বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি: ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে কোমলপানির (স্পীড) সাথে চেতনানাশক দ্রব্য খাইয়ে গর্ভবতী এক গৃহবধুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই নারীর মা বাদি হয়ে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে বোয়ালমারী থানায় মামলাটি করেন।

এতে ওই গৃহবধু রক্তক্ষরণ অবস্থায় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৮ মে রাত সাড়ে ৮টার দিকে বোয়ালমারী উপজেলার কমলেশ্বরদী কাজীপাড়া গ্রামের মো. আবু বক্কর শেখের ছেলে সোবহান শেখ (২৮) একই গ্রামের জাহিদ মিয়া ও তার স্ত্রীর সাথে পূর্ব পরিচয়ের সুবাদে তাদের বাড়িতে গিয়ে কোমলপানীর সাথে নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করান। এরপর স্বামী-স্ত্রী দুজনে ঘুমিয়ে পড়েন।

গভীর রাতে স্ত্রীর ঘুম ভাঙ্গলে সোবহানকে তার বিছানায় উলঙ্গ অবস্থায় দেখতে পেয়ে ডাক চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ওই গৃহবধুর মুখ চেপে ধরে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে সোবহান শেখ পালিয়ে যায়। পরেরদিন সকালে গৃহবধুর যৌনাঙ্গ দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকলে তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। ঘটনার তিনদিন পর গত ১২ মে অঙ্গ দিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে ওই গৃহবধুর বাবার বাড়ির লোকজন মেয়েকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই নারীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে জানান মেয়েটির গর্ভপাত হয়ে গেছে।

ওইদিনই গৃহবধুকে আরো উন্নত চিকিৎসা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। মেয়েকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টা করায় গৃহবধুর মা নাসিমা বেগম গত শুক্রবার দিবাগত রাতে বাদি হয়ে বোয়ালমারী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধনী-২০০৩) এর ৯(৪) (খ) তৎসহ পেনাল কোড ৩২৮/৩১৩ পেনাল কোডে মামলা করেছেন। মামলা নম্বর-০৫। ওই গৃহবধুর মা মামলার বাদি একই উপজেলার ময়না ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের নাসিমা বেগম জানান, চলতি বছরে প্রায় তিনমাস আগে জাহিদ মিয়ার সাথে তার মেয়ের বিয়ে হয়। মেয়ের শ্বাশুরীর মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পেরে তিনি মেয়েকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে থানায় মামলাটি করেন।

ওই গৃহবধূর স্বামী জাহিদ মিয়া বলেন, সোবহান শেখের সাথে তিনি রাজমিস্ত্রীর কাজ করার সুবাদে সোবহান তাদের বাড়িতে প্রায়ই যাতায়াত করতেন। সেদিন রাতে বাড়িতে এসে দুজনকে কোমলপানীয় খেতে দেন সোবহান। এরপর তারা (স্বামী-স্ত্রী) ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম ভাঙার পর ঘটনার বিষয় টের পান। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খালেদুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে ওই নারীকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে প্রাথমিক পরীক্ষায় নিরীক্ষায় তার সন্তান নষ্ট হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারি।

ধর্ষণ চেষ্টার বিষয়টি গৃহবধু বললে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অন স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়েছে। শনিবার দুপুরে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা বোয়ালমারীর জয়নগর ফাঁড়ি ইনচার্জ সুব্রত কুমার রায় জানান, এ ঘটনায় গৃহবধুর মা বাদি হয়ে ধর্ষণ চেষ্টা অভিযোগ এনে একজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। গৃহবধু বতর্মানে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আসামি পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।