হারতে বসা ম্যাচে পাঞ্জাব কিংসের আশার আলো হয়ে জ্বালিয়েছিলেন লিয়াম লিভিংস্টোন। সেঞ্চুরির একদম কাছে গিয়েছিলেন। হাই স্কোরিং ম্যাচে রান তাড়া করে জয়ের সম্ভাবনাও জেগেছিল। অপর প্রান্তে সঙ্গীর অভাবে ইংলিশ ব্যাটার দলকে জয়ের বন্দরে নিতে পারেননি।

দিল্লি ক্যাপিট্যালসের কাছে ১৫ রানের পরাজয়ে আইপিএলেরপ্লে অফে পাঞ্জাবের খেলার সম্ভাবনা অনেকটাই ফিকে হয়েছে।
বুধবার রাতে ধর্মশালায় হওয়া ম্যাচে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা দিল্লি ২ উইকেট হারিয়ে করে ২১৩ রান। জবাবে পাঞ্জাব ৮ উইকেটে ১৯৮ রানেই থামে।

প্লে অফে খেলা নিশ্চিত করা গুজরাট টাইটান্স ১৩ ম্যাচে পেয়েছে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে সবার উপরে আছে। কাগজে-কলমের হিসেবে আর কোনো দল এখনো প্লে অফের টিকিট কাটতে পারেনি।

১৩ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে চেন্নাই সুপার কিংস। সমান পয়েন্ট পেলেও রানরেটে পিছিয়ে থাকায় লক্ষ্ণৌ টেবিলের তৃতীয় স্থানে আছে। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ১৪ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে অবস্থান করছে। ১২ পয়েন্ট পেলেও রান রেটের বিচারে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালোর, রাজস্থান রয়্যালস, কলকাতা নাইট রাইডার্স এবং পাঞ্জাব কিংস যথাক্রমে পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম স্থানে রয়েছে।

উদ্বোধনী জুটিতে ডেভিড ওয়ার্নার এবং পৃথ্বী শ ৯৪ রান যোগ করেন। ব্যক্তিগত ৩৯ রানে ক্যাচ দিয়েও জীবন পাওয়া ওয়ার্নার ইনিংসটিকে আরও বড় করতে পারেননি। ৩১ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৪৬ রান করে দিল্লির অধিনায়ক শিখর ধাওয়ানের হাতে ধরা পড়লে ভাঙে জুটি।
রাইলি রুশোকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৪ রানের জুটি গড়েন পৃথ্বী। ফিফটি পাওয়ার পর স্যাম কারেনের স্লোয়ার বলে ডিপ স্কয়ার লেগে অথর্ব তাইদের তালুবন্দি হন পৃথ্বী। সাজঘরে ফেরার আগে খেলেন ৩৮ বলে ৭ চার ও এক ছক্কায় ৫৪ রানের ইনিংস।

দিল্লির ইনিংসের বাকি সময়ে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালান রুশো। সতীর্থ ফিল সল্টের কাছ থেকে পান যোগ্য সঙ্গ। এই দুই ব্যাটারের ৬৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটির কল্যাণে দিল্লি দুইশ রানের গণ্ডি পার হয়। রুশো ৩৭ বলে ৬ চার ও ৬ ছক্কায় ৮২ রানের আগ্রাসী ইনিংস খেলেন। সল্ট ১৪ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় করেন ২৬ রান।
পাঞ্জাবের হয়ে ৩৬ রান খরচায় ২ উইকেট দখল করেন স্যাম কারেন।

বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নড়বড়ে শুরু করে পাঞ্জাব। প্রথম ওভারেই মেডেন পান খলিল আহমেদ। দলীয় রানের খাতা খোলার আগেই ইশান্ত শর্মার বলে আউট হন শিখর ধাওয়ান।

প্রভসিমরন সিং ও অথর্ব তাইদে দ্বিতীয় উইকেটে ৫০ রানের জুটি গড়েন। এরপর ১৯ বলে ৪টি চারে ২২ রান করে অক্ষর প্যাটেলের শিকারে পরিণত হন প্রভসিমরন।

অষ্টম ওভারে ব্যক্তিগত ৩ রানে লিয়াম লিভিংস্টোন ক্যাচ দিলেও ডিপ মিড উইকেটে তা ধরতে পারেননি এনরিখ নর্টজে। পরে দশম ওভারে তাইদে ৩৫ রানে থাকা অবস্থায় তার ক্যাচ নিতে পারেননি ইয়াশ ধুল। ফলে তৃতীয় উইকেটে তাইদে এবং লিভিংস্টোনের ৭৮ রানের জুটি পাঞ্জাবকে হাই স্কোরিং ম্যাচে দারুণভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাখে।

মুকেশ কুমারের করা ১৫তম ওভারের শেষ বলে আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন ৪২ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৫৫ রান করা তাইদে। পরের ওভারেই রানের খাতা খোলার আগেই নর্টজের বলে খলিল আহমেদের তালুবন্দি হন জিতেশ শর্মা।

বল হাতে খলিল পান ৬ রান করা শাহরুখ খানের উইকেট। পাঞ্জাবের স্কোর দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১৪৭ রান। জয়ের জন্য তখনো তাদের দরকার ২১ বলে ৬৭ রান। ১৮তম ওভারে মুকেশ ছিলেন ব্যয়বহুল। ৩ ছক্কা হজম করে বিলিয়ে দেন ২১ রান। পাঞ্জাবের জয়ের সমীকরণ দাঁড়ায় ১২ বলে ৩৮ রান।

নর্টজে ১৯তম ওভারের প্রথম বলে চারের মার খেলেও দ্বিতীয় বলে তুলে নেন স্যাম কারেনের উইকেট। হারপ্রীত ব্রার তৃতীয় বলে হন রান আউট। মাত্র ৫ রান ওভারটি থেকে আসায় পাঞ্জাবের জয়ের রাস্তা কঠিন হয়ে যায়। শেষ ওভারে তাদের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৩৩ রান।

ইশান্ত শর্মা প্রথম বলে রান না দিলেও তার দ্বিতীয় বলে ছক্কা ও তৃতীয় বলে চার হাঁকান বুক চিতিয়ে লড়াই করে যাওয়া লিভিংস্টোন। এরপর ম্যাচে আসে নাটকীয়তা। হাই ফুলটস দিয়ে বসেন ইশান্ত। আম্পায়ার দেন নো বলের সংকেত, লিভিংস্টোন ছক্কা মেরে বসেন। পাঞ্জাবের জয়ের জন্য তখন দরকার ৩ বলে ১৬ রান।

চতুর্থ ও পঞ্চম বলে ইশান্ত অবশ্য দিল্লির হয়ে কাজের কাজটি করেন। দুটি ডট বল আদায় করলে পাঞ্জাবের জয়ের আশা শেষ হয়। অসাধারণ ব্যাট করা লিভিংস্টোন ইনিংসের শেষ বলে ৪৮ বলে ৫ চার ও ৯ ছক্কায় ৯৪ রান করে ক্যাচ দিয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরেন।
দিল্লির পক্ষে ইশান্ত ও নর্টজে দুটি করে উইকেট পান। খলিল ও অক্ষর একটি উইকেট পকেটে পুরেন।