আল্লাহর নবী হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের ধারাবাহিক ঘটনা। এতে বিশেষভাবে থাকছে নবী হজরত ইউসুফ (আ.)-এর জুলেখার মুগ্ধতার কাহিনী।
আরও থাকছে পারিবারিক চক্রান্তের কারণে একটি সুখের সংসার তছনছ হওয়ার কথা, প্রজ্ঞা আর একনিষ্ঠতার কারণে একজন ভিনদেশি বন্দির মন্ত্রী হওয়ার প্রেক্ষাপট, ছেলে হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে দৃষ্টিশক্তি হারানো বাবার দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার চমকপ্রদ ঘটনা, ঐতিহ্যেপূর্ণ সমৃদ্ধিশালী একটি দেশ দুর্ভিক্ষের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগেকবলিত হওয়ার পর যথাযথ পরিকল্পনা ও সফল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের জনগণকে বাঁচানোর উপাখ্যান,
এক যুবক কর্তৃক সুন্দরী নারীর অবৈধ আহ্বান থেকে নিজেকে রক্ষা করার লোমহর্ষক ঘটনাসহ স্নায়ু উত্তেজনা সৃষ্টিকারী বেশ কিছু প্রসঙ্গ একের পর এক আজকের তারাবিতে শোনানো হবে। শুরুতে বলে রাখা ভালো, কোরআনে কারিম কোনো ঘটনা, গল্প, জীবনী কিংবা উপন্যাস গ্রন্থ নয়। কোরআন সর্বকালের মানুষের জন্য জীবন্ত উপদেশমালা ও বিধিবিধান-সংবলিত এক মহাগ্রন্থ।
তবে কোরআনে কারিমে অনেক ঘটনা, কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে উপদেশ গ্রহণের জন্য। তাই কোনো ঘটনা কোরআনে কারিমে পূর্ণাঙ্গভাবে বর্ণিত হয়নি, আবার একই ঘটনা বহুস্থানে বিবৃত হয়েছে। সবকিছুই উপদেশের স্বার্থে। উপদেশের জন্য যেখানে যে ঘটনার যতটুকু দরকার ততটুকুই বলা হয়েছে। শুধু হজরত ইউসুফ (আ.)-এর ঘটনা ব্যতিক্রম। এখানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো ঘটনা বলা হয়েছে, আবার ঘটনার পরম্পরাগত ধারাও অনেকটা ঠিক রাখা হয়েছে।
‘প্রেম কইরাছেন ইউসুফ নবী’ এই গজলের কলি আমাদের গ্রাম-বাংলায় সুপ্রাচীনকাল থেকে সবার মুখে মুখে। অথচ এ বচন সম্পূর্ণ মিথ্যা। আর এ মিথ্যা বচনকে ভিত্তি করে যুবসমাজ বলে থাকে ‘পবিত্র প্রেম, স্বর্গীয় প্রেম।’ সাধারণত প্রেম বলতে মানুষ বিয়ে-পূর্ব কিংবা বিয়েবহির্ভূত নারী-পুরুষের ভালোবাসার সম্পর্ককে বোঝানো হয়। আমাদের সমাজব্যবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসার সম্পর্ককে প্রেম শব্দে ব্যক্ত করতে খুব একটা দেখা যায় না।
বিয়েবহির্ভূত কিংবা বিয়ের আগে ছেলেমেয়েদের ভালোবাসার সম্পর্ককে ইসলাম নাজায়েজ সম্পর্ক বলে আখ্যায়িত করে। কোনো নবী এমনকি হজরত ইউসুফ (আ.) নবুয়তপ্রাপ্তির আগে বা পরে এ ধরনের সম্পর্ক কিংবা কাজে এক মুহূর্তের জন্য লিপ্ত হননি। প্রত্যেক নবী নবুয়ত লাভের আগে ও পরে নৈতিক চরিত্রে শতভাগ পবিত্র, পরিচ্ছন্ন, স্বচ্ছ ও নির্মল ছিলেন।
আগেই বলা হয়েছে, নারী-পুরুষে কথিত প্রেম হারাম। আর হারাম কাজ মাত্রই অপবিত্র। তাই পবিত্র প্রেম বলে বাস্তবে কিছু নেই। প্রতিটি হারাম কাজের পরিণতি জাহান্নাম। তাই প্রেম কখনো স্বর্গীয় হতে পারে না, হয়ও না। এটা ভুল কথা।
হজরত ইউসুফ (আ.)-এর প্রতি জুলেখার ভালোবাসা ছিল সম্পূর্ণ একতরফা। মন্ত্রী বধূ জুলেখা তরুণ কৃতদাস হজরত ইউসুফ (আ.)-এর প্রেমে উন্মাদ ছিল। তাকে নিজের মতো করে পাওয়ার জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই জুলেখা করে। ধন-সম্পদ আর ক্ষমতার মোহে অন্ধ জুলেখা তার লালসা চরিতার্থ করতে সামাজিক মান-সম্মান হারানোর ভয়, বান্ধবীদের তিরস্কার সব কিছু উপেক্ষা করে।
এ ক্ষেত্রে জুলেখা যতটা উষ্ণতা দেখিয়েছে, হজরত ইউসুফ (আ.)-এর পক্ষ থেকে প্রকাশ পেয়েছে সর্বোচ্চ পরিমাণের শীতলতা। জুলেখার মনের আকাশে ঝড়ের গতি ও তাণ্ডব যত তীব্র ছিল, হজরত ইউসুফ (আ.)-এর আকাশ ছিল ততই শান্ত, স্থির ও নির্লিপ্ত।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।