১৪ অক্টোবর বিশ্ব মান দিবস (World Standards Day)। ৩ টি আন্তর্জাতিক মান সংস্থা-ISO, IEC ও ITU এর সাথে একাত্ন হয়ে ১৭২ টি দেশে বিশ্ব মান দিবস পালিত হচ্ছে।এবারের বিশ্ব মান দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ VISION FOR A BETTER WORLD STANDARDS FOR SDGs’ যার ভাবার্থ ‘সমন্বিত উদ্যোগে উন্নত বিশ্ব বিনির্মাণে-মান’।এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হচ্ছে।

দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে ১৪ অক্টোবর (সোমবার) সকাল ১১ টায় বিএসটিআই রাজশাহী বিভাগীয় অফিসের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে শুধুমাত্র পণ্যের পরিমানকে প্রাধান্য না দিয়ে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থার উপর গুরুত্বারোপ করেন।টেকসই উন্নয়ন, টেকসই শিল্পায়ন ও বিদেশে পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধিতে পণ্যের সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ অতীব জরুরী।

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ভেজাল খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করার কারণে পৃথিবীতে একশ কোটি লোক প্রতিবছর মারাত্মকভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়, তারমধ্যে ১৫ কোটি লোক মারা যায়।ভেজাল খাদ্য খেয়ে বাংলাদেশে ৬০ শতাংশ লোক মারাত্মকভাবে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।তারমধ্যে ষাট ভাগ লোক দারিদ্র সীমার নিচে নেমে যায়। এদেশে ৭০ শতাংশ মৃত্যু দীর্ঘমেয়াদী বা অসংক্রমিত রোগে আক্রান্তের কারণে হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, মান যদি ঠিক না রাখা যায় তাহলে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যাবে না।বিএসটিআইয়ের সক্ষমতা বাড়িয়ে ভেজাল রোধ করে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে।একসময় বাটা জুতা খুবই জনপ্রিয় ছিল।কিন্তু ভেজালযুক্ত বাটা হয়ে যায় বালা।এভাবেই আমাদের দেশে নিখুঁতভাবে ভেজাল মেশানো হয় যেটা মানুষ টের পায় না।

তিনি আরও বলেন, তাবৎ পৃথিবীতে ব্র্যান্ডিংটা গুরুত্বপূর্ণ।এক্ষেত্রে আমাদের ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডিং প্রচার করতে হবে।ব্র্যান্ডিং মানে আপনার উপর পুরো আস্থা থাকতে হবে।যেটা আর কেউ করছে এটা গুণে, মানে ও ওজনে কোথাও কোনো ঘাটতি থাকতে পারবে না।তিনি সকলকে প্রতারণার দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বের হয়ে আসার আহবান জানান।

সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।বক্তব্যে তিনি খাদ্যে ভেজাল ও ওজনে কম প্রদানকারী সকলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান এবং জনসাধারণকে সাথে নিয়ে এ ধরণের গুরুতর অনিয়ম প্রতিহত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক যোবায়ের হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, ভেজাল বিরোধী মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক সহায়তা করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও সব ধরণের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু।তিনি বলেন, আমরা স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হয়েছি বিধায় আমাদেরকে ব্যবসা বাণিজ্যে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিদ্বন্বিতা করতে হবে।ব্যবসায়ী সংগঠন হিসেবে ভেজাল ও ওজনে কারচুপি রোধে সরকারকে সহযোগিতা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এছাড়াও বিশেষজ্ঞ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক এম এ রাশেদ কবির।তিনি তার বিশেষজ্ঞ বক্তব্যে বলেন, এ বছর মান দিবসের প্রতিপাদ্যে এসডিজির গোল-৩ (Good Health & well being) অর্থাৎ স্বাস্থ্য খাতকে ফোকাস করা হয়েছে।স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ব্যবস্থা, রোবোটিক্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় যোগ করেছে নতুন মাত্রা।এ সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত বিবরণ দেন।

উক্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিএসটিআই’র পরিচালক জোহুরা সিকদার (অতিরিক্ত দায়িত্ব)।

সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) অর্জনের জন্য শিল্প খাতের উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, সমন্বিত উদ্যোগে সবাই মিলে একসাথে কাজ করলে টেকসই উন্নত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে।

আলোচনা সভায় রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন শিল্প-কারখানা ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, মহানগরীর গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সুধীজন এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।