বাস চলাচল বন্ধের কারণে বিকল্প পন্থায় বিএনপির আজকের গণসমাবেশে যোগ দিতে খুলনা অভিমুখে যাচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এক্ষেত্রে ট্রেন আর ছোট বাহনের উপরেই ভরসা তাদের। শুক্রবার বিকেল ৩টার মধ্যে এভাবে হাজার হাজার নেতাকর্মী আশপাশের জেলাগুলো থেকে খুলনায় জড়ো হয়েছেন।

গভীর রাত পর্যন্ত তারা দলের জেলা কার্যালয় চত্বরে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে রাখেন। বিএনপি নেতারা বলেছেন, ‘সরকার যত প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করুক না কেন খুলনার সমাবেশে লাখো মানুষের জমায়েত হবেই’।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নেতাকর্মীদের নামে মামলা এবং তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে গণসমাবেশের কর্মসূচি পালন করছে। চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচি ইতিমধ্যে ময়মনসিংহতে পালিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ খুলনার সোনালী ব্যাংক চত্বরে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
গণসমাবেশকে সামনে রেখে বিএনপির নেতৃবৃন্দ দিনরাত কর্মসূচি পালন করলেও তাদের লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতির প্রত্যাশায় ধাক্কা লাগে ২১-২২ অক্টোবর খুলনায় বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণায়। যাত্রীভাড়া বৃদ্ধির দাবি তুলে খুলনা বাস ও পরিবহন মালিক সমিতি এবং শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের যৌথ সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শুক্রবার এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়। যশোর থেকে অন্যান্য রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করলেও খুলনার উদ্দেশ্যে কোন বাস ছেড়ে যায়নি। সকাল থেকেই শংকরপুরস্থ যশোর কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালের সামনের যশোর-খুলনা মহাসড়কে এই রুটে চলাচলকারী বাসগুলোকে অলস পড়ে থাকতে দেখা যায়। বিকেলের দিকে খুলনাগামী সকল লঞ্চ বন্ধ ঘোষণা করে মালিকরা। সন্ধ্যায় রূপসা ঘাটের ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে আজ ট্রলার, নৌকাসহ সকল নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, পরিবহন ধর্মঘটের পর দলীয় নেতাকর্মীরা, মাইক্রোবাস, পিকআপ, প্রাইভেটকারসহ ছোট ছোট বাহন ঠিক করেন। ভাড়া করা বাহনের চালকদের তারা অগ্রিমও দেন। কিন্তু অনেকেই চাপে পড়ে সেই অগ্রিম ফেরত দিয়েছেন।

বিএনপি নেতাদের দাবি, সরকার পরিকল্পিতভাবে গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে মালিক-শ্রমিকদের ঘাড়ে ভর করে খুলনায় বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। তবে, আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, এর সাথে সরকারে কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। সরকার সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত না, বরং সঠিকভাবে বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
এদিকে, খুলনায় বাস চলাচল বন্ধের কারণে শুক্রবার সকাল থেকে যশোর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা এবং বাগেরহাট থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিকল্প পথে ছোট দলে বিভক্ত হয়ে খুলনায় পৌঁছাতে শুরু করেন। এক্ষেত্রে তারা সড়ক-মহাসড়কে চলাচলকারী ছোট যানবাহনগুলোকেই বেছে নেন। ভেঙে ভেঙে নেতাকর্মীরা খুলনায় যান। অন্যান্য যাত্রীদেরকেও এভাবে কষ্ট স্বীকার করে খুলনায় যেতে দেখা যায়। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ এবং যশোর থেকে নেতাকর্মীরা ট্রেনে চেপে খুলনায় পৌঁছেছেন। সন্ধ্যার দিকে বগি ও ছাদে ঠাসাঠাসি করা যাত্রীবাহী ট্রেন খুলনায় পৌঁছে। এসব যাত্রীর অধিকাংশই ছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। খুলনা, বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলার মানুষ ট্রলারে করে খুলনায় এসেছেন। তারা দলের ব্যানার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে খুলনায় জড়ো হন। বিএনপি নেতাদের দাবি, আজও ভোর থেকে বিকল্প পন্থায় নেতাকর্মীরা বিভাগের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খুলনায় এসে পৌঁছাবেন।

এদিকে, আজকের গণসমাবেশ সফল করতে স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় যেসব নেতা বেশ কয়েক দিন থেকে ব্যাপক তৎপর তাদের মধ্যে অন্যতম বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তার নিজের জেলা যশোর থেকেও সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মী এই সমাবেশে যাতে যোগ দিতে পারেন সে ব্যাপারেও তার নির্দেশনা রয়েছে বলে দলের স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। স্থানীয় নেতারা বলেছেন, শুধু যশোর থেকেই অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নির্দেশে প্রায় ৫০ হাজার নেতাকর্মী আজকের গণসমাবেশে যোগ দেবেন। যাদের অধিকাংশই বিকল্প পন্থায় শুক্রবার রাতের মধ্যে খুলনায় পৌঁছেছেন বলে নেতারা দাবি করেছেন।

যশোর জেলা বিএনপির একাধিক নেতা গ্রামের কাগজকে বলেছেন, ‘সমাবেশের মাত্র দু’দিন আগে খুলনা বিভাগের পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠন খুলনা অভিমুখে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় কিছুটা হলেও হোঁচট খান বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। যদিও গত দু’দিনে সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠা গেছে’।
তারা বলছেন, পরিবহন চালু থাকলে নেতাকর্মীরা সহজেই খুলনায় যেতে পারতেন। পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয়ার কারণে তাদের যেতে হয়তো একটু কষ্ট হবে, কিন্তু থামাতে পারবে না। যেকোনোভাবেই তারা খুলনায় পৌঁছাবেনই।

যশোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, বিএনপি গণমানুষের স্বার্থের বিষয়টি মাথায় নিয়ে বিভিন্ন বিভাগে সমাবেশ ডেকেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ আজ দিশেহারা। সেদিকে সরকারের নজর নেই। অথচ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নানাভাবে নির্যাতন, হয়রানি এমনকি খুন করা হচ্ছে। এসবের প্রতিবাদে সমাবেশ ডাকা হয়েছে। আর এই সমাবেশ পন্ড করতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে মানুষকে হয়রানি করছে। যত যাই করুক না কেন খুলনার গণসমাবেশ সফল হবে।

খুলনা ব্যুরো থেকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার বিকেল ৩টার মধ্যেই বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ৩০ হাজার নেতাকর্মী ট্রেন ও ছোট যানবাহনে চড়ে খুলনায় এসে পৌঁছেছেন। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নেতাকর্মীদের আগমন অব্যাহত ছিল। রাত ১০টার দিকে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দলের খুলনা জেলা কার্যালয়ের সামনে হাজার হাজার নেতাকর্মী স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে রাখে। তারা সারারাত রাজপথেই অবস্থান করবেন বলে স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন। অন্যান্য সূত্র থেকে জানা গেছে, অনেক নেতাকর্মী আগে থেকেই খুলনায় এসে আত্মীয়সহ বিকল্প আশ্রয়ে অবস্থান করছেন।

আজকের গণসমাবেশ উপলক্ষে গতকাল খুলনা বিএনপি অফিসে প্রেস ব্রিফিং করেন চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামছুজ্জামান দুদু। ওইসময় আনুমানিক ১০০ মোটরসাইকেলে মহড়া দেয়া হয়। সেখান থেকে গণসমাবেশ বিরোধী স্লোগানও দেয় তারা। দুপুরের পর ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল করে।