ইয়াসির আলীর চোটে দলে ডাক পাওয়া এনামুল হক বিজয়ের একাদশে থাকা প্রায় নিশ্চিত ছিল। সেটাই হলো। অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর এবার একাদশেও জায়গা হারালেন মুমিনুল হক।

এ ছাড়া মোস্তাফিজুর রহমানের জায়গায় একাদশে ঢুকেছেন আরেক বাঁ-হাতি পেসার শরীফুল ইসলাম। এ দুটি পরিবর্তন এনেই শুক্রবার সেন্ট লুসিয়া টেস্টে মাঠে নামে বাংলাদেশ। সাত উইকেটে হারা প্রথম টেস্টের মতো এবারও টসে হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামতে হয়েছে তামিমদের। ড্যারেন স্যামি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের প্রথম সেশনটা দারুণ হয়েছে।

উইকেট যায় দুটি। তবে দ্বিতীয় সেশনেই পথ হারিয়ে ফেলে সফরকারীরা। মাত্র ৩৩ রানের ব্যবধানে এনামুল, নাজমুল হোসেন, সাকিব আল হাসান ও নুরুল হাসানের উইকেট হারিয়ে পুরোনো রূপ ধারণ করে। সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে দলকে কক্ষপথে ফেরানোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দ্বিতীয় সেশন শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ১৫৯/৬। লিটন ৩৪ ও মিরাজ ৫ রানে ব্যাট করছিলেন।

উইকেটে ঘাস থাকায় পাঁচ পেসার নিয়ে বোলিং আক্রমণ সাজিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের ব্যাটারদের মূল চ্যালেঞ্জ পেসারদের সামলানো। শুরুটা কাল ভালোই করেছিল বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল আক্রমণাত্মক হলেও দেখেশুনেই খেলছিলেন মাহমুদুল হাসান। সপ্তম ওভারে কেমার রোচের বলে টানা দুবার জয়কে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। দুবারই রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি।

এভাবে জীবন পাওয়ার পরও সেটা কাজে লাগাতে পারেননি মাহমুদুল। অভিষিক্ত অ্যান্ডারসন ফিলিপের দ্বিতীয় বলেই বোল্ড হন। ৩১ বল খেলে এক চারে ১০ রান করে যান তিনি। এরপর নামেন নাজমুল হোসেন। এই টেস্টে তার খেলার সম্ভাবনা ছিল ক্ষীণ। তামিম খেলছিন সাবলীলই। আর কোনো ক্ষতি ছাড়াই প্রথম সেশন কাটিয়ে দেওয়ার পথে ছিল বাংলাদেশ।

এমন সময় আচমকা আলজারি জোসেফের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল তাড়ায় সহজ ক্যাচ তুলে দেন তামিম। নয় চারে ৬৭ বলে তিনি করেন ৪৬ রান। এরপর দুই টেস্টের মাঝে বিরতির রেকর্ড নিয়ে ফেরা এনামুল শুরুটা করেন দারুণ। তার ব্যাটিংও ছিল আশা-জাগানিয়া।

তবে মাহমুদুল হাসানের পর ফিলিপ এনামুলকেও ফিরিয়ে দেন। পরের ওভারে কাইল মায়ার্সের স্লোয়ার একটি বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন নাজমুল। সাকিব যেতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘরে, নুরুল আউট হন মাথাসমান বাউন্সে খোঁচা দিতে গিয়ে। বাংলাদেশের রান তখন ১৩৮/৬।

প্রথম পাঁচ ব্যাটার দুই অঙ্কের ঘরের গেলে ফিফটি ছুঁতে পারেননি তারা। তবে সম্ভাবনা ছিল লিটনের। টপ অর্ডার ব্যাটাররা উইকেটে থিতু হয়ে আউট হয়েছেন। কার্যকরি কোনো জুটিও গড়ে তুলতে পারেননি। সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে পরিবর্তন একটি। গুডাকেশ মোতির জায়গায় অভিষেক হয়েছে ২৫ বছর বয়সি পেসার ফিলিপ।

অলরাউন্ডারসহ পাঁচ পেসার নিয়ে এই টেস্ট খেলছে ক্যারিবীয়রা। ২০১৪ সালে নিজের চার টেস্টের শেষটি এই সেন্ট লুসিয়াতেই খেলেছিলেন এনামুল। স্টেডিয়ামটির নাম পালটে এখন রাখা হয়েছে ড্যারেন স্যামি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম। আট বছর আগে যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই নতুন শুরুর সুযোগ পেলেন ২৯ বছর বয়সি ব্যাটসম্যান।

কাল মাঠে নেমে একটি রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন এনামুল। বাংলাদেশের হয়ে দুই টেস্টের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ বিরতির রেকর্ডটি এখন তার। সাত বছর নয় মাস ১১ দিন পর টেস্টে ফিরলেন এই ডান-হাতি ব্যাটার। এই সময়ে বাংলাদেশও খেলেছে ৪৮টি টেস্ট। এর আগে বাংলাদেশের দীর্ঘতম বিরতি ছিল পেসার নাজমুল হোসেনের। ২০০৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর অভিষেক টেস্ট খেলার পর নিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলেছিলেন তিনি ১৭ ডিসেম্বর ২০১১ সালে, ঠিক সাত বছর পর।