বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি: পাঠদান বন্ধ রেখে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীরা। শনিবার (২৮ মে) ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা সদরের কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজে এ ঘটনা ঘটেছে।


এছাড়া উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের কাদিরদীতে অবস্থিত কাদিরদী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. নুরুজ্জামান মিয়াও কিছু শিক্ষকদের নিয়ে ওই নেতাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।


কলেজ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অধ্যক্ষের নেতৃত্বে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শনিবার সকাল ৯টায় ভাড়া করা একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাইক্রোবাসে করে কলেজের ১০ জন শিক্ষক ও কর্মচারী রওনা হন জেলা সদরের উদ্দেশে। বেলা ১টার পর তাঁরা ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন।শিক্ষকদের অনুপস্থিতির কারণে শনিবার কলেজের অধিকাংশ শ্রেণির পাঠদান হয়নি। এ ছাড়া অধ্যক্ষ না থাকায় স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রথম বর্ষের ফরম পূরণ করতে এসে ফিরে গেছেন অনেক শিক্ষার্থী।

অধ্যক্ষ ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে কলেজের পক্ষ থেকে অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক সজল কান্তি বিশ্বাস, পরিসংখ্যানের সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জীব কুমার রায়, ব্যবস্থাপনার সহকারী অধ্যাপক মো. গোলাম কবীর, আইসিটির প্রভাষক মো. রবিউল ইসলাম, শরীরচর্চা শিক্ষক আব্দুর রউফ খান, সেকশন অফিসার মো. কামরুল ইসলাম, অফিস সহকারী মো. হাবিবুর রহমান প্রমুখ গিয়েছিলেন।

কলেজের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের অর্থনীতি, পরিসংখ্যান, আইসিটি বিষয়ের ক্লাস হয়নি। স্বাভাবিক পাঠদান ছাড়াও ফরম পূরণসহ অন্যান্য কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে বলে অভিযোগ করে তারা।

অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সজল কান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘আমার বাসা ফরিদপুর শহরে। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে কলেজের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর একটি কর্মসূচির জন্য অধ্যক্ষ স্যারের নির্দেশে আমি কলেজে না গিয়ে শহরে অবস্থান করেছি। পরে কর্মসূচি শেষ করে আর কলেজে ফেরা হয়নি।’

আইসিটি বিভাগের প্রভাষক মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমি কলেজে যাওয়ার পর অধ্যক্ষ স্যারের সাথে জেলা সদরের ওই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে যাই। এ জন্য কলেজে আজকের নির্ধারিত ক্লাসে পাঠদান করতে পারিনি।’

এ প্রসঙ্গে কলেজের উপাধ্যক্ষ খন্দকার আবু মোরছালিন বলেন, ‘শিক্ষকেরা যেহেতু অধ্যক্ষের সাথে জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন এ জন্য তাঁরা হয়তো কলেজ থেকে ছুটি নেওয়ার কোনো প্রয়োজন বোধ করেননি। তাঁরা একটি মহৎ কাজে গিয়েছিলেন, আর তাঁরা তো অধ্যক্ষের সাথেই ছিলেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আবু মোরছালিন আরও বলেন, ‘শিক্ষকেরা অনুপস্থিত থাকায় কলেজের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ব্যাহত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাঁরা তো কলেজের পক্ষে সেখানে উপস্থিত থেকে কলেজের কাজই করেছেন।

কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফরিদ আহমেদের নিকট জানতে চাইলে তিনি ক্ষেপে গিয়ে বলেন, তাতে আপনাদের কি, আপনাদেরকে তো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। জবাবদিহি করতে হয় গর্ভনিং বোডের কাছে করবো।

কলেজের শাখা কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রিন্সিপাল স্যার বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির (বাকশিস) কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ। তাই আমরা স্যারের নেতৃত্বে বাকশিসের পক্ষ থেকে বেলা সাড়ে ১০টায় জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফকে ও আধা ঘণ্টার ব্যবধানে নতুন সভাপতি শামিম হককে জেলা সদরের পৃথক স্থানে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছি।’
প্রসঙ্গত, মো. কামরুল ইসলাম গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলার গুনবহা ইউনিয়ন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান পদে হেরে যান।