শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ই-পেপার | আজকের পত্রিকা | আর্কাইভ | কনভার্টার অর্গানাইজেশন

ধর্ষকের সাথে ক্ষতিগ্রস্তের বিয়ে: ‘ধর্ষণের অপরাধ আপোসযোগ্য নয়’ বললেন মন্ত্রী

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে পর পর কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলনের মুখে এই অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে।

বাংলাদেশের ফেনী ও নাটোর জেলা থেকে ধর্ষণের শিকার এবং ধর্ষকের মধ্যে বিয়ে দেয়ার দুটি ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।

এর একটি ঘটেছে কারাগারে, আকেটি আদালত চত্বরে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে এতে আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বলেছেন, আইনে ধর্ষণের অপরাধ আপোসযোগ্য নয়।

ধর্ষণের অভিযোগে মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশের পর বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী তরুণীর সাথে অভিযুক্তের বিয়ে দেয়া হয় ফেনী জেলা কারাগারে।

সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, হাইকোর্ট বিয়ের আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছিল এবং সে অনুযায়ী ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্তের উপস্থিতিতে এবং সম্মতির ভিত্তিতে স্থানীয় প্রশাসন এই বিয়ের আয়োজন করেছিল।

উত্তরের জেলা নাটোরেও বৃহস্পতিবার আরেকটি ধর্ষণ মামলায় সেখানকার একটি আদালত চত্বরে ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্তের মধ্যে বিয়ে দেয়া হয়।

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রামের একজন তরুণী তার প্রতিবেশী একজন যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেছিলেন প্রায় ছয় মাস আগে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের সেই মামলা দায়েরের পর থেকেই ঐ যুবক গ্রেপ্তার রয়েছেন ফেনী জেলা কারাগারে।

অভিযুক্তের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করা হয়েছিল।

ধর্ষণের মামলার সরকারি আইনজীবী কাজী বুলবুল আহমেদ সোহাগ জানিয়েছেন, উভয়ের পরিবারের মধ্যে আপোস মীমাংসা হয়েছে এবং অভিযুক্ত ভুক্তভোগীকে বিয়ে করবে-এই বিষয়টি জামিনের আবেদনের শুনানীতে আদালতকে জানানো হয়।

তখন হাইকোর্ট কারা ফটকে বিয়ের আয়োজন করার জন্য ফেনী জেলা প্রশাসন এবং কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার প্রশাসনের আয়োজনে বিয়ের অনুষ্ঠানে এই সরকারি আইনজীবীও উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেছেন, ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত এবং উভয়ের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতি বিয়ের অনুষ্ঠান করা হয়েছে।

“কারাগারে জেলারের অফিসে এই বিয়ে হয়। সেখানে ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্ত মানে বর-কনে এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। কাজী বিয়ে পড়িয়েছেন। বাদী এবং দুই পক্ষের আইনজীবীরা ছিলাম। এছাড়া জেলার প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কারাগারের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের পর মিষ্টিমূখ করা হয়েছে। বিয়ের দেনমোহর ধার্য হয়েছে ছয় লাখ টাকা।”

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ব্যাপক আন্দোলন হয়েছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ব্যাপক আন্দোলন হয়েছিল।
ভুক্তভোগী তরুণীর মামা মো: আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, তার ভাগ্নি এবং অভিযুক্তের মধ্যে আগে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছিল-এই অভিযোগে তারা মামলা করেছিলেন।

মি: সুফিয়ান আরও বলেছেন, তারা দুই পরিবার এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা কয়েকদফা আলোচনার পর সমঝোতায় আসেন। তাদের আপোস মীমাংসার ওপর ভিত্তি করে হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী এখন বিয়ে হলো।

এতে দুই পরিবারই খুশি বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেছেন, “আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে আপোস মীমাংসা হয়। মেয়ে এবং ছেলে দুই জনই বিয়ের ব্যাপারে রাজি হয়। হাইকোর্টেরও নির্দেশ আসে। এই এই বিয়ে হওয়ার পর আমরা আশা করি,মেয়েটা যেন সুখে শান্তিতে থাকে। মেয়েটার ওপর যেন আর কোন নির্যাতন না হয়।”

তবে সরকারি আইনজীবী কাজী বুলবুল আহমেদ সোহাগ জানিয়েছেন, বিয়ে হলেও ধর্ষণ মামলা প্রত্যাহারের সুযোগ নাই। এটা আদালত থেক্বে নিস্পত্তি হতে হবে।

তিনি বলেছেন, এই বিয়ে হওয়ার রিপোর্ট এখন হাইকোর্টে যাবে এবং তারপর আদালত জামিন দেয়া না দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে। আর ধর্ষণ মামলাটির ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী যেহেতু আর এগুবে না, সেজন্য পুলিশ আপোস মীমাংসা এবং বিয়ের বিষয়ে বিচারের আদালতে রিপোর্ট দেবে। আদালত সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে মামলা নিস্পত্তি করবে।

নাটোরে আরেকটি ঘটনা

বৃহস্পতিবার আরেকটি বিয়ের ঘটনা ঘটেছে উক্করাঞ্চলীয় জেলা নাটোরে।

সেখানে আদালত চত্বরে ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত এবং ভুক্তভোগীর মধ্যে এই বিয়ে অনুষ্ঠান হয়েছে।

নাটোরের গুরুদাসপুর থানায় একজন তরুনী ধর্ষণের অভিযোগে একজন যুবকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার থাকা অভিযুক্তের জামিনে আবেদন নাটোর জেলা দায়রা জজ আদালত নামঞ্জুর করেছিল।

স্থানীয় একজন আইনজীবী জানিয়েছেন, জামিন নাকচ হওয়ার পর দুই পরিবার সমঝোতায় আসে এবং তা আদালতকে জানানো হলে বৃহস্পতিবার আদালত চত্বরে আদালতের নিকাহ রেজিস্টার দু’জনের উপস্থিতিতে সাড়ে চার লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে বিয়ে নিবন্ধন করেন। এরপর আদালত গ্রেপ্তার থাকা যুবককে জামিন দেয়।

তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, ধর্ষণের মামলায় আপোস মীমাংসা মাধ্যমের ধর্ষণের শিকার এবং ধর্ষকের বিয়ের ঘটনায় আইনের ব্যপ্তয় হচ্ছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নীনা গোস্বামী বলেছেন, “আমাদের সমাজে এ ধরনের বিয়ে অপ্রচলিত তা কিন্তু নয়। অনেক সময় এটা হয়ে থাকে। বিশেষ করে গ্রাম পর্যায়ে সেই একই বিষয় যে সালিশের মাধ্যমে তারা বিয়ে দিয়ে দেয়। এটা বোধায় একটু অন্যভাবে দেখার বিষয় আছে। আমাদের সমাজে যদি ধর্ষকের সাথে বিয়ে হতেই থাকে, তাতে এমন অপরাধে আরও উৎসাহ যোগাবে।”

তিনি আরও বলেছেন, “আইনে অবশ্যই বিষয় আছে যে, ধর্ষণের মামলা আপোস যোগ্য নাকি আপোসযোগ্য না। সেই দৃষ্টিতে দেখলে এগুলো আপোসযোগ্য না।”

এদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসিকে বলেছেন, ধর্ষণের অপরাধ আপোসযোগ্য নয়-এটা আইনে রয়েছে।

GiGLovin
GiGLovin Marketplace - Buy Sell Digital Product Safely

দেশ-বিদেশের সকল খবর সবার আগে পেতে কলম কথা এর ইউটিউব চ্যানেল এ সাবস্ক্রাইব করুন

দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।