বগুড়ার গাবতলীতে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সক্রিয় সদস্য’ ওয়ালিউল্লাহ অলিকে (৪৫) গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার সকালে উপজেলার গোলাবাড়ী বন্দর এলাকার ভাড়া বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার কাছে ২৩টি নিষিদ্ধ জিহাদি বই পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে এসআই রেজাউল তার বিরুদ্ধে গাবতলী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেছেন। ওই দিন সন্ধ্যায় তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ওসি সনাতন চন্দ্র সরকার জানান, অলিকে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
তবে অলির স্ত্রী দাবি করেছেন, তিনি পারিবারিক বিরোধের বলি হয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, ওয়ালিউল্লাহ অলি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের কর্ণিপাড়া গ্রামের মৃত কলিম উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে। তিনি পল্লীমঙ্গল বাড়ুইপাড়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয়ের ইসলাম ধর্ম বিষয়ের সহকারী শিক্ষক। অলি জেএমবির অপারেশন কমান্ডার ফাঁসিতে মৃত সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইয়ের ভাতিজা। স্ত্রীর চাকরির কারণে তিনি গোলাবাড়ী বন্দরে দুই সন্তান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। তার বিরুদ্ধে গত ২০১৭ সালে সন্ত্রাসবিরোধী মামলা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার বগুড়া পুলিশের মিডিয়া উইং থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পুরাতন জেএমবির কতিপয় সদস্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাবতলী উপজেলা এলাকায় আসে। তারা উত্তরবঙ্গে তাদের বর্তমান কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন পূর্বক হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করে দেশকে অস্থিতিশীল, অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত এবং আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন করার লক্ষ্যে বৈঠক করবে।
বুধবার ভোরে তারা বৈঠকের প্রস্তুতি নিলে সেখানে অভিযান চালানো হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অপর জঙ্গি গাবতলীর রানীরপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল হামিদের ছেলে আহসান হাবিব ওরফে জামাত আলীসহ (৪৩) অজ্ঞাতনামা ৬-৭ জন পালিয়ে গেলেও জেএমবির সক্রিয় সদস্য ওয়ালিউল্লাহ অলিকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার হেফাজত হতে ২৩টি নিষিদ্ধ ঘোষিত জিহাদি বই পাওয়া যায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওয়ালিউল্লাহ অলি পুলিশকে জানান, তিনি জেএমবির সক্রিয় সদস্য; দায়িত্বশীল ব্যক্তি। পুরাতন কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। তার বিরুদ্ধে গত ২০১৭ সালে সন্ত্রাসীবিরোধী মামলা হওয়ার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুরাতন জেএমবি সদস্যদের সুসংগঠিত করতে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তারা কয়েকজন সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় গাবতলীর গোলাবাড়ী বন্দর এলাকায় একত্রিত হয়েছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, পরস্পর যোগসাজশে দেশকে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন, হত্যাসহ গুরুতর আঘাত ও রাষ্ট্রের ক্ষতি করা। এছাড়া দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাড়িতে নিষিদ্ধ জিহাদি বই সংরক্ষণ করেন।
গাবতলী থানার ওসি সনাতন চন্দ্র সরকার জানান, গ্রেফতার জঙ্গি ওয়ালিউল্লাহ অলিকে বুধবার সন্ধ্যায় বগুড়ার আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আদালত পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানাবেন। পরে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। তার বিরুদ্ধে এসআই রেজাউল সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেছেন।
এদিকে ওয়ালিউল্লাহ অলির স্ত্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফাহিমা আকতার ও স্বজনরা দাবি করেন, তিনি (অলি) কখনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নন। তার শ্বশুর কাজী; তিনি বয়সের কারণে এর লাইসেন্স অলিকে দিয়ে যেতে চান কিন্তু চাচা শ্বশুর এতে বাধা দেন। এতে শ্বশুর ও চাচা শ্বশুরের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। চাচা শ্বশুরের আত্মীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রভাবশালী সদস্য। কাজীর লাইসেন্স নিয়ে পারিবারিক বিরোধের জেরে অলিকে জঙ্গি সাজিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পল্লীমঙ্গল বাড়ুইপাড়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বজলুর রশিদ জানান, ওয়ালিউল্লাহ অলি তার প্রতিষ্ঠানে গত ২০ বছর ধরে ইসলাম ধর্ম বিষয়ে শিক্ষকতা করছেন। তিনি কখনো তাকে জঙ্গি সংক্রান্ত বা অন্যকোনো দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে দেখেননি।
অলির স্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধান শিক্ষক আরও জানান, অলি পারিবারিক বিরোধের বলি হয়েছেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।