কেশবপুর উপজেলার ত্রাস, দূর্ধর্ষ চাঁদাবাজ, শীর্ষ সন্ত্রাসী একাধিক মামলার আসামি জামাল শেখ (৩৩) ও তার সহযোগী শামীম খান (২৬) কে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে পৌরশহরের ত্রিমোহিনী মোড় এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

জামাল মধ্যকুল গ্রামের আব্দুল গনি শেখের ছেলে এবং শামীম খান একই গ্রামের সিরাজুল ইসলাম খানের ছেলে। ইতিপূর্বে জামালের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ, চাঁদাবাজি ও মারমারিসহ ১০টি মামলা রয়েছে। সন্ত্রাসী জামাল গ্রেফতার হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষরা খুশি প্রকাশ করার পাশাপাশি স্বস্তি ফিরে পেয়েছে।

আরোও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পুতিনের সঙ্গে মিয়ানমারের জান্তাপ্রধানের সাক্ষাৎ

লাউ এর পুষ্টিগুণ

থানা ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুর উপজেলার মাগুরাডাঙ্গা গ্রামের নন্দদুলাল দাসের ছেলে প্রশংকর দাস (৩৭) মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। কেশবপুর বাজারে মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালাতে হলে দূর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ জামাল বাহিনীকে প্রতিমাসে ৬ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে বলে প্রশংকরকে জানান। চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করলে সন্ত্রাসী বাহিনী প্রশংকরকে মারপিট ও বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়।

তারই জের ধরে গত ৩ সেপ্টেম্বর (শনিবার) রাতে প্রশংকর এর ব্যবহৃত মোটর সাইকেলযোগে পৌরশহরের ত্রিমোহনী মোড় হতে পুরাতন গরুহাটায় যাওয়ার পথিমধ্যে কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে পৌছালে জামাল বাহিনী মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে ১০’হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। তখন চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করায় সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান জামালের নেতৃত্বে এলোপাতাড়ীভাবে মারপিট করে। এরপর ৩০/৩৫ গজ দূরে সাদেক মার্কেট নামক বিল্ডিংয়ের গলির মধ্যে তাকে ধরে নিয়ে সেখানেও বেধড়ক মারপিট করে আহত হন।

ওইসময় ধারালো চাকু দেখিয়ে খুন জখমের হুমকী প্রদান করে বলে এ বিষয়ে কোন মামলা মোকদ্দমা করলে তোকে খুন করবো বলে সন্ত্রাসী বাহিনী ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। পরবর্তীতে আশপাশের লোকজন আহত প্রশংকরকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখান থেকে চিকিৎসা সেবায় সুস্থ হওয়ার পর ঘটনা উল্লেখ প্রশংকর দাস নিজেই বাদী হয়ে জামাল বাহিনীর প্রধান জামাল শেখ ও শামীম খান সহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এছাড়াও অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জনকে আসামি করে কেশবপুর থানায় একটি মামলা করেন। থানার মামলা নম্বর-১০।

মামলা হওয়ার পর এলাকার ত্রাস সৃষ্টিকারী, সন্ত্রাসী জামাল বাহিনী এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দেয়। তাদেরকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত থাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ বোরহান উদ্দীনের নেতৃত্বে উপ-পুলিশ পরিদর্শক লিখন কুমার সরকার, বিদূষ বিশ্বাস, গোরাচাঁদ দাস ও পুলিশ উপপরিদর্শক মোক্তার আলীসহ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে পৌরশহরের ত্রিমোহিনী মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামাল শেখ ও সহযোগী শামীম খান কে গ্রেফতার করে।

জামাল বাহিনীর বিষয়ে এলাকাবাসীর অনেকেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তারা বলেন, কেশবপুর উপজেলার মধ্যকুল গ্রামের গনি শেখের ছেলে জামাল শেখ ইজিবাইক চালানো ছেড়ে দিয়ে নিজের নামেই একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে। পৌরশহরের নতুন ভবন নির্মাণ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন, জমিজমা ক্রয়-বিক্রয়, অবৈধভাবে জমিজায়গা দখল, মৎস্য ঘের দখল, কেউ বিদেশ থেকে ফিরে আসলে তাকেও ছাড় দেওয়া হয়না, বড় বড় ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের চাঁদাবাজি।

আরোও পড়ুন: অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম আর নেই

দেশে আগামী পাঁচ দিনে বাড়তে পারে বৃষ্টিপাত

তাদের দাবি পূরণ না করায় অনেকেই জামালের নেতৃত্বে হামলা ও মারপিটের শিকার হয়ে গুরুত্বর আহত হয়েছেন অনেকেই এমনকি হয়েছেন অপহরণের শিকার। শুধু তাই নয়! নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে মারপিট করে আহত করেছেন।

এছাড়া গত ২১ আগষ্ট রাতে পৌরশহরের মাছ বাজার, উপজেলা পরিষদের সামনে ও হাসপাতাল এলাকায় সন্ত্রাসী জামাল বাহিনী লোহার রড ও দেশীয় অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অহেতুক হামলা চালিয়ে কোমরপোল আইডিয়াল কলেজের দুই প্রভাষক, ব্যবসায়ীসহ ৭ জনকে বেধড়ক মারপিট ও চুরি আঘাত করে গুরুত্বর আহত করে। আহতদের মধ্যে ৩ জন খুলনা থেকে উন্নত চিকিৎসার পরও বাড়ির বিছানায় পড়ে আছেন।

এ ব্যাপারে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ বোরহান উদ্দীন বলেন, একাধিক মামলার আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী, দূর্ধর্ষ জামাল শেখ ও তার সহযোগী শামীম খানকে চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতিপূর্বে থানায় জামালের বিরুদ্ধে মারামারি, চাঁদাবাজি, অপহরণ মামলাসহ ১০টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বুধবার সকালে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।