক পর্যায়ে বৃদ্ধ নেপাল মাটিতে পড়ে গেলে দুই মেয়ে বাবাকে উদ্ধার করতে আসলে তাদের ও চুলের মুঠি ধরে মারধর এবং শ্লীলতাহানি করেন। তাদের চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে বাব-ছেলে পালিয়ে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, শান্ত ও পরিবারের লোকজন এলাকার ত্রাস। তাদের কাজ হলো সরকারি কাজ কর্তন করা। কেউ বাঁধা দিলে তাদের উপর অত্যাচার জুলুমশুরু করেন। বাড়ির মেয়েদের রাস্তা ঘাটে উক্ত্যাক্ত করে। তারা অনেক প্রভাবশালী হওয়ায় কেই তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চাই না। টাকা-পয়সা দিয়ে পুলিশ ও মেম্বার চেয়ারম্যানদের ম্যানেজ করে রাখেন। গত বৃস্প্রতিবার নেপাল ও তার দুই মেয়ের সাথে যেটা হয়েছে তা মেনে নেওয়া সম্ভব না। রাস্তায় যুবতী মেয়েদের একা পেয়ে জঘন্য কাজ করেছে বাপ-বেটা। প্রশাসনের উচিৎ নর-পশু বাবা ও ছেলেকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া এবং অসহায় পরিবারটির পাশে থেকে তাদের সহযোগিতা করা।
ভুক্তভোগী নেপাল চন্দ্র সাহা জানায়, অনেক কষ্ট করে মেয়েদের পড়াশোনা করাচ্ছি। বৃস্প্রতিবার সকালে আমার বাড়ির পাশে সরকারি গাছের পাতা ও ডাল কাটছিলো শান্তা ও তার ছেলে। আমার মেয়ে তাদের বাঁধা দেয়ায় জঘন্য ভাবে গালিগালাজ করেন। আমি কারণ জানতে গেলে কাঠ দিয়ে আমায় খুবই মেয়েছে ওরা। মেয়ে দু’টা আমাকে রক্ষা করতে গেলে তাদের কেউ তারা ছাড়েনি। থানায় অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগ দেয়ার পর তারা আমায় নানান ভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমার কোন ছেলে নেই। খুব আতঙ্কে আছি। যদি মেয়েদের কোন ক্ষতি হয়।
প্রীতি সাহা জানান, তারা সরকারের গাছ কেটে নিয়ে যাবে আর আমরা কিছু বললেই দোষ। আমাদের কি অপরাধ ছিলো যে তারা এভাবে আমাদের মারধর করল? আমার বাবার পা জখম হয়েছে। আমার হাতে পায়ে জখম হয়েছে। চুলের মুঠি ধরে আমাদের দুই বোনকে বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটাইছে। আমাদের দু’বোনের সঙ্গে তারা অভদ্র ব্যবহার করেছে। তার পরেও কি আমরা বিচার পাবো না ? নাকি বিচার চাওয়া অপরাধ? এদেশে কি নিরীহ মানুষে বিচার পাওয়ার অধিকার কোন নেই? না থানা ও ইউনিয়ন পরিষদে লিখিত অভিযোগ দিয়েও আমাদের ভয়ভীতির মধ্যে রাত-দিন পার করতে হচ্ছে। আমি কলেজ যেতে পারছি না। আমার ভাই নেই। বাবা বৃদ্ধ। না জানি কখন কি হয়। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ দোষীদের বিচার করুন, আমাদের নিরাপত্তা দিন, না হয় আমাদের কেই হাজতে বন্দি করে রাখুন তবুও যদি একটু নিরাপদে থাকতে পারি। এভাবে মানুষ বাঁচতে পারে না।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে ঘটনায় অভিযুক্ত শান্ত রায় ও নিপুণ রায়ের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাদের পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য ইমান আলী বলেন, আমি বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে দেখি শান্ত ও নেপাল বাবুর সাথে সরকারি গাছের পাতা ও ডাল কর্তনের বিষয়ে বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে শান্ত ও তার ছেলে নেপাল ও তার দুই মেয়ে মারধর করেন। পরে নেপাল বাবু ইউনিয়ন পরিষদে একটি লিখিত অভিযোগ দিলে আমি থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়। তা ছাড়া শান্ত রায়ের পরিবারের লোকজন বেপরোয়া।
এ বিষয়ে রুহিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সোহেল রানা জানান,আমি অফিসিয়াল কাজে ঢাকায় ছিলাম এব্যাপারে কিছুই জানি না।
আর থানার তদন্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মহাসড়কের গাছের পাতা ও ডাল কর্তনকে কেন্দ্র করে শান্ত রায় ও নেপাল চন্দ্র সাহার মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে শান্ত ও তার ছেলে নেপালের পরিবারের লোকজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। থানায় কেউ অভিযোগ করেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নেপাল সাহা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সীমান্ত কুমার রায় তাদের বিষয়টি মীমাংসার দায়িত্ব নিয়েছেন। আর মামলা রেকর্ড করার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি জানান।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।