ছোট ছোট অর্জন তৃপ্তি দেয়। বড় অর্জনগুলো দেয় গর্ব করার রসদ। দ্রুতগতির বোলার রিপন মন্ডল যুব বিশ্বকাপে আইসিসির টুর্নামেন্টের সেরা একাদশে সুযোগ পেয়ে তৃপ্ত, কিন্তু আরো বড় অর্জনের সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার কষ্ট এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাকে, ‘তৃপ্তিদায়ক। আইসিসি থেকে এই স্বীকৃতি আমার জন্য দারুণ ব্যাপার। খুব ভালো অনুভূতি। তবে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করতে পারিনি এটা ভুলতে পারব না। এজন্য প্রচুর কষ্ট হচ্ছে এখনো।’
বুকে অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে সুন্দর দেশ সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে পা রেখেছিলেন রিপন। বাংলাদেশ যুব দলের এই পেসারের স্বপ্ন ছিল, আকবররা দক্ষিণ আফ্রিকায় যে শিরোপা জিতেছিলেন তা ধরে রাখবেন। নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব আবার জানান দেবেন বিশ্বমঞ্চে।
কিন্তু সেই মিশনে শুরুতেই হোঁচট। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাজেভাবে হার। এরপর কোমর সোজা করে দাঁড়িয়ে শেষ আটে উঠলেও সেখানে ভারতের কাছে পাত্তাই পায়নি। ব্যর্থতা এমনভাবে জেঁকে বসেছিল যে স্থান নির্ধারণী ম্যাচগুলোতেও এলোমেলো এক বাংলাদেশকেই পাওয়া যায়। ফল- গতবারের চ্যাম্পিয়নরা এবার অষ্টম!
রিপনের শিরোপার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার। কিন্তু ব্যক্তিগত এক অর্জন তাকে আনন্দ দেয়। ১৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে টুর্নামেন্টের সেরা একাদশে ঠাঁই হয়েছে তার। ৬ ফুটেরও বেশি উচ্চতার রিপনের শুরু থেকে ইচ্ছা ছিল বিশ্বকাপে নজর কাড়বেন। জানতেন, ভালো কিছু করলে তাকে নিয়ে আলোচনা হবে। এজন্য আইসিসির সেরা একাদশে নজর ছিল তার, ‘বিশ্বকাপ শেষে আইসিসি একাদশ নির্বাচন করে এটা জানতাম। শুরু থেকেই আমরা স্বপ্ন ছিল এই একাদশে সুযোগ পাওয়ার।’
দলীয় সাফল্য না পাওয়ার পেছনে নিজেদের ব্যর্থতাকে বড় করে দেখছেন রিপন। পাশাপাশি ভাগ্যকেও দুষলেন এই বোলার, ‘আমরা এতটা খারাপ দল নই। আমাদের প্রথম ম্যাচটা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খারাপ হয়েছে, ওটা আমরা মেনে নিয়েছি। ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে ভাগ্য আমাদের সঙ্গে ছিল না। টসটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। উইকেট অনেক ভেজা থাকায় বোলারদের জন্য অনেক সুবিধা ছিল। ব্যাটসম্যানদের জন্য এতটা সহজ ছিল না। টস যদি আমরা জিততে পারতাম, তাহলে হয়তো ম্যাচের দৃশ্যপট অন্যরকম হতে পারত।’
বোলিংয়ে গতির সঙ্গে বৈচিত্র্য তার মূল অস্ত্র। বিশ্বকাপে নিজের সেরা অস্ত্রগুলো দিয়েই রিপন পেয়েছেন সাফল্য। কন্ডিশন অনুযায়ী বোলিংয়ে তৃপ্ত এই ডানহাতি পেসার, ‘আমি কন্ডিশন দারুণভাবে ব্যবহার করেছি। বৈচিত্র্য থাকায় আমার জন্য কাজ কিছুটা সহজ হয়েছে। ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিয়েছি। ততে মিলেছে সাফল্য। নিজের বোলিংয়ে আমি তৃপ্ত।’
টেল অর্ডারে টুকটাক রান করতে পটু রিপন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে তার অপরাজিত ৩৩ রানের সুবাদে বাংলাদেশের রান তিন অঙ্কের কাছাকাছি গিয়েছিল। প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানদের ভুলে ভরা দিনে রিপন মাইন্ডগেম খেলে সফল হয়েছিলেন। পেস অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে তৈরি করার ইচ্ছার কথা শোনালেন তিনি, ‘তখন পেসারদের বিপক্ষে আমাকে লড়তে হয়েছে। আমি ওদের সঙ্গে মাইন্ডগেম খেলেছি। বোঝার চেষ্টা করেছি কীভাবে আক্রমণ করতে পারে। ব্যাটিং করে আমি মজা পাই। ব্যাটিংয়ে কীভাবে আরো উন্নতি করা যায় সেটি নিয়েও কাজ করব। আমার মূল অনুশীলন শেষে নিয়ম করে ব্যাটিংটা আমি করে নিব।’
বয়সভিত্তিক দলের পাট চুকিয়ে রিপনের পরবর্তী গন্তব্য বড়দের ক্রিকেট। সামনে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। সেখানে ভালো করাই একমাত্র লক্ষ্য তার। পরবর্তীতে এগিয়ে যেতে চান আপন ছন্দে। স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে একদিন পেতে চান জাতীয় দলের ক্যাপ। তবে কোনো তাড়াহুড়োই নেই তার। নিজের ফিটনেস, বোলিং আন্তর্জাতিক মানের হলেই পেতে চান জায়গা, ‘ঢাকা লিগে খেলব ইনশাআল্লাহ।যেখানেই সুযোগ পাব, লক্ষ্য থাকবে ভালো খেলার। জাতীয় দলে নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। ভালো করতে পারলে এমনিতেই সুযোগ আসবে। এই মুহূর্তে আমার ফিটনেস খুব ভালো অবস্থায় আছে। এটা নিয়েই এখন বেশি কাজ করব।’
নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নিজের সঙ্গে কথা বলেন রিপন। এই যেমন দুইদিন আগেই নিজেকে বলেছেন, ‘রিপন খুশি হয়ো না। কোনো কিছু পেলে খুশি হওয়ার কিছু নেই। তোমার কাজই পারফরম্যান্স করা। যখন তুমি অবসরে যাবে তখন তুমি খুশি হবে। এটায় ভালো করেছো, এই খুশি নিয়ে ভাসলে হবে না। মাটিতে পা রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ায় মনোযোগী হও।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।