বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি: ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে নিরাপরাধ এক সরকারী কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য মূলক ভাবে হত্যামামলার আসামি বানিয়ে হেনস্থার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকায় কোন রাজনীতি বা দ্বন্দ্ব-কলহের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও কেবল প্রতিহিংসা বসতঃ এবং অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা
মো. আরিফুর রহমানকে একটি জোড়া খুনের মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় সচেতন মহলে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। জানা যায়, উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ী গ্রামের মৃত মুক্তিযোদ্ধা মো. বজলুর রহমানের বড় ছেলে আরিফুর রহমান দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসাবে চাকুরী করে আসছেন।
চাকরি সূত্রে তাকে সংসার জীবনের বেশীর ভাগ সময় এলাকার বাইরে কাটাতে হয়। কালে-ভদ্রে তিনি এলাকায় এসে গরীব-অসহায়দের সেবাশুশ্রূষা করে থাকেন। ফলে এলাকাবাসীর কাছেও আরিফ সজ্জন মানুষ হিসাবে পরিচিত। আরিফুর রহমানের আরেক ভাই শরীফুর রহমান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট হিসাবে কর্মরত রয়েছেন।
এক বোন সহকারী কাস্টমস অফিসার। ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান যুক্ত আইন পেশায়। মোট কথা মৃত বীরমুক্তিযোদ্ধা বজলুর রহমানের পরিবার শুধু গোহাইলবাড়ীতেই নয় গোটা বোয়ালমারী উপজেলায় একটি অভিজাত- সম্ভ্রান্ত পরিবার হিসাবে সুপরিচিত। এর সদস্যরা গ্রাম্য কোন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও বজলুর রহমানের জ্ঞাতিগুষ্টির কেউ-কেউ স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. ফারুক হোসেনের সঙ্গে রাজনীতি করেন।
আর জ্ঞাতিগুষ্টির দু’একজন লোকের এই রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাই কাল হয়ে দাড়িয়েছে আরিফুর রহমানের জীবনে। এলাকায় চেয়ারম্যান ফারুক হোসেনের মূল প্রতিপক্ষ হলো অপর এক আওয়ামী লীগ নেতা মো. মোস্তফা জামান সিদ্দিকী। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, গত ইউপি নির্বাচন সহ গ্রাম্য নানা ইস্যুতে তাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিলো দীর্ঘদিন ধরে।
এরই রেশ ধরে গত ৩ মে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন দুই পক্ষের সংঘর্ষে মোস্তফা জামান সিদ্দিকীর দলের দুই ব্যাক্তি নিহত হন। এই হত্যাকান্ডকে ঘিরে শুরু হয় মোস্তফা জামানের নতুন রাজনীতি। প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা,ভাংচুর, লুটপাট,অগ্নি সংযোগ সহ নানাবিধ সহিংস কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি চলে আসামি বাণিজ্য। যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
বাদী পক্ষের এই প্রতিহিংসা মূলক কার্যকলাপ থেকে প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকের সমর্থকরাও রেহাই পাচ্ছে না বলে জানা যায়। এ দিকে ঘোষপুর ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান এসএম ফারুক হোসেন সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না। সে সংঘর্ষর খবর মোবাইলে শোনেন। তারপরও তাকে হত্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
আরিফুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার পর মামলায় আসামী বানানোর ভয় দেখিয়ে তার কাছে মোস্তফা জামান ১০ লক্ষ টাকা দাবী করেন। কিন্তু এই অন্যায় দাবী মেনে না নেওয়ায় আক্রোশবসত আরিফুর রহমানকে ৪ নং আসামি করেন বাদী মোস্তফা জামান সিদ্দিকী। উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে থাকা আরিফুর রহমান আরো বলেন, কর্মসূত্রে আমরা সবাই বাইরে থাকি।
তাই এলাকার রাজনীতি করার সুযোগ কোথায়? ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসে নামাজ শেষ করে টিভি দেখছিলাম। গোলমালের সময়ও যে বাড়িতেই ছিলাম সেটা আমার সিসি ক্যামেরা ঘাটলে প্রমাণ পাওয়া যাবে। শুধু আমাকেই নয় আমার আইনজীবী ছোট ভাই মাহবুবুর রহমানকেও অন্যায় ভাবে আসামি করা হয়েছে বলে জানান আরিফুর রহমান। এলাকার সাবেক মেম্বার ফজলুল হক বলেন,আরিফুর রহমানরা একটি শিক্ষিত,সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান।
গ্রামের নোংরা রাজনীতি তারা করেন না। অসৎ উদ্দেশ্যে চরম অন্যায়ভাবে হত্যা মামলায় তাদের ফাঁসানো হয়েছে। আরিফুর রহমানের বৃদ্ধা মা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার সন্তানরা নির্দোষ। তারা সমাজের মানুষের ভালো ছাড়া কখনই খারাপ কিছু করেন না। অসৎ উদ্দেশ্যে তাদের মামলায় জড়িয়ে হেনস্তা করা হচ্ছে।
আমি সমাজ ও রাষ্ট্রের সকলের কাছে আমার সন্তানদের জন্য সহযোগিতা চাই। মামলার বাদী মোস্তাফা জামান সিদ্দিকী বলেন, আরিফুর রহমান খুনের সাথে জড়িত ছিল তাই তাকে আসামী করা হয়েছে। তাকে ওই সময় অনেকে দেখেছে। আমি তার কাছে কোন টাকা চায়নি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মামুন ইসলাম বলেন, মামলা তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে ম্যাজিস্ট্রেট বুজবেন সে দোষী না নির্দোষী।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।