মাথার ওপর সূর্যের প্রচণ্ড বিকিরণ, পায়ের নিচে উত্তপ্ত পিচঢালা রাজপথ। এরই মধ্যে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার হেঁটে চলেছেন হাজার হাজার মানুষ। হাঁটতে হাঁটতে ঘেমে-নেয়ে একাকার। কিন্তু তারপরও যেন ক্লান্তি নেই কারো চোখে-মুখে। বরং হাতে হাতে জাতীয়-দলীয় পতাকা, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যুবলীগের চেয়াম্যান ও সম্পাদকের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড ও সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের গুণগান করে মুখে মুখে বজ্রকণ্ঠে স্লোগান। জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু, উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার। ‘শেখ হাসিনা সরকার, বারবার দরকার, যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা, ঠাকুরগাঁও ২ আসনে জুয়েল ভাইকে “এমপি হিসেবে দেখতে চাই, সুখে-দুঃখে যাকে পাই সে আমাদের জুয়েল ভাই, নেত্রী কাছে একটাই দাবি আলী আসলাম জুয়েল ভাই নৌকার যোগ্য প্রার্থী। বিভিন্ন স্লোগানে নেতাকর্মীরা সমবেত হন সমাবেশস্থলে।
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও সাফল্য প্রচার এবং আগামী নির্বাচনে নৌকার জয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যুব সমাবেশে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামিয়ে স্মরণকালের বড় জমায়েত করে দেখাল বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা যুবলীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আসলাম জুয়েল।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরের আগেই উপজেলা আওয়ামী যুবলীগ আয়োজিত যুব সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয় উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা মাঠ। পুরো মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। আশপাশের সড়কগুলোতেও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। নীল, সবুজ, হলুদসহ নানা রঙের টি-শাট ও টুপি পরে নেতকর্মীরা বাস, পিকআপ, মোটরসাইকেলে করে আসেন সমাবেশে। অনেকে আবার হেঁটে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমানের সভাপতিত্বে যুব সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোহাম্মদ আলী।
গেস্ট অব অনার উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক এড: আবু হাসনাত বাবু।
প্রধান বক্তা উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ঠাকুরগাঁও ২ আসনের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী আলী আসলাম জুয়েল।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, বড় বাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিলকিস বানু লাভলী, জুলফিকার আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, প্রভাষক হুমায়ূন কবির, বড়বাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রহমতুল্লাহ।
এরপরই সাড়ে ৪টায় এক এক করে মঞ্চে আসেন অতিথিরা। পরস্পর বক্তব্যে বিএনপি দু-একটি সমাবেশ করে যে আতঙ্ক ছড়াতে চায় তার জবাব দিতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ সর্বদা প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেন নেতারা।
প্রভাষক হুমায়ূন কবির বলেন, সরকার জাতীয় যুব কাউন্সিল গঠন করেছে, যুব উদ্যোক্তা নীতি এবং যুব প্রশিক্ষণ নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে সংগতি রেখে যুব প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আধুনিকায়ন করেছে। ‘বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। যুব কমসংস্থান ও নারীর ক্ষমতায়নে কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতীয় যুব পুরস্কার নীতিমালার আওতায় সারা দেশে জাতীয় পুরস্কার দেয়া হচ্ছে।
বিলকিস বানু লাভলী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তাবায়নে নেত্রী রাত- দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা আসার পর কর্মস্থান সৃষ্টি করেছে। এখন কোন নারী বেকার নেই।
বিশেষ অথিতি জুলফিকার আলী বলেন, সরকার যুবকদের উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করতে, বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষিত যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। যুব কর্মসংস্থানের জন্য যুবদের ঋণ দেয়া হয়েছে। যুব কল্যাণ তহবিলের মাধ্যমে যুব সংগঠনগুলোকে অনুদান দেয়া হচ্ছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে দলটির নেতাকর্মীরা বিদেশি ঋণ, গণতন্ত্র এমনকি সুযোগ পেলে বাংলাদেশকেও গিলে খাবে।
বিএনপির উদ্দেশ্যে গেস্ট অব অনার এড: আবু
হাসনাত বাবু বলেন, পাগলে কি-না কয়, ছাগলে কি-না খায়? ওরা পাগল, ওরা খুনি। তারেক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত, খালেদা জিয়াও তো দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তারা আবার ভয় দেখায়। আওয়ামী লীগ পালাবার পথ পাবে না। আওয়ামী লীগ পালানোর দল না। আপনাদের কথা আর দুই-একটি কর্মসূচিতে সরকার পড়ে যাবে না। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠন ফুঁ দিলেই উড়ে যাবে না।
যুব সমাবেশে প্রধান অতিথি বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণমুখী নেতৃত্বে সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বজয়ের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে চলছে। বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত তিন মেয়াদে যে উন্নয়ন করেছে তা নজিরবিহীন। শেখ হাসিনার হাত ধরেই বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এক বিস্ময় বিশ্ববাসীর কাছে।
নেতাকর্মীদের সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যুবলীগ কথা রেখেছে। যুবলীগের সম্মেলন জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে।
যুব সমাবেশের সভাপতি মাজেদুর রহমান বলেন, বিএনপি জামায়াত ক্লিন হার্ট অপারেশনের নামে শত শত যুবলীগ নেতাকর্মী হত্যা করেছিলেন। আজকে তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বাংলাদেশে আতঙ্ক ছড়াতে চায়। তাদের যথাযথ জবাব দিতে প্রস্তুত এই যুবসমাজ। তরুণদেরকে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ও দেশের উন্নয়নে যুবসমাজকে সংযুক্ত করে তাদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করতে বিভিন্ন পর্যায়ে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে সরকার। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর জাতীয় উন্নয়নে যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে যুব কল্যাণমূলক বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছিলেন। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় তিনি যুব হোস্টেল ও যুব কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।
যুব সমাবেশের প্রধান বক্তা আলী আসলাম জুয়েল বলেন, বিপুলসংখ্যক যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার বেসরকারি খাতে ব্যাংক, বীমা, টেলিভিশন এবং রেডিওসহ সবকিছু দিয়েছে। সরকার প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে যেন যুবকরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চাকরির জন্য বিদেশে যেতে পারে এবং এভাবে তারা তাদের পৈতৃক সম্পত্তি ও জিনিসপত্র সংরক্ষণ করতে পারে। যুবকদের কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে কোনো গ্যারান্টি ছাড়াই ঋণ দেওয়া হচ্ছে কারণ তারা যেন উদ্যোক্তা হতে পারে এবং অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। আর বিএনপি যুবসমাজের হাতে অস্ত্র, মাদক তুলে দিয়ে তাদের বিপথে পরিচালিত করেছিলেন। তারা যুবসমাজের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন।
আলী আসলাম জুয়েল বলেন, বিএনপি জামায়েত আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছে। অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারা। শত-শত নারীর সম্ভ্রম আপনার নষ্ট করেছেন। এই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই যুবসমাজ ঐক্যবদ্ধ। আওয়ামীলীগ সরকারের গত তিন মেয়াদের সাফল্যগুলো হলো, সমুদ্র বিজয়, পদ্মা সেতু, রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল, সারা বাংলাদেশ মোদির মসজিদ, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সীমান্ত চুক্তি, পায়রা সমুদ্র বন্দর, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প, ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়।
নেতাকর্মীদের কয়েকটি দাবি জানিয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আলী আসলাম জুয়েল বলেন, ‘এই মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে আমি আমার যুবলীগের ভাইদের কাছে দাবি রাখতে চাই। সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে গিয়ে, ভাই-ভাইয়ের সাথে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করে, নিঃশর্তভাবে ঐক্যের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করতে হবে।
আমি বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সব সহযোগী সংগঠনের মধ্যে যদি ঐক্য-সমন্বয় থাকে, তাহলে কোনো যুদ্ধপরাধী, রাজাকার, আল বদরের বংশধররা বাংলাদেশের মুক্তিযদ্ধের পক্ষের শক্তিকে পরাজিত করতে পারবে না। যে উন্নয়ন বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাদের এ দেশকে দিয়েছেন, সেই অর্জনগুলোকে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে। জনসংযোগ বাড়াতে হবে এবং মানুষকে জ্ঞাত করতে হবে। বিএনপি প্রপাগান্ডার রাজনীতি করে। এ প্রপাগান্ডা আমাদের খণ্ডন করতে হবে। বিএনপির মিথ্যাকে আমাদের সত্য দিয়ে ঢাকতে হবে এবং এই সত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিএনপিকে আমরা পরাজিত করব।
তিনি বলেন, অনেক শান্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের রেখেছেন। আমাদের এখন বিনিদ্র রাত কাটিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আনতে হবে। চলেন এ কয়েক মাস আমরা পরিবার-বন্ধু ভুলে গিয়ে শুধু দুটি কথা মাথায় রাখি, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের মার্কা নৌকা মার্কা। ৩ মাস পর যে বিজয় আমরা অর্জন করব, তারপর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর কোনো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি দাঁড়াতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, এলাকার সকল শ্রেণী পেশার মানুষ আমাকে এমপি হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই আমাদের। তিনি চাইলে মনোনয়ন নিয়ে ঠাকুরগাঁ ২ আসনের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবো বলে জানান এই তরুন নেতা।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।