আলোচিত সাকিল হত্যা মামলার প্রধান আসামী ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। কারাগারে নেওয়ার সময় আদালতে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহ ও ছবি তোলায় বাধা এবং হামলার চেষ্টা করেন চেয়ারম্যানের সাথে থাকা লোকজন।
সংবাদ সংগ্রহ ও বাধা প্রদানের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জেলার গণমাধ্যমকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমার্পন করে জামিন চাইতে গেলে জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঠাকুরগাঁও জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মামুনুর রশিদ।
বিষয়টি বাদীপক্ষের আইনজীবি এ্যাড. সৈয়দ আলম ও আসামী পক্ষের আইনজীবি এ্যাড. আবেদুর রহমান নিশ্চিত করেছেন।
দু’পক্ষের আইনজীবিরা জানান, উচ্চ আদালতে আগাম জামিন চেয়েছিলেন মামলা প্রধান আসামী। উচ্চ আদালত জামিন না দিয়ে ৬ সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমার্পন করার নির্দেশান প্রদান করেন। আজ বৃহস্পতিবার ছিল উচ্চ আদালতের বেধে দেওয়া সময়ের শেষ দিন। দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমার্পন করেন শাকিল হত্যার প্রধান আসামী ভানোর ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম।
আসামী পক্ষের আইনজীবি এ্যাড.ইউসুফ আলী, এ্যাড. আবেদুর রহমান, এ্যাড. আব্দুল হালিম, এ্যাড. শেখ ফরিদ জামিনের জন্য প্রার্থনা করলে বাদীপক্ষের আইনজীবি এ্যাড. সৈয়দ আলম ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি এ্যাড. শেখর চন্দ্র রায় জামিনের বিরোধীতা করেন। পরে বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবি এ্যাড. সৈয়দ আলম জানান, শুনানিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা এবং দু’পক্ষের আইনজীবির বক্তব্য শোনার পর আদালত জামিন না মঞ্জুর করে প্রধান আসামী ইউপি চেয়ারম্যানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেই সাথে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট ময়না তদন্তের রিপোর্ট, আহতদের জখমী সনদপত্র এবং তদন্তের অগ্রগতি জানাতে আদালতে স্ব-শরীরে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
আসামীপক্ষের আইনজীবি এ্যাড. আবেদুর রহমান বলেন, বিচারক পুনরায় জামিনের জন্য আগামী ১৬ নভেম্বর দিন ধার্য্য করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আদালত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আদালতে একজন হত্যার মামলার মুল আসামীর সাথে এতো লোকজন আসলো কিভাবে? কারাগারে নেওয়ার সময় সাংবাদিকরা যখন ছবি তুলে তখন চেয়ারম্যানের লোকজন সাংবাদিকদের কাজে বাধা ও হামলার চেষ্টা করেন। আদালতের মতো জায়গায় সন্ত্রাসীদের এমন ঘটনা সত্যিই আমরা হতাশ। পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান তারা।
ঠাকুরগাঁও রিপোর্টার্স ইউনিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, আলোচিত একটা হত্যাকাণ্ড। প্রধান আসামীর আত্মসমার্পনের খবর পেয়ে আদালত চত্বরে গণমাধ্যমকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহ এবং ছবি তুলতে বাধা দেয় চেয়ারম্যানের সাথে থাকা লোকজন। বাধা পেরিয়ে ছবি তোলার চেষ্টা করলে চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী মারমুখী আচরণ করে। পরে আদালতে থাকা পুলিশ ও আইনজীবিরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
গত ০৩ সেপ্টেম্বর তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের হলদিবাড়ী বাজারে ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও যুবলীগ নেতা সাঈদ আলম দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে সাঈদ আলমের ভাই মৎসজীবিলীগ নেতা শাকিল আহমেদ মারা যায়। পরে বালিয়াডাঙ্গী থানায় ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামসহ ২০ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যুবলীগ নেতা সাঈদ আলম। সেই মামলায় ঢাকা থেকে ৪ জন, দিনাজপুর থেকে ২ জন এবং বালিয়াডাঙ্গী থেকে ২ জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ ও র্যাব।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।