• আজ ১৭ই নভেম্বর। ১৯৬৭ সালের এই দিনে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন দেশের খ্যাতিমান বিজ্ঞানী প্রয়াত ডঃ এম এ ওয়াজেদ আলী মিয়া (সুধা মিয়া) ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

    সুমনসেন চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি-

“আইয়ুব খানের গোয়েন্দারা জানান দিয়েছিলো, শেখ মুজিবের মেয়েকে যে বিয়ে করবে তাঁকেও রাজবন্দী করা হবে। বঙ্গবন্ধু তখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বন্দী। কন্যাদায়গ্রস্ত মাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মেয়েকে পাত্রস্থ করার দায়ীত্ব অর্পন করলেন পীরগঞ্জের শিল্পপতি,পরবর্তীতে রংপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মতিউর রহমানকে।

মতিউর রহমান এবং তাঁর স্ত্রী মিলে অনেক ভেবেচিন্তে পরমাণু বিজ্ঞানী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬১-৬২ইং সেশনে ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্রসংসদে ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত সাবেক ভিপি,বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত স্নেহভাজন,পীরগঞ্জের কৃতিসন্তান এম,এ ওয়াজেদ (সুধা)মিয়াকে পাত্র হিসাবে পছন্দ করলেন।

জেলগেটে বঙ্গবন্ধুকে জানানো হলো,তিনি একবাক্যে রাজি।বেগম মুজিব রাজি। কিন্তু পাত্রের কথা–“যাকে আমি মুজিব ভাই বলে ডেকেছি,তাঁকে আমি আব্বাজান বলে কিভাবে ডাকবো?”
মতিউর রহমান তখন প্রত্যুত্তরে বললেন–“শেখ মুজিবকে সবাই মুজিব ভাই বলেই ডাকে। ওটা রাজনৈতিক সম্বোধন। বিয়ের পর হবে আত্মীয়তার সম্বোধন। এতে সংকোচের কিছু নাই।”

রাজি হলেন ওয়াজেদ সাহেব।ইনগেজমেন্টও সম্পন্ন হলো।একদিন ওয়াজেদ সাহেব অফিস থেকে ফিরতেই, পোশাক বদল করার পূর্বেই মতিউর রহমান তাঁর গাড়িতে করে নিয়ে গেলেন ওয়াজেদ সাহেবকে। গাড়িতে যেতেই বললেন, আজ তোমার (আকদ)বিয়ে। একথায় ওয়াজেদ সাহেব একটু ইতস্তত করেছিলেন আত্মীয় স্বজনদের অনুপস্থিতির জন্য।

আজ শুধু বিয়ে পড়ানো হবে,পরবর্তীতে তুলে নেওয়া হবে–মতিউর রহমানের এমন সিদ্ধান্তে স্যুট পরিহিত অবস্থায় নামাজ পড়া টুপি মাথায় দিয়ে আইয়ুব খানের গোয়েন্দা বাহিনীর নজর এড়িয়ে শুনশান নিরবতায় কয়েকজন মুরুব্বীর উপস্থিতিতে শবে বরাতের রাতে পঁচিশ হাজার টাকা দেনমোহরানায় শেখ হাসিনাকে বিয়ে করেন ওয়াজেদ সাহেব।বিয়েতে ওয়াজেদ সাহেবের একজন ভাগ্নে উপস্থিত ছিলেন।তিনি ঢাকাতেই থাকতেন।

ওয়াজেদ সাহেব বিয়েতে মুজিবকন্যার জন্য স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে একটি লাল-গোলাপী বিয়ের শাড়ী, একটি ক্রিম কালারের স্যুটকেস,এক জোড়া স্যান্ডেল কেনেন। হাতে তখন টাকা ছিলো না,বিধায় বেগম মতিউর এগুলোর দাম মিটিয়েছিলেন।

১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বরের সেই রাতে ৩২ নম্বরের বাসভবনে কোন ক্যামেরাম্যান ছিলেন না। তাঁদের বিয়ের কোন ছবি নেই।পরদিন সংবাদপত্রে শিরোনাম ছিলো–

“অনাড়ম্বর পরিবেশে শেখ মুজিবের মেয়ের বিবাহ সম্পন্ন।”

সেদিন জেলগেটে একটি কক্ষে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে গেলে বঙ্গবন্ধু জামাইকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। রাজবন্দী শেখ মুজিব একটি রোলেক্স ঘড়ি তাঁর জেষ্ঠ্য জামাইকে উপহার দিয়েছিলেন।”